v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-25 21:09:07    
চীনের বসন্তকালীন বস্ত্র মেলা

cri
    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে। প্রতি বছরের বসন্তকালে চীনের বস্ত্র মহলের উদ্যোগে পেইচিংয়ে ধারাবাহিক বস্ত্র ও পোশাক মেলা আয়োজিত হয়। মেলায় বস্ত্র ও পোশাক কেনা যায় এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্যও পাওয়া যায়।

    এই বসন্ত মেলার একটি অংশ হিসেবে " ২০০৬ সাল চীন আন্তর্জাতিক ফ্যাশন সপ্তাহ" গত ২৬ মার্চ পেইচিংয়ে উদ্বোধন হয়। পুরো এক সপ্তাহ ধরে ইংরেজী " T" অক্ষর আকৃতির মঞ্চে সুন্দর সুন্দর পোশাক-পরা সুন্দরী মডেলরা চমত্কার ভঙ্গিমা ও পদক্ষেপে দেশ-বিদেশের নতুন ডিজাইনের পোশাকের সৌন্দর্য দেখিয়ে দেন। তাতে আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের নতুন প্রবণতা জানা যায়। মেয়েদের পোশাকের প্রধান প্রধান রং হলো: লাল, কমলা, হাল্কা গোলাপী, সাদা এবং সোনালী। পুরুষদের পোশাকের রং প্রধানত : হলুদ, পীচ ফলের মতো হাল্কা লাল এবং কমলা রং।

    পুরুষদের হোংসানশু" মার্কার এক শো সেট ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলের পোশাক মেলাটিতে দেখানো হয়েছে। এই মার্কার পোশাকের ডিজাইনার মাদাম চাও বলেছেন, "আমি নানা স্টাইল এবং উপকরণের সমন্বয় সাধন করেছি, যেমন পাতলা কাপড়ের সঙ্গে চামড়া , সুতী কাপড়ের সঙ্গে লিনেন কাপড়, রেশমী কাপড়ের সঙ্গে সুতী কাপড় ব্যবহার করে সুন্দর সুন্দর পোশাক তৈরি করার স্টাইল পছন্দ করি। নানা উপাদানের মিশলে অপূর্ব সুন্দর দেখায়। আবার আনুষ্ঠানিক পোশাক ও আটপৌরে পোশাকের সমন্বয় সাধন করলে খুব ভাল দেখায় । ফলে পোশাকের রকমারিতা ও বৈচিত্র্য আরও বেড়ে যায়।"

    এবারকার ফ্যাশন সপ্তাহে ১৮টি দেশ ও অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশী মার্কার পোশাক দেখানো হয়েছে, ফলে মেলা খুব জমজমাট হয়ে উঠেছে । একজন বিদেশী ব্যবসায়ী মন্তব্য করেছেন, এই মেলায় এসেই শুধু বুঝতে পেরেছি, চীনের পোশাকশিল্পের বৈশিষ্ট্য: রকমারিতা খুব বেশি এবং দাম সস্তা ।

    চীনের অন্তর্বাস প্রস্তুতকারী বিশিষ্ট কোম্পানি -- ওউডিফেন গোষ্ঠীর জেনারেল ম্যানেজারের বিশেষ সহকারী মাদাম ছেন শুনুয়েন জানিয়েছেন, মেলায় ওউডিফেন মার্কার হাজার ধরনের অন্তর্বাস দেখানো হয়েছে । এগুলোর অনেক কিছুই দেশী-বিদেশী খদ্দেরদের সমাদর পেয়েছে । মাদাম ছেন বলেছেন " আমাদের কোম্পানির উত্কৃষ্ট মানের ব্রা শরীরের রক্ত সঞ্চালনের সহায়ক । ব্রার ওপরকার সুচিকর্মও দুই রং বিশিষ্ট। সোনালী রংয়ের পটে কফি রংয়ের গাছের পাতার সূচিকর্ম করা হয়েছে। এতে পাতার শিরা-উপশিরা পর্যন্ত স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কাজটি খুবই সূক্ষ্ম, দেখতে সত্যিকার পাতার মতো। তাতে নারীদের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। এই ধরনের ব্রা দোকানে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই হট কেকের মতো বিক্রী হয়ে যায় । অনেক সময় তা পাওয়াই যায় না।"

