১৯৫৮ সালের এপ্রিল মাসে এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়।
এই স্মৃতিসৌধ পৃথিবীর বৃহত্তম ময়দান--পেইচিংয়ের থিয়ান আনমেন ময়দানের মাঝখানে অবস্থিত। তার উত্তর দিকে সুবিখ্যাত থিয়ান আনমেন তোরণ, দক্ষিণ দিকে সুউজ্জল চেয়ারম্যান মাওয়ের স্মৃতিভবন, পূর্ব দিকে চীনের বিপ্লবী ইতিহাস সংক্রান্ত যাদুঘর আর পশ্চিম দিকে মহা গণ ভবন দন্ডায়মান আছে। চীনের গণ-বিরদের স্মৃতিসৌধ হচ্ছে চীনাজাতির মহত্ব, গৌরব আর বিজয়ের প্রতিক। এই স্মৃতিসৌধ লিপিবদ্ধ রয়েছে যে চীনা জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামের ভাস্বর-বিবরণ।
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বিসর্জনকারী বিপ্লবী শহীদদের স্মরণ করার জন্য ১৯৪৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থাত্ চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে চীনা জনগণের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির প্রথম অধিবেশনে গৃহীত একটি প্রস্তাবে রাজধানী পেইচিংয়ে গণ-বীরদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই দিন সন্ধ্যায় থিয়ান আনমেন ময়দানে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান হয়। তবে এই সৌধ নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ১৯৫২ সালে।
গণ-বীরদের স্মৃতিসৌধের স্তম্ভ ৩ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। সৌধটির উচ্চতা ৩৭.৯৪ মিটার । এই সৌধটি উত্তরমুখী। সোধটির সম্মুখভাগে খোদাই আছে চেয়ারম্যান মাও সেতুংয়ের স্বহস্তে লেখা আটটি স্বর্ণাক্ষর: গণ-বীররা অমর হোক। স্মৃতিসোধের পেছনভাগে খোদাই রয়েছে চেয়ারম্যান মাওয়ের আর প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাইয়ের স্বহস্তে লেখা শিলালিপি। তাতে বলা হয়: গত তিন বছরে গণমুক্তি যুদ্ধে আর গণ বিপ্লবে শহীদ হওয়া গণ-বীরেরা চির অমর হোক। গত ত্রিশ বছরে গণমুক্তি যুদ্ধে আর গণ বিপ্লবে শহীদ হওয়া গণ-বীরেরা অমর হোক। তারও আগে ১৮৪০ সালের পর দেশ-বিদেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা আর জনগণের মুক্তি আর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন সংগ্রামে শহীদ হওয়া গণ-বীরেরা অমর হোক।
গণ-বীরদের স্মৃতিসৌধ প্রধানত সৌধ আর স্তম্ভ নিয়ে গঠিত। সৌধটির দিকে ধাবিত রাস্তা হলুদ রঙের গ্র্যানিট পাথর দিয়ে তৈরি। প্রশস্ত সিঁড়ি দিয়ে দুই স্তর বিশিষ্ট প্ল্যাটফর্মে আরোহণ করা যায় । প্ল্যাটফর্মের চারদিকে বসানো পাথরের থাম আর প্রতিবন্ধক সবাই সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। দ্বিতীয় স্তরের প্ল্যাটফর্মে সৌধটির স্তম্ভের চারদিকে রয়েছে দশটি বৃহত্ খোদাই-কর্ম। এইসব খোদাই-কর্মের উচ্চতা দুই মিটার। তার মোট দৈর্ঘ্য ৪০.৬৮ মিটার। প্রতিটি খোদাই-কর্মে দেখানো হয়েছে চীনা জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামের বিরাট ঐতিহাসিক ঘটনা। দশটি খোদাই-কর্মে ১৯৯জন মানুষের মূর্তি খোদাই করা হয়েছে। তাদের আকার সত্যিকার মানুষের মত বড়। এই সব জীবন্ত মূর্তির আকার আর ভাবভঙ্গি নানারকম। এইগুলো যেমন চীনের ভাস্কর্যশিল্পসম্পদ, তেমনি জনগণকে দেশপ্রেম শিক্ষাদানেরও একটি পুস্তক।
খোদাই-কর্মগুলোর উপরাংশে একটি আসন বসানো রয়েছে। তার চারদিকে খোদাই আছে একটি বৃহত্ পুষ্পমাল্য। সেই সব ফুল শহীদদের পবিত্র চরিত্র এবং দৃঢ়কা আর সাহসের ভাব-মানস ব্যক্ত করছে। সেই পুষ্পমাল্যটিতে দেখানো হয়েছে বিপ্লবী শহীদদের প্রতি চীনের বিভিন্ন জাতির জনগণের গভীর শ্রদ্ধার স্বাক্ষর। সৌধটির পূর্ব আর পশ্চিম ভাগে খোদাই রয়েছে লাল তারকা, পতাকা এবং পাইন আর সাইপ্রাস গাছ দিয়ে তৈরি চিরকাল ভাস্বর হোক কথাটি। এই সৌধটির নির্মাণ পদ্ধতি সম্পূর্ণই চীনের ঐতিহ্যিক জাতীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।প্রতিবছরের ৫ এপ্রিল চীনের ঐতিহ্যিক ছিং মিং উত্সবের সময়ে হাজার হাজার লোক গণ-বীরদের স্মৃতিসৌধটির সামনে সমবেত হয়ে থাকেন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তারা সৌধটির সামনে ফুল বা পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। গণ-বীরদের কীর্তি চিরদিন তাদের কাছে আনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে।
|