তিং কোন লিয়াং চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির একজন প্রবীণ সদস্য । তিনি জাপানী আক্রমণ বিরোধী যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং একটি লড়াইতে শত্রু বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন । তিনি শিবিরে আটকা পড়েছিলেন । নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হবার প্রথম দিকে যুক্ত রাষ্ট্রের আক্রমন প্রতিরোধ আর উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করার জন্য তিনি উত্তর কোরিয়ার রণক্ষেত্রে গিয়েছিলেন । ১৯৬৪ সালে কাজের প্রয়োজনেতিনি চীনা গণ মুক্তি বাহিনী থেকে চীনের বিজ্ঞান একাডেমীর পূর্ব চীন শাখায় এসেছিলেন । তার পর তিনি চীনের বিজ্ঞান একাডেমীর শাংহাই শাখার কমিউনিষ্ট পার্টির কমিটির সম্পাদক , শাংহাই বিজ্ঞান একাডেমীর উপ-প্রধান পদে নিযুক্ত হন । ওখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষনার কাজ পরিচালনা করেছিলেন । তিং কোন লিয়াংয়ের বয়স আশিরও বেশী । তিনি এখনো সুস্থভাবেবেঁচে আছেন । তিনি মন -মনা এবং হাসি-আনন্দে ভরপুর , অন্যদের সংগে কথাবার্তা বলতে পছন্দ করেন । তার সুস্বাস্থ্যের অভিজ্ঞতা প্রসংগে তিনি বলেছেন , তিনি নিজের শরীরের অবস্থা অনুসারে সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষা বিষয়ক একটি পূর্ণাংগ পদ্ধতি অনুসন্ধান করেছেন ।
বৃদ্ধ তিং বলেছেন , স্বাস্থ্য হতে চাইলে প্রতি দিন শরীর চর্চায় অবিচল থাকা উচিত । তিনি প্রতি দিন ভোরে ৩০ মিনিট ছি কুন , শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ উন্নত করার এক ধরনের শরীর চর্চা করেন । এই পদ্ধতিতে শরীরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বাড়ানো যায় । ফলে রক্ত প্রবাহের কাজও উন্নত করা যাবে। ছি কুং চর্চা শেষে তিনি ২০ মিনিট মাসাজ করেন । অর্থাত্ আকুপাংচার পয়েন্টের উপরে মাসাজ করা হয় । প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি ২০ মিনিট থাই জি ছুয়ান , অর্থাত্ চাইনিজ বক্সিংও চর্চা করেন । তাতে শরীরের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা বাড়ানো যায় ।
স্বাস্থ সহায়ক ওষুধপত্র সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বৃদ্ধ তিং বলেছেন , তিনি কোনো মতেই অন্ধভাবে এক বা কয়েক ধরনের ওষুধ খান না । তিনি যে কি ধরনের ওষুধ আর কত পরিমানে ওষুধ খাবেন , তা শরীরের বাস্তব অবস্থার উপর নির্ভর করে । যেমন তিনি দীর্ঘকাল ধরে কাজে ব্যস্ত ছিলেন । এক সময় তার নিদ্রার অবস্থা ভাল হয় নি । পরে একটু নিদ্রা- সহায়ক ওষুধ খাওয়ার পর তার অবস্থা উন্নত হয়েছে ।
তা ছাড়া বৃদ্ধ তিং মনে করেন যে , মস্তিষ্ক আর বাড়ির উপযুক্ত কাজ প্রবীণদের স্বাস্থ্যের জন্য অনুকুল । তিনি নিরন্তর লেখাপড়া করেন এবং বহু চিকিত্সা গ্রন্থ পড়েছেন ।
গল্প করাও বৃদ্ধ তিংয়ের সুস্বাস্থ্যের একটি সুষ্ঠু পদ্ধতি । তিনি প্রতিদিন বন্ধু-বান্ধবের সংগে কথাবার্তা বলেন । এতে যেমন মনোবল বাড়ানো যায় এবং অন্যদের সংগে বন্ধুত্বও ত্বরান্বিত করা যায় ।
এখন অন্যদের সংগে আদান প্রদানে নমনীয়তা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
মানুষ বুড়ো হলে সম্ভবতঃ অতীতের প্রীতিকর ও অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেন । মস্তিষ্কে অপ্রীতিকর ঘটনার স্মৃতি ভেসে উঠলে মন খারাপ হতে পারে এবং এর জন্য মানসিক ক্ষতি হবে । এর মধ্যে দুটো কারণ আছে । এক, সংযম আর আত্মনিয়ন্ত্রনের ক্ষমতার অভাবের কারণে মানুষ হতাশার সাগরে ডুবে যায় । দুই, অস্মৃতন্যদের ভুল বুঝাবুঝির কারণে মানুষের গুরুতর শারীরিক ও দৈহিক ক্ষতি হয়েছে । এই অনুভূতি নিয়ন্ত্রন করা না হলে বিদ্বেষ আর প্রতিশোধের ভাবনা হতে পারে ।
এই দুই ধরনের অবস্থা কাটিয়ে উঠার সবচেয়ে ভাল উপায় নমনীয়তা অবলম্বন করা । প্রথমতঃ নিজেকে সংযত হতে হবে আর অন্যদের প্রতি নমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে । মানুষ হিসেবে সাময়িক ভুলত্রুটি হওয়া স্বাভাবিক । অন্যদের ভুল বুঝাবুঝি আর আঘাতের মোকাবিলায় সংযম অবলম্বন একটি কার্যকর উপায় । সংযম আর নমনীয়তা অবলম্বন করার ফলে নিজের জন্য শান্তনা আর অন্যদের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে ।
অন্যদের ভুল বুঝাবুঝি আর আঘাত হানার শিকার হওয়ার কবল থেকে রেহাই পাওয়া আর অন্যদের সংগে বন্ধুত্ব পুনরুদ্ধার করা একটি সহজ ব্যাপার নয় । এই প্রক্রিয়ায় মানসিক দিক থেকে বিরাট মূল্য বহন করা দরকার । এ ক্ষেত্রেও প্রবীণদের সংযম আর নমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। এটা যেমন অন্যদের জন্য মায়া-মমতা বয়ে আনবে , তেমনি নিজের স্বাস্থ্যের অনুকুল হবে ।
|