আপনারা সবাই জানেন, পেইচিং চীনের রাজধানী। রাজধানী পেইচিং ইতিহাসে ত্রয়োদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দী পযর্ন্ত ইউয়ান, মিং ও ছিং রাজবংশের রাজধানী ছিল। যারা পেইচিং ভ্রমণ করতে আসেন তারা অবশ্যই রাজকীয় প্রাসাদদেখতে যান। এই রাজকীয় প্রাসাদের সংগ্রহশালা সবর্দাই দেশী-বিদেশী পযর্টকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসেছে। কিন্তু পযর্টকরা হয়তো জানেন না যে, তারা যা যা দেখেছেন তা শুধু মাত্র এই রাজকীয় প্রাসাদের একটি অংশ।এই প্রাসাদের অনেক অংশ এখন পযর্ন্ত প্রকাশ্যেউন্মুক্ত হয়নি।
এ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে চীন সরকার রাজকীয় প্রসাদে প্রায় ২০ বছরব্যাপী সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এই সংস্কার কাজে অগ্রগতি অজির্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রাজকীয় প্রসাদে অধিক থেকে অধিকতর নতুন দৃশ্য পযটর্কদের সামনে প্রকাশ পাবে।আজকের এই অনুষ্ঠানে দুটো দৃশ্য আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
পেইচিং শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত রাজকীয় প্রাসাদ এমন একটি জায়গা যেখানে চীনের মিং আর ছিং রাজবংশ আমলে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। তা ছাড়া, সেখানে দৈনিক প্রশাসনিক ব্যাপারও মোকাবিলা করা হয় এবং রাজারের পরিবার বসবাস করে। প্রাসাদের ভিতরে মোট ৯০০০টি ঘর আছে। বতর্মানে পেইচিং রাজকীয় প্রসাদ হল চীনের তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে সংরক্ষিত প্রাচীন রাজকীয় প্রসাদ সংগ্রহশালা।
পুরাকির্তী সংরক্ষণের কারনে বতর্মানে পযর্টকরা এই প্রসাদ সংগ্রহশালার সম্পূর্ণ চেহারা দেখতে পারেন না। কারন প্রাসাদের অর্ধেক জায়গা এখন পযর্ন্তও উন্মুক্ত হয়নি। এই জায়গার অধিকাংশ স্থাপত্য কখনো মেরামত হয়নি। সুতরাং পযটর্কদের কাছে উন্মুক্ত হওয়ার আগে বিরাটাকারের সংস্কার কাজ চালানোর প্রয়োজন আছে।
২০০২ সাল থেকে, চীনের ইতিহাসে রাজকীয় প্রাসাদের উপর সবচেয়ে বিরাটাকারের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০০৮ সালের পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের আগে এই প্রসাদের প্রধান হল তেইহোতিয়েন, ছিয়েনছিন গংএবং পূবর্ আর পশ্চিম দিকের ছ'টি শাখা প্রসাদের সংস্কার কাজ সম্পাদিত হবে। ২০২০ সাল নাগাদ রাজকীয় প্রসাদের সম্পূর্ণ সংস্কার কাজ সম্পাদিত হবে।
রাজকীয় প্রাসাদে প্রবেশ করলে পযর্টকরা বামের দিকে একটি সুমহান স্থাপত্য দেখতে পারেন। এটা হল উইং হল। এই হলে রাজারা মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। পরে এখানে ছিং রাজবংশের হাজারাধিক বই সম্পাদিত হয়।তখনকার বেশির ভাগ বই এই হলে সম্পাদিত হয়।
গত দু' বছরের সংস্কারে এই হলের চিত্রাঙ্কনগুলোতে সোনা খচিত হয়। এ সব সোনা খচিত চিত্রাঙ্কন যাতে বেশী সময় স্থায়ী থাকতে পারে সেই জন্য দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাপারে খুব মাথা ঘামিয়েছেন। রাজকীয় প্রাসাদের গাইড মিস জেন শিও ইউয়ে সংবাদদাতাকে বললেন,
