v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-07 14:16:07    
হক সাহেবের কথাগুলো

cri

    আমি আর আমার স্ত্রী গত ২১শে ডিসেম্বর পিইচিং পৌঁছেছি । বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ত্রিশত্তম বার্ষিকী উদযাপনে বিভিন্ন কমর্ক্ষেত্রে যে সব কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল, তার একটা অংশ হিসেবে চীনের আন্তর্জাতিক বেতার-- সি আর আইয়ের বাংলা বিভাগ একজন প্রাক্তন বিশেষজ্ঞকে এবং শ্রোতাদের একজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ করে পেইচিং নিয়ে এসেছিল । সেই একজন প্রাক্তন বিশেজ্ঞ হিসেবে আমাকে নির্বাচন করে পেইচিংয়ে আমার পুরনো বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে আমার দেখাসাক্ষাতের ও প্রীতি –বিনিময়ের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি চীনের আন্তর্জাতিক বেতার --সি আর আই কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ ।

এবং এই প্রথম নয় । এর আগে , ২০০১ সালে , বহিবির্শ্বের উদ্দেশ্যে চীনের বেতার সম্প্রচারের ষাট বছর পূর্তি বা হীরক জয়ন্তী উপলক্ষ্যেও বেতার কতৃর্পক্ষ আমাকে ও আমার স্ত্রীকে পেইচিং নিয়ে এসেছিলেন । আমার মতে একজন নেপথ্যচারী নীরল কমীর পক্ষে এ এক বিরল সম্মান ।

  

  প্রিয় শ্রোতারা অবশ্যই জানেন , চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে চীনের মানুষদের জীবনযাত্রার ধরন বদলে যাচ্ছে , বাড়িঘর রাস্তাঘাটের চেহারাও এতো বেশি এবং এতো দ্রুত বদলে যাচ্ছে যে অল্প কয়েক বছর আগে পেইচিং যাদের পরিচিত শহর ছিল তারাও এখন পেইচিংকে চিনতে পারবেন না। ১৯৯৪ সালে চীনের আন্তর্জাতিক বেতার সি আর আইর চাকরি শেষে আমি দেশে ফিরে যাওয়ার সময় পেইচিং শহরের এক রুপ দেখে গিয়েছিলাম, ২০০১ সালে আবার এসে একেবারে ধাঁধায় পড়েছিলাম—পরিবর্তন এতোই বেশি । তারপর এই ২০০৫ সালের শেষ দিকে আবার পেইচিং-এ এসে আমার হতবাক অবস্থা । পেইচিং শহর আয়তনে আরো বিশাল হয়েছে এবং উপরের দিকেও আরো মাথা তুলেছে হাজার হাজার ইমারত –প্রত্যেকটাই অতিকায় পাহাড়ের মতো । পথ চলার সময়ে মনে হতে পারে মাইলের পর মাইল পাহাড়ের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে পথ করে চলেছি । গাছপালাও অনেক বেড়েছে , তবে গাছপালার উচুঁ হয়ে ওঠে নিজস্ব নিয়মে ,তা তো জোর করে বাড়ানো যায় না ।

 

 

   বস্তুত , চীনের যে কোনো বড় শহরে এখন ইউরোপের যে কোনো বড় শহরের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় বহুতল ইমারত আছে । এ সবের অর্থ বহুগুন বেশি থাকার জায়গা , বহুগুন বেশি অফিস , বহুগুন বেশি দোকান বাজার , বহুগুন বেশি পন্যসামগ্রীর কেনাবেচা ।

   

চীন বিপ্লবের পরই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এই বিশাল দেশের সমস্ত মানুষের অন্ন-বস্ত্র –বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল । কিন্তু তখন অনেক পরিবারেই এক কামরা বা দুকামরার মধ্যে থাকতে হত , এখন তাদের বেশির ভাগই বড় বড় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন , অনেকই ফ্ল্যাটের মালিক ।

    এক সময়ে পেইচিং শহরকে বলা হত ' সাইকেল-নগরী ' । সকাল হতেই রাস্তায় দেখা যেত , হাকার হাজার নয় , লক্ষ লক্ষ সাইকেল । এখন সাইকেল কমই চোখে পড়ে , দেখা যায় মোটর গাড়ির একটানা স্রোত । আমাদের দেশের মতো শুধু টয়োটা বা মারুতি নয় , পৃথিবীর প্রায় সবদেশের গাড়িই এখানে সহাবস্থান করে শোভা আর উত্কর্ষের প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে ।

    মাটির তলার রেলপথের অনেক বেশি প্রসার হয়েছে । পেইচিং শহরের প্রতিটি এলাকা তো বটেই , শহরতলিগুলোতেও এখন সহজেই মাটির তলার রেলগাড়িতে যাওয়া যায় ।

    রেস্টরাঁগুলোর বৈচিত্র্য এবং সংখ্যা বহুগুন বেড়েছে । আগে পেইচিংয়ের বেশির ভাগ লোক যার যার কর্মস্থলের ক্যান্টিনে দুবেলার খাওয়া সারতেন , এখন রসনাতৃপ্তির বৈচিত্র্যের জন্য তারা সপরিবারে দামি রেস্টরাঁগুলোতে ভিড় করে থাকেন ।

