v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-13 12:59:04    
পেইচিংয়ের নাগরিকদের বসতবাড়ি নির্বাচনের নতুন প্রবণতা

cri
    পেইচিংয়ের নাগরিকদের পক্ষে সাবওয়ে তথা পাতাল-রেলে বাড়ি - অফিস আসাযাওয়া একটি অতি সাধারণ ব্যাপার । বিশেষ করে যারা থাকেন উপকন্ঠে আর চাকরি করেন শহরে তাদের পক্ষে সাবওয়েই সবচেয়ে সুবিধাজনক মাধ্যম । মি: জিনজুন থাকেন পেইচিংয়ের উত্তর উপকন্ঠে । এই প্রসংগে তিনি বলেছেন :সাবওয়ে করে অফিসে যেতে কম সময় লাগে ।আসাযাওয়া করতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই ।

    মি: জিন জুন যে আবাসিক ভবনে থাকেন তা পেইচিংয়ের উত্তর উপকন্ঠের হুইলংকুয়ান এলাকায় ।কিন্তু তিনি চাকরি করেন চীনের সিলিকন ভ্যালি বলে পরিচিত জংকুয়ানছুন এলাকায় । তাঁর বসত বাড়ি ও অফিসের মধ্যকার দুরুত্ব প্রায় বিশ কিলোমিটার । যাতায়াতের ব্যাপারে তিনি যে অসুবিধা অনুভব করছেন না তার মুলে রয়েছে পেইচিংয়ের দিন দিন পরিপুর্ণ হওয়া পরিবহন ব্যবস্থা । প্রকৃত পক্ষে পেইচিংয়ের পরিবহন ব্যবস্থা ক্রমাগত উন্নত হওয়ায় এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মি: জিন জুনের মত যারা শহরাঞ্চলে কাজ করেন এবং থাকেন উপকন্ঠে তাদের সংখ্যা বছরের পর বছর বেড়ে যাচ্ছে । পেইচিংয়ের বিপুল সংখ্যক নাগরিক তাদের দৃষ্টি উপকন্ঠের উপরে নিবদ্ধ করে সেখানে বসতবাড়ি বাছাই করেছেন ।

    সম্প্রতি পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি বসতবাড়ি প্রদর্শনীতে সি আর আইয়ের সংবাদদাতা জানতে পেরেছেন যে , প্রদর্শনীতে দেখানো একশোটিও বেশী  আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী রয়েছে পেইচিংয়ের উপকন্ঠে । উপকন্ঠের একটি আবাসিক ভবনের মডেলের সামনে দর্শকদের ভীড় জমেছে । এই আবাসিক ভবন একটি কোম্পানির কর্মচারী মি: জাংয়ের পছন্দ হয়েছে ।তিনি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তিনি প্রধানত: দাম বিবেচনা করে উপকন্ঠের বসতবাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন

    তিনি বলেছেন : শহরের ভেতরের বসতবাড়ির চেয়ে উপকন্ঠের বসতবাড়ি অনেক সস্তা , উপকন্ঠের হাওয়া টাটকা , এখন যাতায়াতের ব্যবস্থাও উন্নত । দৈনন্দিন জীবনে কোনো অসুবিধা নেই ।

    কম টাকা খরচ করেও সন্তোষজনক বসতবাড়ি কেনা যাবে ,সেইসংগে পরিবহনের সুবিধাও পাওযা যাবে , এটাই বসত বাড়ি নির্বাচনে অনেক পেইচিংবাসীর পুরনো ধারনা পরিবর্তনের কারন । জানা গেছে ,তাঁরা অতীতে মনে করতেন , তাদের পক্ষে উপকন্ঠের একটি ফ্লাট বাড়ির চেয়ে শহরাঞ্চলের একটি চৌকি শ্রেয় ।

    চীনের জাতীয় বসতবাড়ি প্রকল্প কেন্দ্রের সহকারী সাধারন স্থপতি লিউ ওয়ে তং বসবাসের ব্যাপারে পেইচিংবাসীদের দৃষ্টিভংগীর পরিবর্তন প্রসংগে এই মত প্রকাশ করেছেন যে , এটা পেইচিংয়ের শহরের উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে মানুষের চিন্তাভাবনা পরিবর্তনের সংগে জড়িত ।তিনি বলেছেন : গত কয়েক বছরে পেইচিংয়ের চারপাশে যে একাধিক রিং রোড ও লাইট রেলপথ নির্মিত হয়েছে তা উপকন্ঠে বসতবাড়ি নির্বাচন করতে শহরবাসীদের উত্সাহ দিয়েছে।

