v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-06 16:32:17    
হ্যানচৌর পশ্চিম হ্রদ

cri
    এখন চীনে বসন্তকাল। কচি পাতায় গাছপালা আস্তে আস্তে সবুজ হয়ে উঠচ্ছে। বসন্তকালে চীনারা বাইরে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। আজকের এই আসরে আপনাদের হাংচৌর পশ্চিম হ্রদেবেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি।আশা করি এই 'প্রাচীন' দর্শনীয়স্থান আপনাদের কিছুটা ' নতুন অনুভূতি' এনে দিতে পারবে।

    পশ্চিম হ্রদ অথর্বা শিহু চীনের পূবার্ঞ্চলের চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংচৌ শহরে অবস্থিত। গোটা দশর্নীয়স্থানের আয়তন প্রায় ৫০ কিলোমিটার। জলসীমার আয়তন প্রায় ৫.৬ কিলোমিটার। মার্চ আর এপ্রিল মাসে এই হ্রদের পাশে হেঁটে চললে আপনাদের চোখে পড়বে নানা ঘরনের গাছপালা এবং নানা ধরনের ফুল। মৃদু বাতাস মুখে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এই পরিবেশে মানুষ আলন্দে মেতে উঠে। পশ্চিম হ্রদের অনেক দর্শনীয়স্থান বসন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত। পশ্চিম হ্রদের দশটি পুরাতন দৃশ্যের অন্যতম---'সুটিছুয়েশাওই হোক, দশটি নতুন দৃশ্যের অন্যতম 'ইয়েনডেনহুয়াংবি' হোক সবই বসন্তকালে হাংচৌ ভ্রমণ করতে আসা দেশী –বিদেশী পযর্টকদের আকৃষ্ট করে। মিস্টার গাও যিনি তৃতীয় বার হাংচৌ পরিদর্শন করতে এসেছেন তিনি বললেন,

    প্রতি বছরের মার্চ মাসে আমি এখানে আসি। কারণ আমার মনে হয় এ সময় এখানকার দৃশ্য অত্যন্ত ভাল। চার দিকে শুধু সবুজের সমুদ্র। তা ছাড়া, এই ঋতুতে বায় অত্যন্ত টাটকা। আবহাওয়াও চমত্কার। বিশেষ করে এই হ্রদের তীর আমার কাছে ভাল লাগে। তীরের সবর্ত্র সবুজ রংয়ের হুয়েল গাছ। ছ'টি সেতু অস্পষ্টভাবে দেখা যায়। কি সুন্দর!

    এতক্ষণ মিস্টার গাও যে দৃশ্যের প্রশংসা করেছেন তা হল পশ্চিম হ্রদের একটি বিখ্যাত দশর্নীয়স্থান। লোকজন তাকে ' সুটিছুয়েশাও' নাম ডাকে। ১১ শতাব্দীতে অথার্ত চীনের সং রাজবংশ আমলে এই দশর্নীয়স্থান নিমির্ত হয়। হ্রদের তীর দক্ষিণের নানপিয়েন পাহাড় থেকে উত্তরের সিশালিন পযর্ন্ত বিস্তৃত। তীরের দৈঘ্য তিন কিলোমিটার। পশ্চিম হ্রদে সংস্কার চালানোর সময় হ্রদ থেকে সরিয়ে নেওয়া মাটি দিয়ে এই তীর তৈরী করা হয়। হ্রদের মাঝখানে দিয়ে তৈরী করা হয়েছে বলে এই তীর দেখতে খুব সুন্দর। তীরের দু'পাশে নানা ধরনের গাছ লাগানো হয়। সারা বছর এই তীরে সবুজের সমারোহ থাকে। বিশেষ করে বসন্তকালে অনেক গাছে ফুল ফুটে। চীনের প্রাচীনকালের চিত্রশিল্পীরা ' সুটিছুয়েশাও'কে পশ্চিম হ্রদের দশটি দৃশ্যে প্রথম স্থান নিয়েছেন।

    হ্রদের তীরে মোট ছ'টি সেতু আছে। প্রত্যেকটি সেতুর একটি সুন্দর নাম আছে। এ ছ'টি সেতু পযর্টকদের জন্যে সুবিধা যুগিয়েছে। সেতুতে দাঁড়িয়ে চার দিকের সুন্দর দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়। এখানে আপনাদের দু'টো জায়গার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। একটি হল দংপু সেতু যেখানটা সূযোর্দয় দেখা যায়। আরেকটি জায়গা হল গুয়াহং সেতু যেটি বৃষ্টির পর রামধনু দেখা যায়।

