v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-07 19:20:37    
১.২ মার্কিন ডলারের সম্পত্তি

cri
    ২০০৮ সালে চীনে মোটামুটিভাবে গ্রামীণ সহযোগিতার চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু হবে । সম্প্রতি চীনের উপ অর্থ মন্ত্রী চু চি কাং সমাজতান্ত্রিক নতুন গ্রামাঞ্চল বিনির্মাণ সম্পর্কিত একটি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন । বর্তমানে চীনে মোট ৯০ কোটি গ্রামীণ লোকসংখ্যা আছে । সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে , ২০০৩ সাল থেকে ৬' বছরের মধ্যে সমগ্র দেশে গ্রামীণ সহযোগিতার চিকিত্সা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে । যারা স্বেচ্ছায় এই নিশ্চয়তা ব্যবস্থায় যোগ দিতে চান , তাদের বছরে মাথাপিছু গড়পড়তা ১০ ইউয়ান অর্থাত্ ১.২ মার্কিন ডলারের চাঁদা জমা দিতে হয় । ফলে বড় অংকের চিকিত্সা ফি বা চিকিত্সা গ্রহণ করতে হাসপাতালে থাকার জন্য বিপুল খরচ প্রয়োজন হলে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকী পাওয়া যাবে ।

    চীন সরকারের উদ্যোগে নতুন গ্রামীণ সহযোগিতার চিকিত্সা ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হচ্ছে । কৃষকদের স্বেচ্ছায় কৃষকদের চিকিত্সার নিশ্চয়তা সরবরাহ করার জন্য এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে । এই ব্যবস্থার মধ্যে তিন ধরনের সহযোগিতার সম্পর্ক অন্তর্ভুক্ত । অর্থাত্ কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যেকার সহযোগিতা; সরকার ও কৃষকদের মধ্যেকার সহযোগিতা আর কৃষক ও কৃষকদের মধ্যেকার সহযোগিতা । কৃষকদের মধ্যেকার পারস্পরিক সাহায্য ও ত্রান-সাহায্য আর কৃষক , গ্রাম ও সরকারের বহুপাক্ষিক অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে রোগে আক্রান্ত হবার দরুণ ডেকে-আনা ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।

    এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য দেশব্যাপী পরীক্ষামূলক কাজকর্ম ২০০৩ সালে শুরু হয় । পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশ অন্যতম প্রদেশ আ অঞ্চল , যেখানে সর্বপ্রথমে নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সার ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক কাজ চালানো হয়েছে ।

    ২০০৫ সালের শেষ নাগাদ আনহুই প্রদেশের ১৬টি জেলা ও শহরে ৬১ লক্ষ৭০ হাজার কৃষক নতুন গ্রামীণ সহযোগিতার চিকিত্সা ব্যবস্থায় যোগ দিয়েছেন । এই সংখ্যা ডেনমার্কের মোট লোকসংখ্যার সমান । এই ব্যবস্থার প্রতি কৃষকদের সমর্থন আর সরকারের কার্যক্রম অনুসারে ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ আরো ১৪টি জেলা আর শহর এই নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সার নিশ্চয়তা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হবে ।

    সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী , আনহুই প্রদেশের কৃষকরা সত্যি উপকৃত হয়েছেন । ২০০৫ সালে আনহুই প্রদেশে কৃষক , স্থানীয় সরকার আর কেন্দ্রীয় সরকার এক তৃতীয়াংশ করে খরচ জমা দেয়ার পদ্ধতিতে মোট ১৮কোটি ইউয়ান কৃষকদের চিকিত্সা নিশ্চয়তার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে । একই বছর এই প্রদেশের ৬লক্ষ ৮০ হাজার কৃষক চিকিত্সা গ্রহণ করেছেন । ফলে স্থানীয় সরকার আর কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের ১২ কোটি ইউয়ানের চিকিত্সা ফি বহন করেছে ।

    এই ব্যবস্থা যে এত দ্রুত প্রসারিত হয়েছে , তার মূলে রয়েছে কৃষকদের সমর্থন । আগে কৃষকরা অসুস্থ হলে বড় শহরের বড় হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ করতে পছন্দ করতেন , অথবা কেউ কেউ নিকটবর্তী থানার ক্লিনিকে চিকিত্সা গ্রহণ করতেন । তবু জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে কৃষক রোগী এত বেশি ছিলেন না ।

