v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-12 15:43:53    
চীনের সোনালী মোরগ ও শতফুল চলচ্চিত্র উত্সব

cri
    গত বছরের ৮ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চীনের চতুর্দশ সোনালী মোরগ ও শতফুল চলচ্চিত্র উত্সব দক্ষিণ চীনের বন্দর নগরী সান ইয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ।

    চীনের সোনালী মোরগ চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আর শতফুল চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । সোনালী মোরগ পুরস্কার চলচ্চিত্র মহলের বিশেষজ্ঞদের ভোটের মাধ্যমে স্থির করা হয় আর শতফুল পুরস্কার দশর্কদের প্রত্যক্ষ ভোটদানের মাধ্যমে স্থির করা হয় । এই দুটি পুরস্কার চীনের চলচ্চিত্রের দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার । বর্তমান সোনালী মোরগ ও শতফুল চলচ্চিত্র উত্সবের প্রধান বিষয় হলো চীনের ২৫তম সোনালী মোরগ চলচ্চিত্র পুরস্কারের ১৬টি পুরস্কার বিতরণ করা , এগুলোর মধ্যে আছে শ্রেষ্ঠ কাহিনী ছবি পুরস্কার , শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার , শ্রেষ্ঠ নাট্যকার পুরস্কার , শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও অভিনেত্রী ইত্যাদি ।

    কাহিনী ছবি ' কোকোসিলি ' ও ' থাইহাং পাহাড়ে ' হচ্ছেবর্তমান উত্সবে শ্রেষ্ঠ কাহিনী ছবি হিসেবে সোনালী মোরগ পুরস্কার পাওয়া দুটি ছবি । একটি সত্যিকার কাহিনীর ভিত্তিতে রচিত ছায়াছবি ' কোকোসিলি ' চীনের প্রথম পশ্চিমাঞ্চলের এডভেঞ্চার ছবি । যুব পরিচালক লু ছুয়ান ও তার সঙ্গীরা সমুদ্র সমতলের চেয়ে পাঁচ হাজার মিটার উচু ছিং হাই- তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত কোকোসিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চলে এই চিত্তাকর্ষক ছবি তুলেছেন ।

    এই ছায়াছবির কাহিনী হলো বিলুপ্তপ্রায় তিব্বতী এন্টিলোপ রক্ষার জন্য পাহাড় রক্ষী দলের আটজন সদস্য কোকোসিলি অঞ্চলে প্রবেশ করেন । তারা কোকোসিলি অঞ্চলের প্রতিকুল প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করেন এবং সাহসের সঙ্গে বেআইনী শিকারীদের মোকাবেলা করেন । শেষে আটজনের মধ্যে মাত্র দুজন জীবিত অবস্থায় এই অঞ্চল থেকে বের হতে পেরেছেন । এই ছায়াছবিতে বাস্তবনিষ্ঠ ও নিষ্ঠুর সংগ্রামের দৃশ্য আর মানবজাতির পরিবেশ রক্ষার বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম প্রত্যেক দশর্ককে মুগ্ধ করেছে। এই ছবি দেশবিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছে ।

    গত বছর পরিচালক লু ছুয়ান ও আরো কয়েকজন যুব পরিচালকের তৈরী বেশ কয়েকটি ছায়াছবি দর্শকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে । এই সব ছবিতে চীনা নাগরিকদের বাস্তব জীবন প্রতিফলিত হয়েছে , তাদের তৈরী ছবিগুলোতে সমাজের সাধারণ অধিবাসীদের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে । বর্তমান চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পাওয়া মা লি ওয়েন তাদের মধ্যে একজন।

    যুব নারী চলচিত্র পরিচালক মা লি ওয়েন চীনের কেন্দ্রীয় অপেরা ইন্সটিটিউটের একজন স্নাতক । তার পরিচালিত প্রথম ছবির নাম হলো ' আমার প্রতি সর্বাধিক স্নেহশীল মানুষের মহাপ্রয়াণ ' , চীনের নামকরা লেখক চান চিয়ের লেখা একটি উপন্যাসের ভিত্তিতে রচিত এই ছবি চীনা দশর্কদের মধ্যে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । এবার তার পরিচালিত ' আমরা দুজন ' নামে ছবিতে বিনিয়োজিত অর্থ মাত্র ৩০ লক্ষ ইউয়ান । এই ছবিতে পেইচিংয়ের একটি চার কোনাকার ঐতিহ্যবাহী বাড়ীতে থাকা একজন নিঃসঙ্গ বুড়ীমা ও তার ভাড়াটের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । এই ছবিতে একজন নিসঙ্গ বৃদ্ধা ও এক তরুণী ছাত্রীর সম্পর্কের পরিবর্তন বিস্তারিতভাবে চিত্রিত হয়েছে । প্রথম দিকে বয়সের ব্যবধানের দরুন দুজনের সম্পর্ক খুব খারাপ ছিল , প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হত । কিন্তু দীর্ঘ দিনের মেলামেশার পর দুজনের মধ্যে সমঝোতা বেড়েছে । এই ছায়াছবিতে পরিচালক মা লি ওয়েন ছোটখাটো বিষয় বর্ণনার মাধ্যমে চরিত্রের মানসিক অনুভুতি ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছেন । কিছু দিন আগে এই ছায়াছবির অভিনেত্রী , অর্থাত ছবিতে বুড়ীমার চরিত্র সৃষ্টিকারী ৮৪ বছরবয়সী প্রবীণ অভিনেত্রী চিং ইয়া ছিং অষ্টাদশ টোকিও চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন । ছায়াছবি যাচাইয়ের সময় জাপানের চলচ্চিত্র মহলের বিশেষজ্ঞদের যাচাই কমিটি ' আমরা দুজন ' ছবিটিকে ৩১টি তারা দিয়েছে । শ্রেষ্ঠ ছবির সর্বোচ্চ নম্বর হলো ৩৫টি তারা । তাই এই ছবি অন্য সব ছবিকে ছাড়িয়ে শ্রেষ্ঠ ছায়াছবির পুরস্কার জয় করেছে । ' আমরা দুজন ' হচ্ছে যুবতী নারী পরিচালক মা লি ওয়েনের পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি । তার এই ছবি পরিচালনার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে মা লি ওয়েন বলেছেন , আমি একজন যুবতী চলচ্চিত্র পরিচালক । প্রথম পর্যায়ে নতুন পরিচালকের দক্ষতা ও শক্তি কেউ বিশ্বাস করেন না । তাই প্রথম কয়েকটি ছায়াছবির জন্য বড় অংকের অর্থবিনিয়োগ পাওয়া কঠিন ব্যাপার । দর্শক ও চলচ্চিত্র মহলের বিশেষজ্ঞদের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আমাকে কঠোর প্রয়াস চালাতে হবে।

    এই বছর সোনালী মোরগ পুরস্কার যাচাইয়ের নিয়মের একটি পরিবর্তন হলো হংকং , ম্যাকাও ও তাইওয়ানের চলচ্চিত্র শিল্পীরাও মূলভূখন্ডের এই চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নিতে পারেন । হংকংয়ের খ্যাতনামা অভিনেতা ছেন লুন এক্সিন ছবি ' নতুন পুলিশের কাহিনী 'তে চমত্কার নৈপুন্য দেখিয়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার পেয়েছেন ।

    এই চলচ্চিত্র উত্সবে অনেক অল্পবয়সী অভিনেত্রী শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ার আশা রাখেন । কিন্তু যাচাই কমিটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার ৮৪ বছর বয়সী প্রবীন অভিনেত্রী চিং ইয়া ছিংকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । চিং ইয়া ছিং পেইচিং গণ শিল্পী দলের মঞ্চনাটকের অভিনেত্রী । দীর্ঘ ত্রিশ বছরের অভিনয়ের অনুশীলনে তিনি অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন । ' আমরা দুজন ' তার প্রথম ছায়াছবি হলেও চিং ইয়া ছিং তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধার মানসিক অবস্থা চমত্কারভাবে প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেছেন , আমি এই ছায়াছবির কাহিনী খুব পছন্দ করি । শহরাঞ্চলের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধার চরিত্র সৃষ্টির জন্য আমি সব অসুবিধা অতিক্রম করতে পারি । যদিও অভিনয়ের সময় প্রচন্ড শীতে অসুস্থ হয়েছিলাম এবং দুবার হোঁচট খেয়ে পড়েছিলাম । কিন্তু চুড়ান্ত বিজয় আমাদের ।

    সোনালী মোরগ ও শতফুল চলচ্চিত্র উত্সব চলাকালে সান ইয়া শহরে আন্তর্জাতিক ছায়াছবি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে । যুক্তরাষ্ট্র , ফ্রান্স ও জাপান প্রভৃতি ১৭টি দেশের ২০টি নতুন ছায়াছবি এই প্রদশর্নীতে দেখানো হয়েছে । এগুলোর মধ্যে আছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ইহুদীদের জীবন সম্পর্কিত আমেরিকান ছবি ' এরিয়ান দম্পতি ' , জার্মানীর বিখ্যাত কবি শিলারের জীবনীর ভিত্তিতে রচিত জার্মান ছবি ' স্ছিলার ' আর দক্ষিণ কোরিয়ার ছবি ' অসোয়াম ' ইত্যাদি ।

    চীনের চলচ্চিত্র ব্রত এক শ' বছর অতিক্রম করেছে । এই এক শ' বছরে বেশ কয়েকবার উঠা-নামা হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের চলচ্চিত্র ব্রতের প্রসার হচ্ছে । ছায়াছবির সংখ্যা ও দর্শকদের সংখ্যা দুটিই বেড়েছে । আশা করি ভবিষ্যতে চীনের চলচ্চিত্র ব্রতের আরো উন্নতি হবে ।