    অভিবন রেস্টরাঁগুলোর মধ্যে চারটে আছে পেইচিংয়ের চার এলাকার চারটে মিনারের চূড়ায় । এগুলো অত্যন্ত মন্থর গতিতে ঘুরে চলে । যারা বসে পানাহার করেন তারা গতিটা অনুভব করতে পারেন না , কিন্তু অনেক নিচে দিগন্ত পর্যন্ত বিছিয়ে থাকা শহরের প্রতিটি দিকের দৃশ্য ক্রমাগত বদলে যেতে থাকে । এবার নতুন যে ঘূন্যর্মান রেস্টরাঁয় আমাদের নৈশভোজনের অভিজ্ঞতা হল সেটা পেইচিং শহরের সবচেয়ে উচুঁ টাওয়ার , চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি টাওয়া , ২২১ মিটার উচুঁ । এক-একবারের আবর্তনে এটি সময় নেয় একঘন্টা দশ মিনিট ।

   

পেইচিং এখন একটি পুরাদস্তুর আধুনিক শহরের রুপ নিয়েছে ঠিকই , কিন্তু আসলে এটা একটা ইতিহাস-বিধৃত প্রাচীন শহরও বটে । পৃথিবির সপ্ত আশ্চর্যের অন্যতম, চীনের মহাপ্রাচীর , স্বগর্মন্দির , রাজপ্রাসাদ , গ্রীষ্মপ্রাসাদ ইত্যাদিসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক কীর্তি পেইচিংয়ের উপকন্ঠে এবং মূল শহরে সযত্নে রক্ষা করা হচ্ছে । এ ছাড়া আছে অনেকগুলো যাদুঘর । প্রাকৃতিক ইতিহাসের যাদুঘরে যেমন আছে ডাইনোসরের আর ম্যামথের আস্ত কয়েকটি কঙ্কাল, চীনের ইতিহাস-বিষয়ক যাদুঘরে এবং চীনের গণবিপ্লবের সামরিক যাদুঘরে তেমনিই গৌরবময় অতীতকে বতর্মানকালের দৃষ্টির সামনে মূর্ত করে রেখেছে অসংখ্য স্মারকবস্তু । যাদুঘরের সংখ্যা এবং বৈচিত্র্য এতো বেশি যে পেইচিং বেতারে আমার ষোলো বছরের কর্মজীবনেও আমি সবগুলো দেখে উঠতে পারি নি । এখন আবার ' ক্যাপিটাল মিউজিয়াম ' নামে একটি খুবই বড় যাদুঘর তৈরী হয়েছে । আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এখনও হয় নি , কিন্তু বিশেষ অনুমতি নিয়ে কিছু কিছু আগ্রহী দশর্ক নতুন যাতুঘরটিতে যাওয়া আসা করছেন। এই যাদুঘরের মধ্যে আমি প্রাচিন চীনের একটি নদীবন্দর দেখেছি , যা নদী , মালবাহী বড় নৌকো , মালের বস্তা , পাটাতন , দড়িদড়া ইত্যাদি সমেত একটি নিখুঁত , বাস্তবিক নদীবন্দর । জ্ঞানবুদ্ধিতে বুঝছিলাম একটি ইমারতের মধ্যে সত্যিসত্যিই এমন একটি নদীবন্দর থাকা সম্ভব নয় , অথচ আমার সবকটি ইন্দ্রিয় সাক্ষ্য দিচ্ছিল এটা ষোলো আনা বাস্তব একটি নদীবন্দর।

    বতর্মানে খোদ ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় চীনে- তৈরি পন্যের যে রকম প্লাবন চলছে , তা থেকে পেইচিং শহরের দোকান-বাজারের উপচে-পড়া অবস্থা অনুমান করা যায় । বিদেশের বিখ্যাত কতকগুলো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপারমার্কেটের শাখা এখন পেইচিং শহরে আছে , এমন পন্য নেই যা পাওয়া যাবে না । প্রায় সমস্ত পন্যই চীনে তৈরী ।

    থিয়েটার , সিনেমা হল , অপেরা হাউস , অ্যাক্রব্যাটিক শো-হাউস ইত্যাদি নানা রকম বিনোদন কেন্দ্রের ছিড়ে ঠাসা অবস্থা থেকেও বোঝা যায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কী বিপুল ভাবে বেড়েছে ।

  

  অন্যান্য দেশের রাজধানী শহর থেকে পেইচিং শহরের একটি প্রধান পাথর্ক্য এই যে অন্য অনেক দেশের রাজধানী শহরের সমৃদ্ধি দেশের সম্পদের কেন্দ্রীভবন , পেইচিং শহরের সমৃদ্ধি সারা দেশের সমৃদ্ধির প্রতিফলন মাত্র ।

    সংবাদ-মাধ্যমগুলোতে যাঁরা চীনের সমৃদ্ধির কথা শোনেন এবং পড়েন , তাঁদের মনে নিশ্চয়ই এই কৌতুহল জাগে যে চীনের এই অসাধারণ সমৃদ্ধি কীভাবে সম্ভব হল ? চীনের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কেমন করে এত বাড়ল ?

    এটা একটা বিশাল বিষয় , এ জন্যে আমি কৌতূহলীদের পড়াশুনা করতে অনুরোধ করি । খুব সংক্ষপে আভাস দিতে হলে বলতে হয়ঃ চীনের এই সমৃদ্ধির গোড়ায় ছিল চীনের কৃষিব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন , গ্রামগুলোতে ব্যাপক শিল্পোদ্যোগ এবং চীনের অথর্নীতির সবকটি ক্ষেত্রে আপোষহীন স্বাবলম্বিতা ।