    একটি জরীপ অনুযায়ী প্রায় শতকরা নববই জন পেইচিংবাসী ধাপে ধাপে উপকন্ঠে স্থানান্তরিত হবেন । পেইচিংয়ের পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা ছেং চিয়ান জুন মনে করেন, পেইচিংয়ের পুরনো এলাকা সংরক্ষন এবং কেন্দ্রস্থলের মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা কমানোর দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় , উপকন্ঠে শহরবাসীদের স্থানান্তর একটি উত্সাহব্যঞ্জক ব্যাপার ।তিনি বলেছেন:পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থলে জনসংখ্যা এবং পরিবহন ও পরিবেশের সমস্যা দিন দিন তীব্র আকার ধারন করছে । এটা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রসিদ্ধ শহর হিসেবে পেইচিংয়ের সংরক্ষনকাজের উপরে প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে ।তাই উপকন্ঠে স্থানান্তরিত হতে শহরবাসীদের উত্সাহ দেয়া উচিত । তাঁরা যাতে আরামদায়ক পরিবেশে থাকতে পারেন তার জন্য উপকন্ঠের যোগাযোগ , পরিবহন , শিক্ষা ,ক্রীড়া , বৃক্ষরোপন প্রভৃতি ক্ষেত্রের কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে হবে ।

    অধিকাংশ পেইচিংবাসী উপকন্ঠে স্থানান্তরিত হলেও শহরাঞ্চলের বহু নাগরিকদের এখনো নড়বার ইচ্ছা নেই । মাদাম কুয়ান সু সিং কয়েক দশকে পেইচিংয়ের পশ্চিম বিভাগের লিউ ইং রাস্তার পাশে একটি একতলাবাড়িতে বাস করেছেন । তিয়ান আন মেন মহাচত্বর ও তাঁর বাড়ির মধ্যকার দুরুত্ব দশ কিলোমিটারেরও কম ।তাঁর বাড়ীর পেছনে হৌ হাই পার্ক । পাড়াপড়শীদের সংগে তাঁর সম্পর্ক মধুর । তাঁর আবাসিক এলাকায় জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা সহজে পাওয়া যায় । তাই সেই জায়গার প্রতি তাঁর গভীর মায়া-মমতা রয়েছে ।তিনি বলেছেন :আমরা একতলা বাড়ীতে থাকি , একটি আঙ্গিনার চারপাশে তিনচারটে পরিবারের বাড়ী । উঠতে বসতেই প্রতিবেশীদের জাং চাচী ও লি মাসী চোখে পড়ে । বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে কারো সংগে দেখা হলে কুশল জিজ্ঞাসা করি । কেউ অসুস্থ হলে সবাই মিলে সময়মত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে । পাড়া কমিটি মাঝেমাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । সবাই একসংগে নাচগান করে, আমাদের মন আনন্দে কানায় কানায় ভরা । আমাদের কারো একতলাবাড়ী ছেড়ে বহু তল আবাসিক ভবনের নতুন বাসায় উঠবার ইচ্ছা নেই ।

    মাদাম কুয়ানের মত বৃদ্ধবৃদ্ধা ছাড়া অনেক তরুণতরুণীও শহরাঞ্চল ছেড়ে উপকন্ঠে স্থানান্তরিত হতে চায় না । বিশ বছর বয়সী লিউ পেঙ তাদের মধ্যে একজন ।তিনি বলেছেন : আমি শহরের ভেতরে থাকতে পছন্দ করি , কেন না ,শহরের ভেতরে আছে বড় হাসপাতাল, উন্নতমানের স্কুল আর কিন্ডার গার্টেন ,কাজেই আমি তিন নম্বর রিং রোডের ভেতরে ফ্লাট বাড়ি কিনেছি ।

    প্রকৃতপক্ষে যে কেউ শহরের ভেতরে বা বাইরে বসতবাড়ি নির্বাচন করুন না কেন , তিনি নির্বাচন করেছেন জীবনযাপনের পদ্ধতি । এখন পেইচিংবাসীরা ইচ্ছামত জীবনযাপনের পদ্ধতি নির্বাচন করতে পারছেন ।