হঠাত্ পথের ধারে বোধিসত্বকে দেখলো উখোং । তিনি এক বৃদ্ধার বেশে ঝৃড়িতে বুনো সবজি তুলছেন । উখোং সামনে গিয়ে প্রণাম করলো । গুরুদেবকে বর্তমান বিপদ থেকে রক্ষার জন্য আবেদন করলো সে কাতর হয়ে ।
দেবি বললেন , ওটা আসলে ভয়ঙ্কর বৃশ্চিক দানবি । স্বর্গরাজ্যের পূর্ব তোরণের উজ্জ্বল প্রাসাদের সেনাপতি কৃত্তিকার কাছে যাও । তিনি ওকে বশ করতে পারবেন ।
মুহূর্তের মধ্যে উখোং উড়ে এলো কৃত্তিকা তারকার কাছে । সব শুনে কৃত্তিকা তখনই উখোং-এর সঙ্গে বিষবত শত্রু-পর্বতের দিকে চললেন । ফিফা গুহার দরজা ভেঙে সবাই ভেতরে ঢুকলো । দেবি মোরগের রুপ নিয়ে একটা ডাক দেয়া মাত্রই দানবি ধপাস করে পড়ে গেলো মাটিতে ।
মোরগ আবার ডাকলো । দানবি এবার বৃশ্চিকে পরিণত হলো । পাচিয়ে তখন নিড়ানি দিয়ে হত্যা করলো তাকে । কৃত্তিকা ফিরে গেলেন । তিনি শিষ্য তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানালো বার বার ।
গুরুদেবকে উদ্ধার করে শিষ্যরা ফিফা গুহা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলো । মন ভালো হয়ে গেছে সকলের দানবি আর কিন্নরিদের হাত থেকে রেহাই পেলো সবাই । প্রসন্ন দেখাচ্ছে আচার্যের মুখ ।
আবার যাত্রা । গুরু শিষ্য চারজন পশ্চিমের পথে পা বাড়ালেন ।
ফিফা গুহা পেছনে ফেলে আচার্য ও তাঁর শিষ্য যাচ্ছেন পশ্চিম দেশের পথে । একদিন এক খুব উঁচু পাহাড়ের সামনে এলেন তাঁরা । ধিরে ধিরে খুব সতর্ক হয়ে তাঁরা পাহাড়ে উঠতে লাগলেন । উখোং মন্ত্র পড়ে আচার্যের ঘোড়াকে ছুটিয়ে নিয়ে এলো । কিছুক্ষণ পর তারা এক সমতল জায়গায় দাঁড়ালো । এবার ভাবনা চিন্তা করে এগোতে হবে ।
হঠাত্ পাহাড়ি জঙ্গল থেকে খাঁড়া বর্শা ডান্ডা ইত্যাদিহাতে নিয়ে বেরিয়ে হলো প্রায় তিরিশ জন দস্যু । তারা আচার্যদের মালামাল লুঠ করতে চাইলো । উখোং ডান্ডার আঘাতে ডাকাতদের দুই সর্দারকে মেরে ফেললো । তা দেখে ভয়ে পালিয়ে গেলো অন্যেরা ।
আচার্যরা আবার এগোতে থাকলেন । সন্ধ্যা হয়ে গেও পথে । এমন সময় দেখা গেলো একটা বাড়ি । ঐ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো এক বৃদ্ধ । তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে আচার্য রাত্রি যাপনের কথা বললেন । বৃদ্ধ রাজি হলো এবং খুব সমাদরের সঙ্গে তাঁদের রাত্রি যাপনের আয়োজন করলো । বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আপ্যায়নও করলো সে নিরামিষ খাবার দিয়ে ।
ঐ বৃদ্ধের ছেলে একজন দস্যু । পাহাড়ে যে দস্যুরা আচার্যকে আক্রমণ করেছিলো , তাদের মধ্যে ছিলো সে । দস্যু ছেলে সঙ্গিদের নিয়ে বাড়ি ফিরেই ভিক্ষুদের দেখলো । মনে মনে সর্দার হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাইলো সে । বৃদ্ধ একথা জানতে পারলো । অতিথিদের বাঁচাতে চাইলো বৃদ্ধ । তাই আচার্যদের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলো খুব সাবধানে ।
বৃদ্ধের দস্যু ছেলে ও তার বন্ধুদের হত্যা করতে চাইলো উখোং । বাধা দিলেন আচার্য । কিন্তু আচার্যের কথা না শুনে বৃদ্ধের ছেলে ও তার সঙ্গিদের মেরে ফেললো উখোং । আচার্য তাকে খুব তিরষ্কার করলেন মানুষ হত্যার জন্য । এমন কি দল থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইলেন । একবার মন্ত্র পড়ে উখোং-এর মাথায় যন্ত্রণাও দিলেন । উখোং মাথার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বোধিসত্বের কাছে সব কথা জানাতে গেলো । দেবিকে সব কথা জানিয়ে সে তার মাথা থেকে বেড়িটি খুলে নিতে অনুরোধ করলো ।
|