নিশ্চয় সবারই মনে আছে যে , ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত মহা সাগরের সুনামিতে জানমালের অপরিমেয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ।এই সুনামীতে হাজার হাজার লোক মারা যান , লাখ লাখ লোক উদ্বাস্তু হন , হাজার হাজার লোক নিখোঁজ হন এবং হাজার হাজার শিশু বাবামা ও আত্মীয়স্বজনকে হারায় । এই সুনামীতে নিজের এবং অন্যান্যদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন এমন বহু বীরও সনাক্ত হয়েছে । বৃটেনের ১০ বছর বয়সী মেয়ে তিলি স্মিথ এই বীরদের মধ্যে একজন ।
২০০৪ সালের ডিসেম্বর ভারত মহা সাগরে যখন সুনামী হয় তখন মাত্র ১০ বছর বয়সের বৃটিশ মেয়ে তিলি স্মিথ বাবামার সঙ্গে থাইল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছিল । সে জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে নিজের জানা জ্ঞান দিয়ে অতিদ্রুতভাবে জলোচ্ছ্বাসের লক্ষণ উপলব্ধি করেছে এবং এজন্যে তার মতো থাইল্যান্ডের সৈকতে ছুটি কাটানো শতাধিক লোকের জীবন রক্ষা পেয়েছে ।
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সকালে থাইল্যান্ডের ফুকে দ্বীপে ছুটি কাটানো স্মিথ পরিবার ম্যারিওট হোটেলের কাছে সৈকতে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তিলি স্মরণ করে বলে,হঠাত আমি লক্ষ্য করেছি, সাগর থেকে বুদবুদ উঠছিল, চুল্লির উপরে রাখা হাড়ি ফুটন্ত জলের বুদবুদের মতো শিস শিস শব্দ হচ্ছিল । সাগরের জল তীব্রবেগে উঠে আসছে ,কিন্তু নেমে যাচ্ছে না। জল অনবরতভাবে হোটেলের দিকে ওঠে যায় । তিলি বুঝেছে , এটা জলোচ্ছ্বাসের পূর্বভাষ। কারণ দুসপ্তাহ আগে শিক্ষক তাদের জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে এক ভিডিও দেখিয়েছেন ।
তিলি মাকে বলল ,মা,এখানে কিছু সমস্যা হচ্ছে । আমি জানি জলোচ্ছ্বাস হতে যাচ্ছে । প্রথমে মা তিলির কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করেন না । তিনি মনে করলেন, এটা স্বাভাবিক লক্ষণ । তিলির হিস্টিরিয়া হয়েছে ,বাবা কোলিন স্মিথ বললেন । তিনি হোটেলে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । যখন মিঃ স্মিথ তিলির হুঁশিয়ারী ম্যারিওট হোটেলের কর্মকর্তাদের জানাচ্ছিলেন তখন তিলি সৈকতের দিকে ছুটে গেলো, সেসময়ে সৈকতে প্রায় ১০০জন লোক ছিলেন । সে সেখানে অবস্থানরত হোটেলের একজন বাবুর্চিকে জলোচ্ছ্বাসের কথা বলল । এই বাবুর্চি জলোচ্ছ্বাস শব্দটির অর্থ বুঝেছেন । কারণ শব্দটির উত্স জাপানী ভাষা । কিন্তু তিনি কখনো জলোচ্ছ্বাস দেখেননি । জাপানে জন্মগ্রহণ করা বাবুর্চিটি ও হোটেলের একজন রক্ষী আশেপাশের লোকদের জলোচ্ছ্বাসের হুঁশিয়ারী জানালেন । তাদের হুঁশিয়ারী শুনে সৈকতের লোকেরা শীগ্গিরই নিরাপদ অঞ্চলে সরে গেলেন । মাত্র কয়েক মিনিট পর আকাশ চুম্বি ঢেউ ভয়ংকরভাবে পৌঁছলো । মুহুর্তে দৈত্যকায় ঢেউয়ের মধ্যে সৈকত অদৃশ্য হল । উচু জায়গায় সরে আসা লোকেরা এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হলেন ।এই কারণে ম্যারিওট হোটেলের নিকটবর্তী এই সৈকত এলাকা ফুকে দ্বীপের অল্প কয়েকটি স্থানের একটিতে পরিণত হয়,যে স্থানে জলোচ্ছ্বাসের সময়ে কেউই নিহত বা গুরুতরভাবে আহত হননি ।
বৃটেনের ১০ বছর বয়সী মেয়ে তিলি স্মিথের মেধা ও জ্ঞানের কল্যাণে শতাধিক পর্যটক ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস থেকে প্রাণে রক্ষা পেলেন । তার বীরত্বপূর্ণ কাজের পুরস্কার হিসেবে তিলি আমন্ত্রিত হয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তর সফর করেছে এবং জাতিসংঘ জলোচ্ছ্বাস ত্রান বিষয়ক বিশেষদূত,সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছে ।
