আচার্য মহা বিপদে পড়লেন । উখোংকে বললেন কিছু উপায় বের করতে । উখোং অভয় দিলো । সে রাণিকে গিয়ে বললো , আপনার প্রস্তাবে আচার্য খুব খুশি হয়েছেন । আমাদেরও কোনো অমত নেই । আপনি আমাদের ছাড়পত্র দিয়ে দিন । আমরা বৌদ্ধশাস্ত্র গ্রন্থ সংগ্রহ করতে বের হয়েছি । চলে যাবো সেই পথে । আচার্য এখানেই থাকবেন ।
উখোং-এর কথা শুনে আচার্য রেগে গেলেন খুব। বললেন , তুমি আমাকে মেরে ফেলতে চাও ? উখোং বললো , গুরুদেব , এদের কথায় রাজি না হলে এরা কখনই ছাড়পত্র দেবে না । আমি তাই এই কৌশল বের করেছি । আপনি আমার কয়েকটা কথা শুধু মেনে চলবেন । সে গুরুর কানে কানে কিছু কথা বললো । স্বস্তি পেলেন আচার্য । চিন্তামুক্ত হলেন উখোং-এর কথা শুনে ।
প্রাসাদে ভোজ সভার আয়োজন করে আচার্য এবং তাঁর শিষ্যদের ডাকলেন রাণি । সেজেগুজে মোহন বেশে রানি এলেন তাঁর হবু স্বামি আচার্যকে প্রাসাদে নিয়ে যাওয়ার জন্য । ড্রাগন গাড়িতে রাণি ও সুয়ান চুয়াং বসলেন । শিষ্যরা চললো পিছন পিছন । ওদের মুখ শুকনো । কেবল উখোং নির্বিকার ।
ভোজসভায় বেজায় আনন্দ উল্লাস । সভার সাজ সজ্জা এবং আয়োজনও অসাধারণ । ঝলমল করছে চারদিক । সবাই দেদার খাচ্ছে । রানি বার বার আচার্যকে পান পাত্র দিচ্ছেন । আচার্যের তো মরণ দশা ।
ভোজসভা শেষে রাণি শিষ্যদের ছাড়পত্রে সিল মোহর মেরে দিলেন । শিষ্যদের বিদায় জানাবার জন্য শহরের প্রান্তে আসতে চাইলেন আচার্য । রাণি সম্মতি দিলেন এবং নিজেও আচার্যের পাশে বসে ড্রাগন গাড়িতে শহরের প্রান্তে চললেন । রাণির সুন্দর বর দেখে হাততালি দিয়ে খুশি প্রকাশ করলো সবাই । এই মহিলা রাজ্যে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি কখনও । শহরের প্রান্তে এসে আচার্য গাড়ি থেকে নামলেন । শিষ্যদের সঙ্গে বৌদ্ধশাস্ত্র গ্রন্থ সংগ্রহে যাওয়ার কথা বললেন তিনি । আচার্যের এই পরিবর্তন দেখে রাণি খুবই আশ্চর্য হলেন । পাচিয়ের ভিষণ চেহারা আর কান নাড়ানো দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন গাড়িতে ।
সঙ্গের মহিলারা তখন আচার্যকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলেন । উখোং কৌশল খাটানোর আগেই এক মহিলা ঝড় তুলে আচার্যকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো । শিষ্যরা তাড়াতাড়ি আকাশে উঠে অনুসরণ করলো ঘুর্ণিবায়ুকে ।
কিছুক্ষণ পর তারা এক উঁচু পাহাড়ে এলো । ঘুর্ণিবায়ু তো থেমে গেছে । কিন্তু আচার্যের কোনো পাত্তা নেই কেনো ।
তিনি শিষ্য পাহাড়ের নিচে নেমে "বিষবত শত্রু-পর্বত ফিফা" গুহার সামনে এলো । দরজা বন্ধ দেখে উখোং মৌমাছির রূপ নিয়ে ঢুকে গেলো গুহার মধ্যে । সে দেখলো এক হাওয়াঘরে আচার্য বসে চোখের পানি ফেলছেন । সামনে বসে আছে এক সুন্দরি । তাকে পত্নি হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সে আচার্যকে বলছে ।
রেগে গিয়ে উখোং নিজের রূপে এলো । সে বুঝলো যে ঐ মেয়ে হলো দানবি । তারপর শুরু হলো যুদ্ধ । লড়াই করতে করতে গুহার বাইরে এলো উখোং । তখন পাচিয়ে ও ভিক্ষু শাও উখোং-এর পক্ষে যোগ দিলো ।
হঠাত্ দানবি মুখ নাক দিয়ে আগুন আর ধোঁয়া ছুঁড়তে লাগলো । দানবির ত্রিশুল ছুটে গেলো উখোং-এর মাথা বরাবর । উখোং-এর মনে হলো হাজার হাজার কাঁটা বিঁধছে তার মাথায় । যন্ত্রণায় মাথা চেপে ধরে সে পালিয়ে গেলো । দানবি বুঝলো , উখোং মস্ত বীর । তার সঙ্গে লড়াই করা খুব কঠিন । উখোং ও বুঝলো দানবি খুবই মারাত্মক । ওর সঙ্গে পেরে ওঠা বেশ শক্ত কাজ ।
|