v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-28 18:11:09    
চীনে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর  সংস্কৃতি  সংরক্ষণ জোরদার হচ্ছে

cri
    চীনে ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির যার যার ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি আছে । ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি একটি জাতির প্রতীক । কিন্তু আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সংগে সংগে কতকগুলো জাতির সংস্কৃতি কোনো সুরক্ষা না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নষ্ট হয়ে যায় । সুতরাং চীনে সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির সুরক্ষা বরাবরই বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত এলাকার প্রধান কর্তব্য বলে মনে করা হয় । দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতি বাস করে । তাদের সংখ্যালঘুজাতির বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিও আছে । আজ এই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সংস্কৃতি সুরক্ষা সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশ চীনের এমন একটি প্রদেশ , যেখানে চীনের সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু জাতি বাস করে । ওখানে বসবাসকারী ২৫টি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে ১৬টি জাতি আন্তঃদেশীয় জাতি । যেমন ই জাতি , তাই জাতি , মিয়াও জাতি ইত্যাদি মায়ানমার , থাইল্যান্ড , লাওস প্রভৃতি দেশেও ছড়িয়ে পড়ে ।

    ইউননানের লোক শিল্প সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াং সি তেই ই জাতির লোক । তিনি বরাবরই স্থানীয় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতির প্রতি সরকারের সুরক্ষার ওপর মনোযোগ দিয়ে আসছেন । তিনি বলেছেন , ইউননানে বরাবরই সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় । গত কয়েক বছরে এই কাজ আরো জোরদার হয়েছে ।

    ২০০২ সালে ইউননানে 'ইউননান প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতি ও লোক- ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সুরক্ষা সংক্রান্ত নিয়মবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে । চীনে এটা হচ্ছে অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রথম আঞ্চলিক আইনবিধি । চীনে ইউননানে সবচাইতে আগে সংখ্যালঘু জাতি আর লোকশিল্প ও শিল্পীদের প্রতি তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে ।

    ওয়াং শি তেই বলেছেন , লোকসংখ্যা বেশি আর নিজের লিখিত ভাষা আছে বলে সংস্কৃতি সুরক্ষার ব্যাপারে ইউননানের কতকগুলো জাতি সচেতন । অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এই প্রদেশে আগে থেকে সংস্কৃতি সুরক্ষা চালানো হয়েছে আর সরকার নানা রকম ব্যবস্থা নিয়েছে বলে সংস্কৃতি সুরক্ষার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে ।

    ই জাতি ইউনানের জনবহুল একটি জাতি । তার ৪০ লক্ষের বেশি লোকসংখ্যা ভিয়েত্নাম আর লাওসেও ছড়িয়ে পড়ে । ই জাতির নিজের মৌখিক ভাষা ও লিখিত ভাষা আছে । এই জাতির প্রচুর প্রাচীন ই ভাষার গ্রন্থও পাওয়া যায় । গত শতাব্দির আশির দশকে ই জাতির প্রধান অধ্যুষিত অঞ্চল- ছুস্যুন ই জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে ই জাতির সংস্কৃতি অধ্যয়ন আর সুরক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় । এই সংস্থার উদ্যোগে ই জাতির প্রাচীন সাংস্কৃতিক গ্রন্থ ও আচার ব্যবহার বিষয়ক তথ্য তদন্ত আর গবেষণার কাজ সার্বিকভাবে চালানো হয়েছে ।

    ২০০২ সালে 'ইউননান প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতি আর লোক ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সুরক্ষা সংক্রান্ত নিয়মবিধি' প্রণীত হবার পর স্থানীয় সরকার ই জাতির সংগীত ও নৃত্য শিল্পীদের ওপর তদন্ত চালিয়েছে এবং কয়েক ডজন শিল্পীকে ই জাতির সংস্কৃতি প্রচারকের মর্যাদা দিয়েছে । অল্পবয়সীদের প্রশিক্ষণ দেয়া আর ই জাতির সংস্কৃতি প্রচারে উত্সাহ দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার তাদের অর্থ সাহায্যও দিয়েছে । যুক্তরাষ্ট্র , জার্মানী ইত্যাদি দেশের কিছুসংখ্যক পন্ডিতও ই জাতি তত্ত্ব নিয়ে অধ্যয়ন করেন এবং এ সব দেশে ই জাতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয় । এতে ই জাতির সংস্কৃতি সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হচ্ছে ।

