v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-17 16:07:26    
স্বকীয় উদ্ভাবনের পথে চীনের  গাড়ি শিল্প

cri
    চীনে গাড়ি শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন হয়ে চলেছে। এই শিল্প ইতিমধ্যেই চীনের অর্থনীতির অন্যতম মূল অবলম্বনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু চীনে তৈরী গাড়িগুলোর চীনা মার্কা খুবই কম, বেশির ভাগ গাড়ি বিদেশী মার্কার । এই অবস্থা কি করে কাটিয়ে উঠা যায়? এর সমাধানের উপায় হচ্ছে স্বকীয় উদ্ভাবনের পথে চলা ।

    ২০০৫ সালে চীনে ৮০টিরও বেশি নতুন মডেলের গাড়ি বাজারে প্রবেশ করে । গড়পড়তা প্রতি চার দিনেই একটি নতুন মডেলের গাড়ি বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু চীনের নিজস্ব মার্কার নতুন মডেল খুবই কম। নতুন মডেলের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ চীনের নিজস্ব মার্কার।এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের উপ মহাপরিচালক লিউ শিচিন বলেছেন, "গাড়ি শিল্প উন্নয়নের প্রথম দিকে বাজারে চাহিদা খুবই বেশি। এমন সময়ে বিদেশ থেকে সাধারণ গাড়ির প্রযুক্তি আমদানি করলে চীনে সহজেই বেশ ভাল গাড়ি উত্পাদন করা যায় এবং তা বাজারে বিক্রী করে সহজেই অর্থ উপার্জন করা যায়। এটা এক পথ। অন্য একটি পথ হলো নিজের উদ্যোগে নিজস্ব মার্কার গাড়ি গবেষণা ও উদ্ভাবন করা। তাতে অনেক পুঁজি লাগে এবং প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিরও দারুণ অভাব ছিল। এমন অবস্থায় বেশির ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাজার দখলের জন্য প্রথম পথ বেছেছে। গবেষণার পথ গ্রহণ করে নি।"

    তবে বিদেশী প্রযুক্তি কেনার ওপর নির্ভরশীলতা দীর্ঘ দিন চলবে না। নিজের উদ্যোগে গবেষণা ও উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে চলতে হবে। তাতে চীনের নিজস্ব মার্কা ও মডেলের গাড়ি উত্পাদন করা যাবে। এ কথা উপলব্ধি করে চীন সরকার গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানীর শুল্ক বিরাট মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে প্রধানত যন্ত্রাংশ আমদানী করে চীনে এসেম্বলিং করার যুগ শীঘ্রই শেষ হবে।

    যখন চীনের বেশির ভাগ গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদেশী মার্কার গাড়ি উত্পাদনে ব্যতিব্যস্ত ছিল, তখন খুব অল্প কয়েকটি দেশী কোম্পানি নিজের মার্কার ছোট ও সস্তা ধরনের গাড়ি গবেষণা ও উদ্ভাবনের উদ্যোগ নিয়েছে। থিয়েনচিন শহরের এক নম্বর গাড়ি কোম্পানির উত্পাদিত সিয়ালি মার্কার গাড়ি গত বছর দুই লাখ বিক্রী হয়েছে । এটা চীনের বাজারে বিক্রী হওয়া অনুরূপ গাড়ির মোট পরিমাণের শতকরা ৩০ ভাগ। এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং কাং বলেছেন,

    "আমরা ১৫ বছর ধরে নিজেদের উদ্যোগে গাড়ি গবেষণা ও উত্পাদন করেছি এবং নিজেরাই ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করি। আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এখন আমাদের নিজেদের ইঞ্জিন ও স্পীড চেঞ্জিং বক্স্ উত্পাদনের কারখানা এবং ক্রয় বিক্রয়ের নিজস্ব নেটওয়ার্ক আছে।"

    ১৫ বছর আগে সিয়ালি মার্কার গাড়ি খুব বিখ্যাত ছিল না, তার বাজার কম ছিল। তবে এই কোম্পানি হাল ছাড়ে নি। বরং আরও বেশি শক্তিতে গবেষণা করেছে, ফলে শক্তি সাশ্রয় এবং দূষণমুক্ত ধরনের গাড়ি তৈরী করতে পেরেছে। তাদের লক্ষ্যমাত্রা: ২০১০ সালে এক বছরেই নিজস্ব মার্কার ১০ লাখ গাড়ি বিক্রি করা।

