v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-19 15:17:23    
নারী চলচ্চিত্র পরিচালক মা লি ওয়েন

cri
    চীনের চলচ্চিত্র জগতে নারী পরিচালকের সংখ্যা কম , কিন্তু তাদের পরিচালিত ছবিগুলো সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে । তারা নারীদের নাছোড়বান্দা ও সুক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে বৈশিষ্ট্যময় চলচ্চিত্র ও টি- ভি নাটক তৈরী করেছেন ।

    যুবতী পরিচালক মা লি ওয়েনের বয়স ৩৪ বছর । দেখতে তার বয়সের চেয়ে বেশী পরিপক্ক মনে হয় । তিনি একজন আত্মবিশ্বাসী ও চিন্তাশীল ব্যক্তি। তিনি সাধারণ পোশাক পরেন , মুখে মেকআপের চিহ্ন দেখা যায় না । চলচ্চিত্রতৈরীর ক্ষেত্রে মা লি ওয়েনের আগ্রহ ও নিরলস প্রয়াস চলচ্চিত্র মহলে সুনাম ছাড়িয়েছে । তিনি পাঁচ বছর সময় নিয়ে দুটি মিত্যব্যয়ী চলচ্চিত্র তৈরী করেছেন । এই দুটি ছবির নাম হলো ' আমার প্রতি সর্বাধিক স্নেহশীল মানুষের মহাপ্রয়ান ' আর ' আমরা দুজন ' । ছবি দুটিই দেশে ও বিদেশে পুরস্কার জয় করেছে । এক যুবতী পরিচালকের পক্ষে এটা সহজ ব্যাপার নয় । মা লি ওয়েন বলেছেন , আমি মাত্র দুটি ছবি তৈরী করেছি এবং কোনোটিরই লোকসান হয় নি । এই দুটি ছবি সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ ও দশর্কদের মূল্যায়ন মোটামুটি ভালো । আমার জন্যে এটা সাফল্য বলা যায় ।

    ২০০১ সালে মা লি ওয়েন ' আমার প্রতি সর্বাধিক স্নেহশীল মানুষের মহাপ্রয়ান ' নামক একটি কাহিনী ছবি তৈরী করেছেন । চীনের বিখ্যাত লেখিকা চাং চিয়ের লেখা একটি উপন্যাসের ভিত্তিতে তৈরী এই ছবিতে মা ও মেয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়েছে । এই ছবির কাহিনী হলো , মধ্যবয়সী লেখিকা হো তার আশি বছর বয়সের মাকে দেখতে যান , হঠাত্ তিনি আবিস্কার করেন তার মা আগের চেয়ে অনেক বুড়ো হয়েছেন । তিনি মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান । ডাক্তার হোকে বলেন , তার মার মস্তিস্কের অনেক সংকোচন হয়েছে। মস্তিস্কের ভুমিকা পুনরুদ্ধারের জন্য শরীর চর্চা একান্ত প্রয়োজন । মা যাতে নানা ধরনের শরীর চর্চায় অংশ নেন , তার জন্য হো অনেক চেষ্টা করেন । তিনি মার সঙ্গে শরীর চর্চা করেন এবং তার জন্য জগিং মেসিন কিনে দেন । কিন্তু হঠাত্ একদিন হো আবিষ্কারকরেন তার মা জগিং মেশিনে মৃত্যুবরণ করেন । এটি একটি মমর্স্পর্শী ছবি । যদিও এই ছবিতে জীবনের খুটিঁনাটি ব্যাপার বর্ণনা করা হয়েছে , তবে এই সব ছোটখাটো ব্যাপার থেকে মা ও মেয়ের আন্তরিক মমতা চমত্কারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । এই ছবি ২০০২ সালে চীনের ষষ্ঠ ছাং ছুন চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ কাহিনী ছবির পুরস্কার আর শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বনায়িকার পুরস্কার পেয়েছে । এই ছবি দেশে ও বিদেশে মোট ১৫টি পুরস্কার জয় করেছে ।

    পরিচালক মা লি ওয়েন দক্ষিণ চীনের চিয়াং সি প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে তিনি পেইচিংয়ের কেন্দ্রীয় অপেরা ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করতে আসেন । থাকার জায়গা খোঁজারজন্য তিনি সাইকেল চালিয়ে অলিগলির বাড়ী বাড়ী ঘুরেছেন । শেষে তিনি পেইচিংয়ের এক চক মেলানো বাড়ীতে একটি ছোট ঘর পেলেন । ঘরের মালিক ছিলেন একজন বৃদ্ধা । তিনি বৃদ্ধার সঙ্গে থাকেন , তাদের মধ্যে অনেক গল্প এখনও তার মনে আছে । গত বছর মা লি ওয়েন বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর শুনেছেন । এই খবর পেয়ে অতীতের অনেক গল্পের দৃশ্য মা লি ওয়েনের চোখের সামনে ভেসে উঠে । তিনি তার জীবনের এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চলচ্চিত্র ' আমরা দুজন ' তৈরী করেছেন । ছায়াছবি ' আমরা দুজন ' –এর কাহিনী হলো পেইচিংয়ের এক চক মেলানো বাড়ীতে এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা থাকেন । একদিন এক যুবতী ছাত্রী তার বাড়ীর একটি ঘর ভাড়া করেন । সেদিন থেকে বৃদ্ধার শান্ত জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটে । প্রথম দিকে বৃদ্ধা ও তার ভাড়াটে ছাত্রী প্রায়ই জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া করেন । এক দিন মেয়েটি সহ্য করতে না পেরে অন্য বাড়ী ভাড়া করলেন । তখন বৃদ্ধা আবার নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন , ভাড়াটে ছাত্রীর কথা তার খুব মনে পড়ে । কিছু দিন পর বৃদ্ধার নাত্নী বৃদ্ধাকে গ্রামে পাঠিয়ে নিজে বাড়ীটি দখল করে নিলো । বৃদ্ধা গ্রামে ফিরে যাওয়ার অল্প কিছু দিন পরই মারা গেলেন । এই খবর মেয়ের মনে বড় আঘাত হানে । কিছু দিন আগে এই ছবি চীনের সোনালী মোরগ ও শতফুল চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পেয়েছে । জাপানের অষ্টাদশ টোকিও চলচ্চিত্র উত্সবে জাপানের চলচ্চিত্র বিচারক দল এই ছবির উচ্চ মূল্যায়ন করেছে ।