    তৈরী পোশাক অর্থাত্ গার্মেণ্টস ছাড়াও এই মেলায় সুতী এবং রেশমী প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র প্রদর্শিত হয়। মধ্যচীনের হুপেই প্রদেশের সিয়েনথাও শহরের পশমী বস্ত্রকারখানার শতাধিক ধরনের বস্ত্র এই মেলায় দেখানো হয়েছে। কারখানার পরিচালক চাং সিয়েনলিয়াং বলেছেন, "প্রতি বছর আমরা কিছু নতুন দ্রব্য উত্পাদন করি । বাজারের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চাহিদা অনুযায়ী উত্পাদন করি। যেমন উত্তর অঞ্চলের আবহাওয়া শুষ্ক বলে পশমী কাপড়ের ওপর হঠাত্ হাত দিলে হাল্কা বিদ্যুত্ স্পৃষ্ট হবার মতো অনুভূতি হয়। কারণ শুষ্ক আবহাওয়ায় এই ধরনের বস্ত্রে স্টেটিক ইলেক্ট্রিসিটি থাকে। এই অনুভূতি প্রতিরোধের জন্য আমরা এই বস্ত্রে কণ্ডাক্টিভ ফাইবার যোগ করে দেই। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আমরা জীবানু-মুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করি। ফলে আমাদের পণ্যদ্রব্যের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে। আমাদের পণ্যদ্রব্যের ৪০ শতাংশ রপ্তানী করা হয়, বিশেষ করে ইউরোপ ও জাপানে ।"

    এই মেলায় আরও দেখানো হয়েছে নানা রকম সুতা। তূলাজাত সূতা, লিনেনের সুতা, সয়াবীনের ফাইবার-জাত সুতা, এমনকি দুধের প্রোটিনজাত সুতা । সাংহাইয়ে দুধের প্রোটিনজাত সুতা প্রযুক্তি কোম্পানি--চেংচিয়া কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার চেং ইউ জানিয়েছেন, তাঁদের উত্পাদিত দুধের প্রোটিনজাত ফাইবারের সুতা মানুষের দ্বিতীয় স্তরের চামড়ার মতো নরম ও পিছল । তিনি বলেছেন, "এটা বস্ত্রশিল্পের নতুন ধরনের কাঁচামাল , তার ভবিষ্যত্ সম্ভাবনা খুবই ব্যাপক। দুধের প্রোটিন দিয়ে তা তৈরি করা হয়। দুধের প্রোটিনজাত ফাইবারের সংস্পর্শে মানুষের চামড়ার খুব উপকার হয়।"

    চীনের বস্ত্রশিল্প সমিতির মুখপাত্র সুন হুয়াইপিং মনে করেন, এই বসন্তকালীন বস্ত্রশিল্প মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য এমন যে, বিভিন্ন কোম্পানি এখানে নানা রকম পণ্য কিনতে পারে এবং ফ্যাশনের প্রবণতা জানতে পারে, একই সময়ে দেশ-বিদেশের বস্ত্রমহলের সঙ্গে আদানপ্রদান ও সহযোগিতা করতে পারে।

    পেইচিংয়ের বসন্তকালীন বস্ত্রশিল্প মেলা অনেক বিদেশী ব্যবসায়ীকে আকৃষ্ট করেছে। তাঁরা এখানে মেলা দেখেছেন এবং পণ্যদ্রব্য কিনেছেন। ফ্রান্সের বিখ্যাত বস্ত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান নোভালিন ফ্রান্স কোম্পানির সালজ্ মার্টিন জানিয়েছেন যে, তাঁদের কোম্পানি প্রতি বছরই এই মেলায় অংশ গ্রহণ করে এবং সংশ্লিষ্ট চীনা কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আদানপ্রদান ও সহযোগিতা করে। তিনি বলেছেন, " এটা এই শিল্পের চীনা কোম্পানি ও বন্ধুদের সঙ্গে আদানপ্রদানের একটি সুবর্ণ সুযোগ, কারণ এখানে আমাদের অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়। উপযুক্ত পণ্য দেখতে পেলে আমরা তা কেনার জন্য চুক্তি সই করতে পারি, একই সময়ে আমাদের কোম্পানির পণ্যদ্রব্যও এখানে বিক্রী করতে পারি, কারণ এখানে উপযুক্ত খদ্দের পাওয়া যায়।"