    ই জাতির মতো তাই জাতিও ইউনানের একটি জনবহুল আন্তঃদেশীয় সংখ্যালঘু জাতি । এই জাতির ১১ লক্ষ লোক থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম , মায়ানমার আর লাওসেও ছড়িয়ে পড়ে ।

    তাই জাতির লোকেরা নাচ গান পরিবেশনে পারদর্শী । তাদের দীর্ঘকালীন আর উজ্জ্বল সংস্কৃতি আছে । তাই জাতির সংস্কৃতি সুরক্ষার বিষয়ে ইউননান প্রদেশ সক্রিয়ভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম এশীয় দেশগুলোর সংগে সহযোগিতা চালায় । যেমন তারা আন্তর্জাতিক তাই জাতির সংস্কৃতি বিষয়ক সেমিনার আয়োজন করেন এবং থাইল্যান্ডের ছাং রেইয়ে অনুষ্ঠিত মেকং নদীর সংস্কৃতি ও শিল্পকলা উত্সবে অংশ নেন ।

    গত বছর তাই জাতি অধ্যুষিত সিসানপাননা বিভাগে 'সংখ্যালঘুজাতি ও লোক সংস্কৃতি সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রথম দফা শিল্পীদের নামের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে । তাই জাতির ভাস্কর্য , দেয়ালচিত্র , ছাতা তৈরীর ঐতিহ্যিক প্রকৌশল আর জল বিচ্ছুরণ প্রভৃতি আচার ব্যবহারও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । তা ছাড়া স্থানীয় সরকার পঞ্চাশাধিক প্রবীণ তাই শিল্পীকে সংখ্যালঘু জাতি ও লোক ঐতিহ্যিক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নাম দিয়েছে ।

    ইউননানের সিসানপাননা তাই জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের গণ- রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের ভাইস চেয়ারম্যান চেন ফেং বলেছেন , তাই জাতির ঐতিহ্যিক বাঁশের বাড়িঘর সুরক্ষা আর নির্মাণে উত্সাহ দেয়ার জন্য বিভাগের সরকার বহু ব্যবস্থা নিয়েছে ।

    সিসানপাননা তাই জাতির দর্শনীয় স্থলে যে সব বাড়িঘর তাই জাতির সংস্কৃতি ও বৈশিষ্ট্যের সংগে সংগতিপূর্ণ নয় , সে সব বাড়িঘর প্রত্যাখ্যান করার জন্য পরামর্শমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় । এ সব বাড়িঘর প্রত্যাখ্যান আর নতুন বাড়িঘর নির্মাণের ক্ষতিপূরণের জন্য স্থানীয় পর্যটন কোম্পানি ভর্তুকী দেয় । এর সংগে সংগে তাই জাতির বাঁশের বাড়িঘরকে অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে ধার্য করার জন্য তারা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে ।

    চীনে ২২টি জাতির লোকসংখ্যা প্রতিটির ১ লক্ষেরও কম । ইউনানের পুলাং জাতি , কুয়াংসির চিং জাতিও এদের অন্যতম ।

    গত কয়েক বছরে চীনে অল্প জনসংখ্যার সংখ্যালঘু জাতিগুলোর উন্নয়নে সাহায্য করার কাজ ও ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে ।

    গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার অল্প জনসংখ্যার ২২টি জাতি ধার্য করেছে । চিং জাতির যাদুঘর আর পরিবেশ সংরক্ষণ যাদুঘর নির্মাণ খাতে সরকার ৩ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে ।

    আন্তঃদেশীয় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি সুরক্ষা আরো বিকশিত করতে হলে যেমন চীনের সরকার , বেসরকারী সংস্থার ও বিভিন্ন জাতির প্রচেষ্টা লাগবে , তেমনি এতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সংগে আদান প্রদান ও সহযোগিতা আরো দরকার । সংখ্যালঘু জাতির আন্তঃদেশীয় সংস্কৃতির উন্নয়ন আর সমৃদ্ধি প্রতিবেশী দেশগুলোর সংগে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সুগভীর তাত্পর্য সৃষ্টি করবে ।