থাইল্যান্ডের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মন্ত্রী থাকসিন ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মাধ্যমে সারা দেশের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত একটি ভাষণে ঘোষণা করেছেন, সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি নতুন সরকারে প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন না। তিনি বলেছেন, দেশের ঐক্য আর সংহতি বাস্তবায়িত করার জন্যে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পযর্ন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মন্ত্রী পদে থাকবেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, থাকসিনের এই আচরণ সমীচীন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারী থেকে থাইল্যান্ডের উত্তেজনামুখর রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে। তিনি কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার কারন হল, প্রথমত: দেশের সাধারণ নিবার্চন হওয়ার পর থাকসিন স্পস্টভাবে নিজের সমস্যা উপলদ্ধি করেছেন। কংগ্রেসের নিম্ন পরিষদের নির্বাচনের আংশিক ফলাফলে দেখা গেলো, তাঁর প্রতি থাইল্যান্ডের জনগণের সমর্থনের হার কমেছে। তাঁর কাজর্কমে থাইল্যান্ডের জনগণের অসন্তোষ এবারকার নিবার্চনে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: সাধারণ নিবার্চনের সাফল্যজনক আয়োজন তাঁর সম্মানজনক পদত্যাগের জন্যে শর্ত সৃষ্টি করেছে। থাকসিনের প্রকৃতি ঋজু । তিনি তাঁর মযার্দা সম্পর্কে খুব সচেতন। অতীতে তিনি সব সময় জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি সব সময় আইন আর নিয়মবিধি অনুযায়ী কাজ করেন। সুতরাং বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভ আর জনসমাবেশের চাপে পদত্যাগ করা তাঁর পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।
তৃতীয়ত: গত ফেব্রুয়ারী মাসের পর থাইল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী চ্যামলং স্রিমুং এবং থাইল্যান্ডের তথ্যমাধ্যমের হোমরাচোমরা লিমথংকুল প্রমুখ নেতাদের সংগঠনে থাকসিনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বার বিক্ষোভ প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে। প্রত্যেক বার বিক্ষোভে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা কয়েক লক্ষ । যদিও এর আগের প্রতিরোধ তত্পরতা 'শান্তিমূলক' পরিবেশে চালানো হয়েছে তবে ভবিষ্যতে থাকসিনের সমর্থক আর বিরোধী দলের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ ঘটার খুব সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। যদি সহিংস সংঘর্ষ বাস্তবে পরিণত হয় তাহলে পরিণাম ভয়ংকর হতো।
চতুর্থত: থাকসিনের উত্থাপিত পদত্যাগের শর্ত বিরোধী দলের সাড়া পেয়েছে। সুতরাং তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। সাধারণ নির্বাচনের পর কঠোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় থাকসিন বলেছেন, দেশের স্থিতিশীলতার জন্যে তিনি আপোস করতে রাজি।
পঞ্চমত: থাইল্যান্ডের রাজা থাকসিনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন।৪ এপ্রিল তিনি প্রাসাদে গিয়ে থাইল্যান্ডের রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। দু' জনের মধ্যে সাক্ষাতের পর থাকসিন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, তাকসিন তাঁর রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত নি:সন্দেহে থাইল্যান্ডের সমাজের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।
|