সুন্দর ও মনোরম আয়ারল্যান্ডে ক্যানের জন্ম। তাঁর বাবা একজন ঘোড়সওয়ার ছিলেন। হয়তো বাবার পেশার প্রভাবে ক্যানের প্রকৃতি মনখোলা এবং ছোট বেলা থেকে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ানো তাঁর স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হওয়ার পর বিশ্ব ভ্রমণের জীবন শুরু হয়।
ক্যান্ সুন্দর ইংরেজী, ফরাসী, স্পেনিশ প্রভৃতি বহু ভাষা জানেন। ভাষা শিক্ষক হওয়ায় তাঁর বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্ন বাস্তরায়িত হয়েছে। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি কতকগুলো দেশ ও অঞ্চলের অনেক শহরে ভাষা শিক্ষক হওয়ার পর একটি ভাষা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বিবেচনা করেন। ১৯৯৪ সালে যখন তিনি দ্বিতীয় বারের মতো শাংহাইয়ে আসেন, তখন তার মনে একটি ভাষা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চিন্তা উঁকি দেয়।
ক্যান্ বলেছেন, ১৯৮৮ সালে যখন আমি পর্যটক হিসেবে শাংহাইয়ে গেলাম, তখন শাংহাই আমার মনে একটি গভীর রেখাপাত করেছে। কিন্তু তখন আমি শাংহাইয়ে দীর্ঘকাল থাকার কথা বিবেচনা করি নি। ১৯৯৪ সালে আমি আবার পেইচিং, কুয়াংচৌ আর শাংহাইয়ে গেলাম। তখনকার উদ্দেশ্য: বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য একটি উপযোগী জায়গা বাছাই করা।
ক্যান্ বলেছেন, তখন যদিও শাংহাই আজকের মতো সমৃদ্ধ হয় নি, কিন্তু চীনের অন্যান্য শহরের চেয়ে বহিঃবিশ্বের দিকে তার আদান প্রদান বেশী। বৈদেশীক পুঁজি বিনিয়োগকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি পাওয়ার জন্য শাংহাইবাসীদের ইংরেজী শিখার আগ্রহও বেশি।
ক্যান্ জানতে পেরেছেন, চীনা ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজী ব্যাকরনেরজ্ঞান পড়া ও লেখার সামর্থ্য ভাল। কিন্তু শুনা ও বলার সামর্থ্য ভাল নয়। সুতরাং তাদের শুনা ও বলার সামর্থ্য উন্নত করার কথা বিবেচনা করে। তিনি ইংরেজী প্রশিক্ষন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শিক্ষা পদ্ধতি ভাষার বেশি চর্চা করা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শেখার কৌতুহল বাড়ানো হয়েছে এবং ভাষা চর্চা করার জঙ্গে সঙ্গে শেখার পরিবেশও গড়ে উঠেছে।
১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ক্যান্ ইংরেজী প্রশিক্ষন কেন্দ্রে মোট ৩০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে।
গত কয়েক বছরে একজন বিদেশী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ক্যান্ ইংরেজী প্রশিক্ষন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রথম কয়েক বছরে বহু বাধা-বিঘ্ন কাটিয়ে উঠা হয়েছে। এই ব্যাপারে আমার আর অংশীদারদের সহিষ্ণুতা ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে। আমি মনে করি, আত্মবিশ্বাস থাকলে সফলতা আসতে পারে।
আমার শিক্ষা ব্রত শাংহাইয়ে এবং আমি একজন শাংহাইবাসী, ক্যান্ মাঝে মাঝে এই দুটো কথা মুখস্থ করেন। যদিও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ত্যের সাংস্কৃতিক ব্যবধান আর ব্যবস্থার বহু সমস্যার দরুন ক্যান্ দারুন অসুবিধা বোধ করেছেন, কিন্তু বহু বছর ধরে শাংহাইয়ে তাঁর জীবনযাপনের কারণে ক্যানের আচার ব্যবহারে শাংহাইয়ের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়।
ক্যান্ জানতে পেরেছেন, চীন সম্পর্কে সত্যিকারভাবে জানতে চাইলে, যেমন চীনের সংস্কৃতি বিষয়ক বইপুস্তক পড়া, তেমনি চীনাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াও খুব দরকার। তিনি বলেছেন, চীন ও চীনাদের জানতে চাইলে চীনাদের সঙ্গে বেশি আদান-প্রদান করা দরকার। আমি শাংহাইয়ে পুঁজিবিনিয়োগ করি। তাই বিভিন্ন মহলের চীনাদের সঙ্গে আদান-প্রদান প্রয়োজন। ফলে আমি ধাপে ধাপে চীনের সংস্কৃতি ও চীনাদের আচার ব্যবহার জানতে পেরেছি।
এখন ক্যান্ আর তাঁর তাইওয়ানবাসী স্ত্রী ও তিন বছর বয়স্ক মেয়ে শাংহাইয়ে থাকেন। তাদের পরিবার সুখী জীবন কাটায়। ক্যান্ বলেছেন, অফিসের বাইরের বেশির ভাগ সময়ে তাঁরা মেয়ের সঙ্গে থাকেন। তাঁদের মেয়ে বাসার প্রতিবেশী জাপানী, মার্কিনী ,জার্মান ও অন্যদেশী ছেলেমেয়েদের সঙ্গেও এক সাথে খেলে। তাঁর মেয়ে নিখুঁত শাংহাই ভাষা ও চীনের স্ট্যান্ডার্ড ভাষা বলতে পারে।
ক্যান বই পড়তে আর ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় তিনি ব্রতী রয়েছেন। তিনি ক্যান্ ইংরেজী প্রশিক্ষন কেন্দ্রকে শাংহাইয়ের সবচাইতে ভাল ইংরেজী বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
|