    আনহুই প্রদেশে নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সার ব্যবস্থা চালু হবার পর থানা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে । জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধি স্যু ক্ লিয়ান বলেছেন , একই অবস্থায় , বিশেষ করে কিছু সরকারী ভর্তুকী ভোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষকরা বড় শহরের বড় হাসপাতালে যেতে পছন্দ করেন না । কারণ খাওয়া , থাকা আর আসা যাওয়ার ফিসহ বড় শহরের বড় হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ করার জন্য খরচ বেশি বৃদ্ধি পাবে । কিন্তু বাসার নিকটবর্তী স্থানে চিকিত্সা গ্রহণ করলে কম খরচ হবে ।

    তা ছাড়া যদি বিপুল সংখ্যক কৃষকদের চিকিত্সা সমস্যা স্থানীয় পর্যায়ের হাসপাতালে নিষ্পত্তি করা যায় , তাহলে বড় শহরের বড় হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণের সমস্যাও দূর হয়ে যাবে । আনহুই প্রদেশে নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক মূল্যায়ন আর সমর্থন জানিয়েছেন । এতে কৃষক রোগীদের চিকিত্সা গ্রহণের নিশ্চয়তা জোরদার হয়েছে । এই ব্যবস্থায় কৃষকদের সক্রিয় যোগদান আর স্থানীয় হাসপাতালের পরিবর্তন থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে , নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সার ব্যবস্থা খুবই ভাল আর কার্যকর ।

    আনহুই প্রদেশে নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সার ব্যবস্থা চালু হবার পরীক্ষামূলক কাজকর্ম প্রসংগে স্যু ক্ লিয়ান বলেছেন , এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সহায়তা করার জন্য অন্য কিছু সংশ্লিষ্ট সমস্যাও সমাধান করতে হবে । কারণ এটা নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থার সাফল্যমন্ডিত প্রবর্তনের সংগে জড়িত । যেমন স্থানীয় চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের বুনিয়াদি ব্যবস্থা পিছিয়ে আছে , সরঞ্জাম অনুন্নত আর হাসপাতালের বাড়িঘর পুরানো ইত্যাদি । তা ছাড়া বহু অঞ্চলের হাসপাতালে কোনো ব্যাচলর্স ডিগ্রি ডাক্তারও পাওয়া যেতো না । এই ক্ষেত্রে আনহুই প্রাদেশিক সরকার পরিপূর্ণভাবে বিবেচনা করেছে এবং নিম্ন স্তরের চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের শর্ত উন্নত করার কাজ শুরু করেছে ।

    ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আনহুই প্রদেশে স্থানীয় আর কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থনে মোট ২১ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করে ৫ শো থানা পর্যায়ের ক্লিনিকের ব্যবস্থা ও বাড়িঘর সংস্কার করা হয়েছে । চিকিত্সকদের অভাব দূর করার জন্য প্রাদেশিক সরকার একটি বিশেষ নীতি প্রণয়ন করেছে । এই নীতি অনুসারে আঞ্চলিক সরকারের উদ্যোগে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি দেয়ার জন্য গ্রামাঞ্চল থেকে অপেক্ষকৃত ছাত্রকে বাছাই করা হয় এবং এ সব ছাত্রকে স্নাতক হবার পর গ্রামীণ ক্লিনিকে ফিরে যেতে হবে ।

    চীন একটি বিরাট দেশ । বিশেষ করে কৃষকদের সংখ্যা ৯০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে । নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা আর সম্প্রসারণ নিঃসন্দেহে একটি বিশাল প্রকল্প । সুতরাং ২০০৬ সালে এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকার আরো ৪.৭৩ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করবে । ২০০৫ সালের তুলনায় তা ৭ গুণ বেশি হবে । যে সব অঞ্চলে নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক কাজকর্ম চলছে , সে সব অঞ্চলের প্রতি সরকারী ভর্তুকী দেয়া হবে । সরকারের সমর্থন আর প্রবল আর্থিক সাহায্যে চীনের কৃষকদের চিকিত্সা গ্রহণের চিন্তা দূর হয়ে যাবে ।