v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-28 18:07:48    
মূলভূভাগে খামার গড়ে তুলছেন তাইওয়ানের শিল্পপতিরা

cri
    ৩২৪ নং মহা সড়ক আর ৩১৯ নং মহা সড়কের সংযোগস্থলের উত্তরাংশে অবস্থিত দক্ষিণ চীনের ফু চিয়েন প্রদেশের সিয়া মেন শহরের চি মেই ডিস্ট্রেক্টের কুয়েন খৌ থানার শোয়াং লিং গ্রাম বিস্তীর্ণ কৃষি ক্ষেত আর সবুজ গাছপালায় সমৃদ্ধ । এই বিস্তীর্ণ কৃষি ক্ষেতের মধ্যে ফু চিয়েন প্রদেশের দক্ষিণাংশের ঐতিহ্যিক লাল ইট বাড়িঘর আর আধুনিক নতুন বাড়িঘর পরিপাটিভাবে ছড়িয়ে আছে ।

    ১৯৯৯ সালে তাইওয়ানের বেশ কিছু ব্যবসায়ী খামার গড়ে তোলার জন্য এই গ্রামে আসতে শুরু করেন । তারা যেমন তাইওয়ানের উন্নত মানের বীজ ও চাষাবাদের প্রযুক্তি এনেছেন , তেমনি কৃষিকর্মে স্থানীয় লোকদের ঐতিহ্যিক পদ্ধতির পরিবর্তন করেছেন । এতে কৃষির শিল্পায়ন ব্যবস্থাপনার কাজ ও জীবনধারাও গড়ে তোলা হয়েছে ।

    তাইওয়ানের চুয়াং হুয়া জেলার স্যু চি স্যুয়ান সবচাইতে আগেই শোয়াং লিং গ্রামে এসেছেন । তিনি আগে বাড়িঘর নির্মাণের ব্যবসা করতেন । এই গ্রামে আসার পর তিনি লিং ইয়াং উদ্যানপালন বিদ্যা লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেছেন । তিনি নানা রকম উদ্ভিদ আর ফুল গাছ বপন আর এই ব্যবসা করতে চান । ছ' বছর হয়ে গেছে । স্যু চি স্যুয়ানের ব্যবসা দেশ- বিদেশের বাজার উন্মুক্ত করেছে ।

    শোয়াং লিং গ্রামবাসীদের চোখে স্যু চি স্যুয়ান একজন সাধারণ কৃষক নন । যখন তিনি শোয়াং লিং গ্রামে এলেন , তখন স্থানীয় কৃষি ক্ষেতে কেবল ধান বপন করা হতো । ফু উই লান জাতীয় নানা পাতাবাহার গাছ লাগানোর জন্য তিনি উত্সাহের সংগে স্থানীয় গ্রামবাসীদের পরামর্শ দেন এবং এই ধরনের উদ্ভিদ বিক্রয়ের প্রণালী অন্বেষণ করার জন্য তিনি গ্রামবাসীদের সাহায্য করেন । এখন তিরিশাধিক গ্রামবাসী তার কোম্পানির - কর্মীতে পরিণত হয়েছেন এবং শোয়াং লিং গ্রামের ২শো একর কৃষি জমিতে ফুল গাছ লাগানো হয়েছে । ফুল চাষী পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাবার সংগে সংগে গত বছরের মে মাসে সিয়া মেন শহরে প্রথম ফুল চাষী সমবায়- চি মেই ডিস্ট্রিক্টের শোয়াং লিং নুং ফু ফুল চাষী সমবায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । সমবায় শেয়ারভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হয় । এতে সত্তরাধিক ফুল চাষী পরিবার আকৃষ্ট হয়েছে । এই সমবায় ফুল লাগানোর রকমারিতা শতাধিক হয়েছে । ফু উই লান নামে পাতাবাহার গাছ প্রধানতঃ রফতানি করা হয় । এই ধরনের ফুল গাছ জাপান , দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয় । রফতানির বার্ষিক আয় ২০ লক্ষ ইউয়ানে দাঁড়ায় ।

    তাইওয়ানে চিয়াং ছিং ইং রাজহংসীর রাজা বলে সুপরিচিত । তিনি দশাধিক বছর বয়সে বাবার সংগে রাজহংসী পোষা আর রাজহংসীজাত দ্রব্যের ব্যবসা শুরু করেন । তার রাজহংসীজাত খাবার তাইওয়ানের চুয়াং হুয়া অঞ্চলে খুব জনপ্রিয় । তা ছাড়া তিনিও একজন খুব বিখ্যাত রাজহংসী বিষয়ক চিকিত্সক । ১৯৮৪ সালে তাইওয়ানে রাজহংসী মহামারী দেখা দিলে তিনি সাফল্যের সংগে প্রতিষেধক টিকা তৈরী করেছেন । তিনি এই প্রযুক্তি তার মেয়ের কাছে হস্তান্তর করেছেন । তার পর তিনি তার জন্মস্থান মূলভূভাগের ফু চিয়েন প্রদেশের ইউন ছুন অঞ্চলে ফিরে এসেছেন । তিনি ক্ষুদ্র কৃষি শিল্পায়ন ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি বেছে নিয়ে শোয়াং লিং গ্রামে রাজহংসী পোষার ব্যবসা শুরু করেন ।

