আপনারা বোবা কালাদের হাতের সাংকেতিক ভাষা বুধতে পারেন? যদি তাদের সঙ্গে দেখা হয় আপনারা কিভাবে আদানপ্রদান করেন? সম্প্রতি চীনের বিজ্ঞান একাডেমির কম্পিউটার প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্র একটি হাতের সাংকেতিক ভাষা অনুবাদ যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। তাতে এসব সমস্যা সমাধান যাবে। তা বোবা-কালাদের হাতের ভাষা অনুবাদ করতে পারে এবং সাধারণ লোকের মুখের ভাষা বোবা-কালাদের বোঝাতে পারে।
"হেলো।"
"হেলো।"
"আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হয়েছি।"
"আমিও।"
"আপনি সাধারণ সময়ে কি করতে পছন্দ করেন?"
"আমি কেনাকাটা, ভ্রমণ ও কাটুন দেখা পছন্দ করি।"
বিশ্বাস করতে পারেন? তা হলো আমাদের সংবাদদাতা আর একজন বোবা মেয়ে মা ইয়েনের মধ্যে "সংলাপ"। এই অনুবাদ যন্ত্রে মাধ্যমে তাদের আলাপ হয়েছে।
এই যন্ত্র একটি কম্পিউটার ও একটি বিশেষ দস্তানা দিয়ে গঠিত। তা হাতের ভাষা ও মুখের ভাষা পারস্পরিক অনুবাদ করতে পারে। শুধু কয়েক মিনিটি লাগবে, আদানপ্রদানের অসুবিধা হয় না।
ডঃ ছেন ই ছিয়াং এই যন্ত্রের গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। তিনি সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, এই অনুবাদ যন্ত্রের চাবি হলো এই দস্তানা। বোবা-কালা এই দস্তানা পরলে তাদের হাতের ভাষা মুখের ভাষায় অনূদিত হয়।
"এই দস্তানার একটি বৈশিষ্ট্য হলো তা স্পষ্টভাবে হাতের ভঙ্গি বা সংকেত রেকর্ড করতে পারে । হাতের আকার বা ভঙ্গিকে ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তরিত করা হয় এবং কম্পিউটারে তা মুখের ভাষায় অনূদিত হয়।"
মিস্টার ছেন জানিয়েছেন, দস্তানায় ১৮টি সেন্সার আর একটি পজিশন ট্রেকার স্থাপিত হয়। তারা হাতের আকার ও পজিশনকে নিয়ম অনুযায়ী কম্পিউটারের সংকেতে রূপান্তরিত করতে পারে। তারা ছোট হলেও উচ্চ মানের সূক্ষ্মযন্ত্র। তা হাতের ভাষার সংকেত সনাক্ত করতে পারে।
তাহলে মা ইয়েন কিভাবে সংবাদদাতার কথা শুনতে পারে? ডঃ ছেন ই ছিয়াং জানিয়েছেন,
"এখন বাজারে অনেক রকম ওডিও সনাক্ত করার সফ্টওয়্যার আছে। তাদের মাধ্যমে সহজেই মৌখিক ভাষাকে লিখিত ভাষায় রূপান্তরিত করা যায়। এই অনুবাদ যন্ত্র মাইকের মাধ্যমে মানুষের আওয়াজ সংগ্রহ করে সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে তা লিখিত ভাষায় রূপান্তরিত করে। তারপর সেই লিখিত ভাষাকে আবার কম্পিউটারের একটি ত্রিমাত্রিক ছায়ামূর্তির মাধ্যমে বোবা-কালাদের হাতের সংকেতে রূপান্তরিত করা হয়।"
পরিক্ষা অনুযায়ী বোবা-কালারা কম্পিউটারের ছায়ামূর্তির হাতের সংকেতের ৯৫শতাংশ বুঝতে পারে। তাতে দৈনন্দিন জীবনে তারা এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
বর্তমানে চীনে প্রায় ২ কোটি বোবা-কালা মানুষ আছে। ব্যাংকে ও হাসপাতালে যেতে হলে তাদের অনেক অসুবিধা হয়। এই অনুবাদ যন্ত্র তাদের জন্য খুব সহায়ক।
এই যন্ত্র নতুন উদ্ভাবিত হয়েছে বলে এখন কিছু অসুবিধা আছে। যেমন দস্তানায় অনেক বেশী বৈদ্যুতিক তার আছে, পরার সময় একটু অসুবিধা হয়। এমন একটি অনুবাদ যন্ত্রের দাম কয়েক ডজন হাজার ইউয়ান। তা সাধারণ মানুষের জন্য খুব বেশী হয়। গবেষকরা এ সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যেমন দস্তানাটির পরিবর্তনে আরো সস্তা ধরণের যন্ত্র ।
কিছু সমস্যা থেকে গেলেও এই অনুবাদ যন্ত্র ইতিমধ্যেই বোবা-কালাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগের ব্যাপারে অনেক সুবিধা দিতে পারে। ১৬ বছর বয়স্ক মেয়ে থিয়েন মুং তার মনের আনন্দ সবাইকে জানাতে চায়:
"আমার নাম থিয়েন মুং। আমার বয়স ১৬। আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এত অগ্রসর হয়েছে যে আমার হাতের ভাষা মুখের ভাষায় অনুবাদ করা যায়। তাতে আপনি হাতের ভাষা না জানলেও আমার মনের ভাব বুঝতে পারবেন।"
|