    মার্চ মাসে পশ্চিম হ্রদ পরিদর্শন করতে গেলে একটি জাযগায় যেতেই হবে। সেটিন পাখি দেখা যায়। জায়গাটির নাম হল ' লিওলানউয়েইন। অতীতে এখানে একটি রাজকীয় উদ্যান ছিল। দীর্ঘকাল ধরে পাখিগুলো এখানে সমাবেশিত হয়। কারণ এখানে অজস্র প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। প্রত্যেক বছরের বসন্তকালে নানা ধরনের পাখি এখানে হাজির হয়। অজস্র পাখির ডাকে আকাশ মুখরিত হয়। এখানের প্রাকৃতিক পরিবেশে উপস্থিত হলে মানুষের মন আপনাআপনি বড় হয়ে যায়।

    চীনের একটি অদ্বিতীয় দশর্নীয়স্থান হিসেবে হাংচৌর পশ্চিম হ্রদ দেখা বিদেশের অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির পছন্দের জায়গা। চীনের প্রয়াত নেতা মাও জে দং জীবনে ৪০ বার হাংচৌতে এসেছিলেন। এক বার তিনি একটানা ৭ মাস বসবাস করেছিলেন। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনও দু'বার পশ্চিম হ্রদ দেখতে এসেছিলেন। পরিদর্শনের পর তিনি আবেগের সঙ্গে বলছিলেন, পেইচিং চীনের রাজধানী , হাংচৌ এই দেশের হৃদপন্ড।

    সুন্দর পশ্চিম হ্রদ শুধু যে চীনের বিভিন্ন জায়গার পযর্টকদের আকর্ষণ করে তাই নয়, এই হ্রদ বিপুল সংখ্যক বিদেশী পযর্টকের আদর্শ পরিদর্শনের জায়গায় পরিণত হয়েছে। জন লী একজন মার্কিনী। তিনি হাংচৌতে চার বছর ধরে বসবাস করেছেন। তিনি আবেগের সঙ্গে বললেন,

বসন্তকাল এমন একটি ঋতু যে ঋতুতে সব প্রাণী সতেজ হয়ে উঠে। মার্চ আর এপ্রিল মাসে পশ্চিম হ্রদ সবচেয়ে সুন্দর। সবর্ত্রই সবুজ রংয়ের গাছপাল আর ঘাস । এ সময় অনেক লোক ঘুড়ি উড়ে। হ্যানচৌর পশ্চিম হ্রদ সত্যিই একটি দেখার মতো জায়গা। এখানে অনেক পুরাকীর্তি আছে। আমি পশ্চিম হ্রদ পছন্দ করি।

    সম্প্রতি পশ্চিম হ্রদ দশর্নীয়স্থানে নানা ধরনের সেবামূলক ব্যবস্থা আছে। যদি পযর্টকরা কফি খেতে চান তাহলে নানসেন সড়কে যান। যদি জিনিসপত্র কিনতে চান তাহলে হুপিন হাঁটাহাটি সড়কে যান। যদি দৃশ্য দেখতে চান তাহলে পশ্চিম হ্রদের মধ্য স্থানে যান। যদি পূরাকীর্তি খুঁজতে চান তাহলে পেইসেন সড়কে যান। পশ্চিম হ্রদ পরিদর্শন করতে আসা দেশী বিদেশী পযটর্কদের জন্যে সুবিধা যুগিয়ে দেওয়ার জন্যে পশ্চিম হ্রদ বেষ্টিত পার্ক ২৪ ঘন্টায় বিনা পয়সায় প্রকাশ্যে খুলে থাকে। হ্যানচৌ শহরের কমিউনিষ্ট পাটির কমিটির সম্পাদক হওয়াং গু পিন ব্যাখ্যা করে বলেছেন,

    আমরা সব সময় এভাবে মনে করি যে, পশ্চিম হ্রদ কেবল হ্যানচৌবাসীদের পশ্চিম হ্রদ নয়, জিয়েজিন মানুষের পশ্চিম হ্রদ নয়। এটা সারা চীন দেশের জনগণের পশ্চিম হ্রদ। এমনকি সারা বিশ্বের জনগণের পশ্চিম হ্রদ। এখন হ্রদের পাশে সাতটি পার্ক বিনা পয়সায় প্রকাশ্যে খুলে থাকে। আমার বিশ্বাস , নতুন পশ্চিম হ্রদ আর নতুন হ্যানচৌ নি:সন্দেহে সবাইয়ের জন্যে নতুন অবাক এনে দেবে।

    শ্রোতা বন্ধুরা , লোকেরা হ্যানচৌর পশ্চিম হ্রদ আর সুইজল্যান্ডের জেনিভার গেনেভে হ্রদকে বিশ্বের দুটো মুক্তা বলে মনে করেন। ইতালির মারকো পোলো তাঁর ভ্রমণ ডাইরিতে হ্যাচৌকে 'বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর আর মর্জিত নগর' বণর্না করা হয়।

    যদি বসন্তকালে আপনার চীন সফরের সুযোগ পান তাহলে আপনি অবশ্যই হ্যানচৌর পশ্চিম হ্রদ পরিদর্শন করতে আসুন।