    রাজহংসী পোষার ব্যাপারে ফু চিয়েন প্রদেশের দক্ষিণাংশের লোকদের আগ্রহ কম । অধিবাসীরা রাজহংসীর মাংসও খেতে পছন্দ করেন না । রাজহংসী মাংসের ব্যবসা সম্প্রসারিত করার জন্য তিনি বাজারে রাজহংসী মাংস বিক্রি করতেন , ক্রেতাদের বিনা পয়সায় খেতে দিতেন । ধীরে ধীরে স্থানীয় অধিবাসীদের রাজহংসীর মাংস খাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে । পোষার সুবিধের জন্য তিনি রাজহংসীর বাচ্চাদের আশে পাশের কৃষক পরিবারের মাঝে বিতরণ করেন এবং তাদের জন্য একটি রাজহংসী পোষা সংক্রান্ত বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেন । ফলে শোয়াং লিং গ্রামসহ এই প্রদেশের উত্তর আর দক্ষিণাংশের বেশ কিছু কৃষক পরিবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । এবছরের প্রথম দিকে চীন সরকার মূলভূভাগে বেসরকারী শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য তাইওয়ান , হংকং আর ম্যাকাওয়ের অধিবাসীদের উত্সাহ দেয়ার নীতি প্রণয়ন করেছে । ফলে চিয়াং ছিং ইং চি মেই ডিস্ট্রিক্টের প্রথম তাইওয়ানী ব্যক্তি-চালিত শিল্প ও বাণিজ্য পরিবারে পরিণত হয়েছেন ।

    ছেন সিং চি মূলভূভাগে তদন্ত শেষ হবার পর শোয়াং লিং গ্রামে বাস করার সিদ্ধান্ত নেন । কারণ তিনি লক্ষ্য করেছেন , ওখানকার ফলের বাগান আর ফুলের বীজতলা মৌমাছি পালনের জন্য প্রাকৃতিক মধুর সম্পদ যুগায় ।

    ছেন সিং চির বয়স ৬৬ বছর । তার মৌমাছি পালনের জীবন পঞ্চাশাধিক বছর বয়সে শুরু হয় । এর আগে তিনি ছিলেন তাইওয়ানের বেস বল কোচ । ছেন সিং চি লক্ষ্য করেছেন , যদিও চীন বিশ্বের বৃহত্তম মৌমাছি পালনের ঘাঁটি আর মধু রফতানিকারক দেশ , কিন্তু মূলভূভাগে মধুর মাথাপিছু বার্ষিক ব্যবহারের পরিমাণ মাত্র ৬০ গ্রাম । কিন্তু তাইওয়ানে ১৪০০ গ্রাম আর যুক্তরাষ্ট্র , জাপান প্রভৃতি উন্নত দেশে ১৬০০ গ্রামে দাঁড়িয়েছে । সেজন্য বৃদ্ধ ছেন মূলভূভাগে মৌমাছি পালন করতে চেয়েছেন । স্থানীয় মৌমাছি পালকদের চেয়ে বৃদ্ধ ছেনের মৌমাছি ভিন্ন । তিনি ইতালির মৌমাছি পালন করেন । মৌমাছি ছাড়া তিনি পুষ্পরেণু , রয়েল জেল্লী আর বি-গ্লুও উত্পাদন করেন । সিয়া মেনে বসবাসকারী তাইওয়ানের বেশ কিছু স্বদেশীয়ও তার কাছ থেকে এ সব পণ্য কিনেন ।

    শান শু নামে তাইওয়ানের এক ধরনের সবজি চাষের জন্য মিঃ ইয়াং চাও ছুন শোয়াং লিং গ্রামে এসেছেন । তিনি বহু জায়গার আবহাওয়া নিয়ে তদন্ত চালিয়েছেন । ফলে তিনি মনে করেন , সিয়া মেন তাইওয়ানের শান শু চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ।

    তাইওয়ানে এই ধরনের সবুজ সবজি খুব জনপ্রিয় । ২০০৪ সালে ইয়াং চাও ছুন আর তার স্ত্রী শোয়াং লিং গ্রামে ২.৫ একর কৃষি জমি বর্গা করেন । তারা কখনো শান শুর জন্য কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করেন নি , রাসায়নিক সার দেন নি , বরং কৃষক পরিবারের প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করেন । এখন এই ধরনের সবজি প্রতি কেজি ৪০ ইউয়ান দামে বিক্রি করা হয় । প্রতি মাসে তাদের আয় ৩ হাজার ইউয়ানেরও বেশি হয়েছে ।

    তাইওয়ানের স্বদেশীয় বৃদ্ধ চুয়াং থিয়েন ফু চীনের ঐতিহ্য খুব ভালবাসেন , তিনি থাং চুয়াং- অর্থাত্ চীনের প্রাচীনকালের নীরেট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোষাক পরেন । তার নাতী যাতে মূলভূভাগে পড়াশুনা করতে পারে আর স্থানীয় লোকদের সংগে বন্ধুত্ব করতে পারে , তার জন্য তিনি শোয়াং লিং গ্রামে এসেছেন । তিনি মনে করেন যে , ভবিষ্যতে মূলভূভাগে তার নাতীর উন্নয়নের ভবিষ্যত-সম্ভাবনা ব্যাপক । ছোট বেলায় সহপাঠী আর বন্ধু-বান্ধবদের সংগে আদান প্রদান করা তার সারা জীবন আর ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ।