গত মার্চ মাসের ২৮ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত পেইচিংয়ে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বুদ্ধিদীপ্ত দূষণমুক্ত ও শক্তি-সাশ্রয়ী স্থাপত্য এবং নতুন প্রযুক্তি ও পণ্য মেলা আয়োজিত হয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে কিছু ব্যবহারিক তথ্য সংগ্রহ করে আজকের প্রতিবেদন লিখেছি।
২০০৫ সালে চীনের অর্থনীতির বৃদ্ধি হার ছিলো ৯.৯ শতাংশ। এই সূচক উন্নত দেশগুলোকে অবাক করে। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে চীন পরিবেশ ও শক্তিসম্পদের অভাবের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সদ্য প্রণীত প্রকাশিত একাদশ পাঁচ-সালা কর্মসূচীতে চীন সরকার "২০১০ সালে ডলার প্রতি জি.ডি.পি'র জন্যে শক্তিসম্পদের ব্যয় ২০ শতাংশ কমানো এবং শক্তিসম্পদ ও ভূমি সাশ্রয়ী স্থাপত্য নির্মাণ করা"র লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্চ মাসের ২৮ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত পেইচিংয়ে এই দ্বিতীয় মেলা আয়োজিত হয়েছে। এই মেলা ফোরাম ও প্রদর্শনী দুই ভাগে বিভক্ত। ব্রিটেন,যুক্তরাষ্ট্র,জাপান, ভারত, ফ্রান্স ও নেদার্ল্যান্ড ইত্যাদি দেশ এবং চীনের ৬০জনেরও বেশী বিশেষজ্ঞ ফোরামে ভাষণ দিয়েছেন। এবং দেশীবিদেশী সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের কয়েক'শ গবেষণাগার ও বিখ্যাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে তাদের সবচেয়ে নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা দেখিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শক্তিসম্পদ-সাশ্রয়ী স্থাপত্য নির্মাণে চীন বিরাট প্রয়াস চালিয়েছে। চীনের পূর্ব-পশ্চিম নিয়ন্ত্রণ কোম্পানির ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থেকে চীনের বৃদ্ধিদীপ্ত স্থাপত্য নির্মান ক্ষেত্রের সাফল্য দেখা যায়। তার নিরাপত্তা রক্ষা, আই.ডি. আইডেন্টিফাই ও দূর-নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ব্যবস্থা আছে। মাদাম জাও সংবাদদাতাকে বলেছেন:
"হাউসিং ইস্টেটে একটি কার্ড রিডার বসানো আছে। তার মাধ্যমে ছবি ও শব্দ যুক্ত করা যায়। আপনি বাড়ি থেকে বের হলে এর মাধ্যমে সকল ব্যবস্থা সতর্ক অবস্থায় রেখে দিতে পারেন। কোনো ঘটনা ঘটলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে জানাবে। তার মাধ্যমে আপনি টি.ভি, এ.সি, বাতি ও পর্দা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।"
সংবাদদাতা চীনের গবেষণায় একটি নতুন উদ্ভাবিত জিনিস দেখেছে। তার ওজন হালকা, এবং গরম-নিরোধক, তাপ-রক্ষা ও ভূকম্পন-বিরোধী গুণাবলী আছে। তার কাঁচামাল কিন্তু খুব সহজেই পাওয়া যায়, যেমন ভূট্টার খড়কুটা ইত্যাদি। মাদাম লিউ সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন:
"আমাদের পণ্য গুদামের ভেতরের ক্লিপবোর্ড ও বাইরের ক্লিপবোর্ড দু'টিই আছে। তা বর্তমানকালের সবুজ ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তা দিয়ে ভবন নির্মাণের অনেক সময় বাঁচানো যায় এবং ভূমিও সাশ্রয় করা যায়।" এই রকম নির্মাণের উপাদান চীনের কিছু গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়েছে। তা শুধু ভূমি সাশ্রয় করা যাবে তা নয়, তাতে নির্মানের খরচও কম।
চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশও তাদের অগ্রসর প্রযুক্তি ও পণ্য প্রদর্শন করেছে। ফ্রান্সের এই.ই.আর.ই.সি.ও কোম্পানির মিস লি সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, তাদের দ্রব্যের প্রধান অংশ হলো একটি আর্দ্রতা সেন্সার। তা ঘরের আর্দ্রতা অনুযায়ী আবহাওয়া পরিবর্তনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মিস লি বলেছেন:
"তা এ.সি'র মতো ঘরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে না। তা মানুষের নিঃশ্বাসের মতো বাইরের বায়ু আকর্ষণ করে। এমন জায়গায় থাকলে মানুষের খুব আরাম লাগবে।"
জাপানের ওয়ই.কে.কে কোম্পানি তাদের দরজা ও জানালা নির্মাণ ক্ষেত্রের অগ্রসর প্রযুক্তি ও ধারণা প্রদর্শন করেছে। শক্তিসম্পদের সাশ্রয়,রিসাইকেল ও পরিবেশ-সহায়ক গুণাবলী হলো এই কোম্পানির প্রধান বৈশিষ্ট্য। ওয়াই.কে.কে কোম্পানির উপ-পরিচালক শুইচি কাম্বা সংবাদদাতাকে বলেছেন:
"ভবনের আয়ু শেষ হওয়ার পর আমদের তা ভেঙ্গে করে নতুন নির্মান করতে হবে। কিন্তু ভবনের ধ্বংসাবশেষ কিভাবে মোকাবেলা করা যায়, তা জাপানের একটি গুরুতর সমস্যা হয়েছে। চীনে এখন অনেক ভবনের নির্মান কাজ চলছে। যদি রিসাইকেলের কথা বিবেচনা না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে তা বড় সমস্যা হতে পারে। চীনের এ ক্ষেত্রে বেশী মনোযোগ রাখা উচিত।"
এ ক্ষেত্রে ব্রেটেনের সাফল্য অনেক বেশী। তারা দশাধিক প্রদর্শনী স্টল স্থাপন করেছে। এন্টিগার কোম্পানির সি.ই.ও পাট্রিক ব্রুস সংবাদদাতাকে বলেছেন:
"আমি খুব খুশি যে চীন সরকার এই পরিবেশ দূষনের সমস্যা চিহ্নিত করেছে এবং সক্রিয় মনোভাব নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করছে। চীন নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা গ্রহণে সমর্থ । আমি বিশ্বাস করি এই ক্ষেত্রে চীনের ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল।"
প্রাচীণকাল থেকে চীনারা মানুষ ও প্রকৃতির সমন্বয় থাকার ধারণা পোষণ করে এসেছে। এই ধারণা আজকের টেকসই উন্নয়নে পরিণত হয়েছে। প্রথম সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে "পেইচিং বিবৃতি" প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে: আমাদের শুধু একটাই পৃথিবী আছে। তাকে মর্যাদা দেয়া, সুরক্ষা করা ও মূল্যায়ন করা হলো সমস্ত মানব জাতির দায়িত্ব। বিশ্বের নির্মান মহলের এই দায়িত্ব পালন করা উচিত।" আসলে তা শুধু নির্মান মহলের দায়িত্ব নয়, তা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব।
|