এবারকার উইং হলের সংস্কারে যে সব কাঠ ব্যাবহার করা হয়েছে সে সব কাঠ উত্তর-পূর্ব চীন থেকে আনা হয়েছে। যে সব লিওলি টালি পেইচিংএর পশ্চিম উপকন্ঠের মেনটোগো থেকে আনা হয়েছে। আগে যদি এ সব টালির ৪০ শতাংশ নষ্ট হয় তাহলে পরিত্যাগ করা হত। কিন্তু এবার এ সব টালি নতুন করে পুড়িয়ে আবার ব্যাবহার করা হয়েছে। রঙ্গীন চিত্রাঙ্কনে যে সব উপাদান ব্যাবহার করা হয়েছে সে সব উপদান খনিজ উপাদান ।সুতরাং দেখতে শুধু সন্দর তাই নয়, এগুলো দীর্ঘ সময় টিকেও থাকবে।
জানা গেছে, যখন এই উইং হল উন্মুক্ত হবে তখন এটা প্রাচীনকালেরবই এবং চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী দেখানোর জায়গা। উইং হলে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র হওয়াং পেইএর সঙ্গে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতার দেখা হয়েছে। তিনি সংবাদদাতাকে বললেন,
এবার উইং দেখে অন্য রকমের অনুভূতি লেগেছে। কেবল সশরীরে এখানে আসলে এখানে সংঘটিত ঘটনা অনুভব করতে পারি। বিশেষ করে এখানে দেখানো প্রাচীনকালের বই আমার মনে গভীর ছাপ রেখেছে। মনে হয় আমি একটি বড় বই রাখার হলে এসেছি।
উইং হলের সংস্কার কাজ হল গোটা রাজকীয় প্রাসাদ সংস্কার প্রকল্পের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প। সম্প্রতি এই প্রাসাদের অন্যান্য সংস্কার প্রকল্প পুরোদমে চলছে। প্রাসাদের উত্তর-পূর্ব দিকের শিয়েনছিন হলের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এই হল এক সময় রাজা আর রানীদের বিনোদনের জায়গা ছিল। আগামী বছর যদি আপনি রাজকীয় প্রসাদ পরিদর্শন করেন তাহলে ভিতরে ঢুকে একটু ঘুরে দেখবেন। এই হলের আয়তন খুব বেশী নয়। মাত্র কয়েক শো বগর্কিলোমিটার। কিন্তু এই হলের সুনাম আছে। এই হলের ছাদে , পশ্চিম আর উত্তর দেওয়ালে চিত্রাঙ্কন লাগানো হয়। এই হলের ছাদের চিত্রাঙ্কনের ইতিহাস দু'শোও বেশী। এই চিত্রাঙ্কন ক্যাথ্যালিক ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশেষজ্ঞদের তদন্ত অনুযায়ী, একজন ইউরোপীয় মিশিনারি এই চিত্রাঙ্কন এঁকেছেন। এই হলের সংস্কার কাজে নিয়োজিত রাজকীয় প্রসাদের কর্মচারী মিস শিয়েন ছিন বলেছেন, বতর্মানে কেবল পেইচিংএর এই শিয়েনছিন হলে পশ্চিমা আঁকার কৌশলে এই চিত্র আঁকানো হয়। তিনি বলেছেন,
এই জায়গা একটি বিশেষ শিল্পকলা সমৃদ্ধ জায়গা। চীনের ঐতিহ্যিক শিল্পকলায় অনুরূপ দৃষ্টান্ত দেখা যায় নয়। এই চিত্রাঙ্কনশৈলীতে ইউরোপের শৈলী পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়। সেই যুগে ইউরোপের গির্জা ছাড়া এ ধরনের চিত্র কম দেখা যায় না। এ সব চিত্রাঙ্কন স্থাপত্যের ভিতরের অন্যান্য সাজ-সজ্জার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। যখন লোকেরা গির্জার মেঝে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকায় তখন মনে হয় তাদের দৃষ্টি সিমাহীন মহাকাশে নিক্ষেপ করছে।
জানা গেছে, গত এক বছরে চীন , যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি প্রভৃতি সাতটি দেশের বিশেষজ্ঞদের পরিশ্রমের মাধ্যমে এই হলের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।
|