    উপরোক্ত থিয়েনচিন শহরের ১ নম্বর গাড়ি কোম্পানির সাফল্যের দৃষ্টান্ত দেখে চীনের অধিক থেকে অধিকতর গাড়ি কোম্পানিও নিজেদের উদ্যোগে নতুন প্রযুক্তি ও মডেল গবেষণা শুরু করেছে। যেমন চীনের ছাংছেং গাড়ি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মাদাম ওয়াং ফেংইং বলেছেন, "এখন চীনের গাড়ি সম্পর্কে বিদেশীরা মনে করেন, অনুরূপ গুণমানের বিদেশী গাড়ির চেয়ে চীনা গাড়িই বেশি সস্তা এবং চীনা গাড়ির প্রযুক্তি ও মানোন্নয়নের গতি বিস্ময়করভাবে দ্রুত ।মাঝারি স্টাণ্ডার্ডের গাড়ির বাজারে চীনা গাড়ির অংশ বেড়ে যাওয়ার অবকাশ থাকবে।"

    বিভিন্ন চীনা কোম্পানি নিজেদের উদ্যোগে গাড়ি গবেষণা ও উন্নয়নের নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের নানচিং গাড়ি গোষ্ঠী ব্রিটেনের শত বছরের ইতিহাস-সম্পন্ন এমজি রোভার কোম্পানি এবং তার ইঞ্জিন উত্পাদন শাখাকারখানা কিনে ফেলেছে। অনেক চীনা কোম্পানি একত্রিত হয়ে আরও বড় হচ্ছে। ফলে নিজস্ব মার্কার গাড়ি গবেষণা ও উত্পাদনের সুবিধা হবে।

    বিশেষজ্ঞদের মতে চীনা গাড়ি শিল্পের এই স্বকীয় উদ্ভাবনের পথ সহজ নয়। বাজারে চাহিদার অবস্থা পরিবর্তনশীল । এই অবস্থা এবং বিভিন্ন কোম্পানির যার যার বৈশিষ্ট্য অনুসারে ক্রমেই তাদের গবেষণা জোরদার করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

    চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের উপমহাপরিচালক লিউ শিচিন বলেছেন, নিজেদের উদ্যোগে গবেষণা ও উদ্ভাবনকারী গাড়ি কোম্পানিকে সমর্থন করার জন্য সরকারের উচিত উপযুক্ত নীতি প্রবর্তন করা এবং অর্থসাহায্য দেয়া। তিনি বলেছেন, " কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি গবেষণা করার জন্য এক একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য নেই বা যথেষ্ট নয়। কিন্তু এই প্রযুক্তি গোটা গাড়ি শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন । তাই এ রকম বিষয় গবেষণার প্রকল্পের জন্য সরকারের উচিত সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ যুগিয়ে দেয়া।"

    চীন সরকার ইতিমধ্যেই চীনের কতকগুলো নিজস্ব মার্কার গাড়িকে কেন্দ্রীয় সরকারের 'পণ্য ক্রয় তালিকায়' অন্তর্ভুক্ত করেছে, তাছাড়া গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত হওয়া বা পুনর্গঠিত হওয়ার জন্য উত্সাহ দিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কর্মসূচি সবেমাত্র প্রকাশিত হয়েছে , তাতে চীনসরকার পস্তাব করেছে, স্বকীয় উদ্ভাবনের সামর্থ্য বাড়িয়ে দিতে হবে, নিজস্ব মেধাসত্ব-ভিত্তিক গাড়ির ইঞ্জিন, ইলেকট্রনিক্স ও যন্ত্রাংশ ইত্যাদির উন্নয়ন দ্রুততর করতে হবে, বাজারে চীনের নিজস্ব মার্কার গাড়ির অনুপাত বাড়াতে হবে, চীনের কতকগুলো কোম্পানির প্রত্যেকটিতে বছরে ১০ লক্ষেরও বেশি গাড়ি উত্পাদনের ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। অনুমান করা যাচ্ছে,চীনের অধিক থেক অধিকতর গাড়ি কোম্পানি স্বকীয় উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে চলবে।