    মা লি ওয়েন বলেছেন , এই ছবির ৯৭ শতাংশ বিষয়বস্তু আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা । এই ছবির কাহিনী সহজ হলেও আমি জীবনের খুটিঁনাটি বিষয় বর্ণনার মাধ্যমে দুই চরিত্রের মানসিক পরিবর্তনপ্রকাশের চেষ্টা করেছি । এই ছবি একটি সাধারণ চক মেলানো বাড়ীতে তোলা হয়েছে । ছবিতে বাড়ীর বাগানের ফুলগুলো বছরের বসন্ত , গ্রীষ্ম , শরত্ ও শীতকালের প্রতীক । দুই চরিত্রের এক বছরের কাহিনী বর্ণনার মাধ্যমে বৃদ্ধা ও ছাত্রীর ভাবাবেগের পরিবর্তন প্রকাশিত হয়েছে । প্রথমে তারা পরস্পরকে অভিযোগ ও দোষারোপ করেন , আস্তে আস্তে তারা পরস্পরকে পছন্দ করতে শুরু করেন , শেষে তাদের সম্পর্ক এতো ঘনিষ্ঠ হয়েছে যে কেউ কাউকে ছাড়তে পারেন না । এই ধরণের মানসিক পরিবর্তন দর্শকদের মুগ্ধ করেছে । মানুষের ভাবাবেগ ভাষা ও মতাধিষ্ঠান উতরে যেতে পারে , পৃথিবীর সব দেশের নাগরিক এই ধরনের মানসিক সমঝোতা বুঝতে পারেন । ' আমরা দুজন ' ছবিটির নায়িকা , ৮৪ বছরবয়সী চিং ইয়া ছিন টোকিও চলচ্চিত্র উত্সব আর কিছু দিন আগে অনুষ্ঠিত চীনের সোনালী মোরগ ও শতফুল চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ।

    মা লি ওয়েন একজন নবীন পরিচালক । তিনি চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউটের স্নাতক নন । তাই প্রথম দিকে ছবি তৈরীর অর্থ যোগাড় করা দুঃসাধ্য ছিলো । কিন্তু মা লি ওয়েনের নিরলস প্রয়াস ও সদিচ্ছা দেখে অনেকে মুগ্ধ হয়েছেন । বিশেষ করে লেখক চাং চিয়ে যিনি নিজের অভিজ্ঞতার উপর রচিত উপন্যাস ছায়াছবির বিষয়বস্তুতে পরিণত করতে চান না , তিনিও মুগ্ধ হয়েছেন । মা লি ওয়েন বলেছেন , আমি একজন নতুন চলচ্চিত্র পরিচালক , তাই প্রথম দিকে অর্থাভাব স্বাভাবিক ব্যাপার । নিরলস প্রচেষ্টা করে ভালো কাজ করে স্বীকৃতি পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার । কিন্তু এটা এক সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া । তাই প্রথম দিকে আমাকে কম অর্থবিনিয়োগের ছায়াছবি তৈরী করতে হবে । ২০০৬ সালে মা লি ওয়েন তার তৃতীয় ছবি তৈরীর কাজ শুরু করবেন । এটা একটি শহরাঞ্চলের নাগরিকের প্রেমের ছবি । তার আগের দুটি ছবির সাফল্যের কল্যানে এবার মা লি ওয়েন যথেষ্ট বিনিয়োগ পেয়েছেন।

    চীনের চলচ্চিত্র মহলে নারী পরিচালকের সংখ্যা কম । চলচ্চিত্র তৈরীর জন্য মা লি ওয়েন অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন । আজ পর্যন্ত তিনি বিয়ে করেন নি । অনেক সময় তিনি বিয়ে করে স্বামী ও ছেলেমেয়ের সঙ্গে জীবন যাপনের আকাংখা পোষন করেন । কিন্তু তিনি একজন দৃঢচিত্তের মানুষ , তিনি নিজের স্বপ্ন ছেড়ে দিতে চান না । এখন তার মানসিক অবস্থা শান্ত । তিনি ছায়াছবি তৈরীকে নিজের একটি অভিজ্ঞতা ও জীবনের এক ভ্রমন মনে করেন ।