দুজন শ্রোতাবন্ধুর চিঠি
বাংলাদেশের জয়পুরহাটের চায়না লিসনার্স ক্লাবের সভাপতি এম এম পারভেজ তাঁর চিঠিতে লিখেছেন ,২০০৫ সালের ২৫ নভেম্বর মা ও তোতলা ছেলে শিরোনামে যে আলোচনা কন্যা জায়া জননী অনুষ্ঠানে করা হয়েচ্ছিল, তা আমার খুব ভাললেগেছে । মায়ের উত্সাহ এবং অন্যদের সহযোগিতায় ছেলের তোতলামো ভাল হয়েছে। তাই কাউকে তিরস্কার না করে উত্সাহ দেয়া আমাদের উচিত ।
এই অনুষ্ঠান যখন শেষ হয়ে গেলো তখন আমার মায়ের কথা মনে পড়লো । আমি মাঝারি গোছের ছাত্র, লেখা পড়ায় মন বসাতে পারি না । এই বিষয় নিয়ে মার সঙ্গে আমার অনেক আলাপ হয়েছে । মার অফুরন্ত উত্সাহে এ লেখাপড়ায় মন বসাই এবং অনার্স পরীক্ষা দেই । কষ্টে ক্লাস পেয়েছি । মার অনুপ্রেরণা ও অন্যদের সহযোগিতা না পেলে এমন রেজাল্ট করতে পারতাম না । ধন্যবাদ জানাই আমার মাকে, ধন্যবাদ জানাই বন্ধুদেরকে , ধন্যবাদ আপনাকে ।
বাংলাদেশের ফরিদপুরের ওয়ার্ল্ড রেডিও লিসনার্স ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারী এম এম গোলাম সারোয়ার তাঁর চিঠিতে লিখেছেন , আমি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একজন পুরুষ শ্রোতা । আমি পুরুষ শ্রোতা হলেও মহিলা শ্রোতাদের প্রতি সবসময়ই সহানুভূতিশীল । কারণ পুরুষের চেয়ে মহিলারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমস্বাধীন । ইচ্ছা থাকলেও পুরুষদের মত অতটা স্বাধীন নয় । আমরা পুরুষ শ্রোতারা যতটা সহজে সি আর আই-এর বাংলা অনুষ্ঠান শুনি , কিন্তু মহিলা শ্রোতারা এতটা সহজে সি আর আই শুনতে পারেন না । তার জন্যে আমার খুব অনুতাপ হয় । কেননা,মহিলা শ্রোতারা সংসারের প্রচুর কাজ করে ,বাচ্চাদের দেখাশুনা ,রান্না-বান্না,হাঁসমুরগী এমন কি গবাদি পশুও দেখাশুনা করে । এত ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও সি আর আই-এর বাংলা অনুষ্ঠান শোনে এবং চিঠি লেখে । পুরুষদের মত মহিলারা শখের কাজ করতে পারে না এবং ইচ্ছা হলেই এক জায়গা হতে অন্য জায়গা যেতে পারে না । এটা মেয়েদের এক প্রকার পরা ধিনতা বলে মনে হয় ।
তার পরেও মহিলা শ্রোতাদের নরম হাতে লেখা চিঠি যখন সি আর আই প্রাপ্তীস্বীকার করে এবং চিঠির সারাংশ পাঠ করা হয় আমার তখন থেকে খুব ভাল লাগে । ওরা খুব দরদ ভরা অন্তর দিয়ে সি আর আই-তে চিঠি লিখে মনের কষ্টের আর স্বাধীনতাহীনতার কথা লিখে থাকে । শুনে খুব সহানুভূতি জাগে তাদের প্রতি ।
এম এম গোলাম সারোয়ার তাঁর আর এক চিঠিতে লিখেছেন , ২০০৫ সালের ২৩ সেপ্টম্বর আপনার পরিবেশিত এইডস সম্পর্কিত প্রতিবেদন আমার এবং আপনার কয়েকজন মহিলা ভক্ত শ্রোতারও খুব ভাল লেগেছিল । আমি আপনার পরিবেশনাটি রেকর্ড করে রেখেছি । বারবার নিজে শুনি এবং অন্যদেরকেও শুনাই । এইডস কি ? এখনো আমাদের গ্রামের লোকেরা বোঝে না । আপনার প্রতিবেদনটা শুনে ইচ্ছা হলো আমার গ্রামের যুবকদের ডেকে এইডস সম্পর্কে জ্ঞান দান করি এবং অবৈধ যৌনাচার থেকে সাবধান করি ।
অবশেষে তাই করলাম । আপনার পরিবেশনা বাজিয়ে শুনানোর পর আমি এ সম্পর্কে সচেতনা বোধ সৃষ্টির উদ্দেশে বিশদ আলোচনা করলাম । উপস্থিত সবাই আমার এইডস সম্পর্কিত আলোচনা খুব পছন্দ করেছে । আর আপনার আলোচনা তাদের কাছে অনেক অনেক উপকারী । এইডস বিষয়ক প্রতিবেদন এত গুরুত্ব পেয়েছিল যা কল্পনার বাইরে । কারণ এইডস একটি ঘাতক ব্যাধি । যার কোনো চিকিত্সা এখন নেই । মৃত্যুই যার শেষ পরিনতি ।
|