v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-04 15:34:17    
চীন তার সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান ব্যবস্থা সুসংহত করছে

cri
    গত কয়েক বছরে চীনের সামাজিক নিশ্চয়তা বিধানের সমস্যা বরাবরই সমাজের বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । সবেমাত্র সমাপ্ত চীনের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন সংস্থার নিয়মিত বার্ষিক অধিবেশনে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও সরকারী কার্যবিবরণীতে উত্থাপন করেছেন যে , সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান ব্যবস্থার গঠনকাজকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে , বাস্তবিকভাবে বিভিন্ন সামাজিক বীমার অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে এবং সামাজিক নিশ্চয়তা বিধানের আওতা সম্প্রসারণ করতে হবে । তাহলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সামাজিক নিশ্চয়তা বিধানের নীতি চীনা জনগণের জীবনে কি কি পরিবর্তন এনে দিয়েছে ?

    আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি পেইচিংয়ের একটি পরিবার পরিদর্শন করেছেন । এই পরিবারের তিন সদস্যের কাছ থেকে আমরা হয়তো ইতিহাসের গতিধারা অনুধাবন করতে পারি । অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করছি আমি শি চিং উ ।

    প্রবীণ লি চিয়া চির পরিবার পেইচিংয়ের চিন সুং কমিউনিটিতে থাকে । বুড়ো লি সাহেব ২২ বছর আগে অবসর নেন । এখন তিনি রোজ ভোরে বিভিন্ন পার্কে বেড়াতে যান অথবা পুরনো বন্ধুদের সংগে দেখা সাক্ষাত করেন । অবশ্য তিনি মাঝে মাঝে তাদের সংগে নিজের নিজের বেতন সম্পর্কেও আলাপ করেন। তিনি বলেছেন , যখন আমি অবসর নিয়েছিলাম , তখন আমার ভাতা মাত্র ৭৫ ইউয়ান ছিল । গত ২২ বছরে বাড়তে বাড়তে তা এখন এক হাজার ইউয়ানের বেশিতে দাঁড়িয়েছে । আমার জন্যে এই ভাতা যথেষ্ট । অবশ্য যত বেশি তত ভালো ।

    বুড়ো লি ১৯৫৩ সালে পেইচিংয়ের কুয়াং হুয়া কাঠ কারখানায় একজন কাঠমিস্ত্রী হিসেবে যোগ দেন । সেই কারখানায় তিনি একটানা ৩১ বছর ধরে করেন । ১৯৮৪ তিনি অবসর নেন । তখন তার ভাতা আগেকার বছরগুলোর চেয়ে বেশি হলেও পেইচিংয়ের জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের ন্যুনতম মানের সমান ছিল । বুড়ো লি বারবার বলেছেন , তাঁর বয়সের লোকদের অত বেশি টাকার দরকার পড়ে না । তা সত্ত্বেও কথাবার্তার মধ্যে আমরা অনুভব করতে পারি যে , তিনি অবসর-ভাতা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছেন ।

    প্রকৃতপক্ষে সেই ১৯৫১ সালে তত্কালীন রাজনৈতিক পরিষদ " শ্রম বীমা বিধি" জারি করে চীনের সামাজিক নিশ্চয়তা বিধানের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করেছে । সামাজিক বীমা থেকে শুরু করে বেকার বীমা বাদে অবসরকালীন ভাতা, চিকিত্সা , কর্মস্থলে আহত হওয়া , প্রসব প্রভৃতি ক্ষেত্রে বহুমুখী শ্রম বীমা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে । এই ব্যবস্থা ষাটের ও সত্তরের দশকে কিছু সময়ের জন্যে বন্ধ হয়েছিল । পরবর্তীকালে তা আবার চালু হয় ।

    নব্বইয়ের দশকে চীনের অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনের সংগে সংগে আধুনিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা তখনকার দেশের প্রধান কর্তব্যে পরিণত হয়েছে । বাজার অর্থনীতির সংগে অসংগতিপূর্ণ পুরনো ব্যবস্থার পরিবর্তে অবসরকালীন ভাতা ও চিকিত্সা তহবিলের সামাজিক ব্যবস্থাপনা চালু করা হয় । কিন্তু সেই সময়ে বুড়ো লির মত অনেক লোক বহু আগেই অবসর নিয়েছিলেন । ১৯৯৭ সালে সূচীত নিয়ম অনুসারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান , সমাজ ও ব্যক্তিবিশেষের অর্থ দিয়ে সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান তহবিল গঠিত হয় । অবসরপ্রাপ্ত বুড়ো লি ব্যক্তিবিশেষের অর্থ-সঞ্চয় না থাকায় কেবল সামাজিক সমন্বয়ের সেই অংশের টাকা নিতে পারেন ।

    চীনা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান গবেষণাগারের অধ্যাপক লি শাও কুয়াং এই অবস্থা দেখা দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন ,

যারা ১৯৯৭ সালের আগে অবসর নিয়েছেন , তাদের ব্যক্তিবিশেষের অর্থ-সঞ্চয় না থাকায় এবং তখনকার সামাজিক মাথাপিছু বেতনের মান নিম্ন ছিল বলে তাদের অবসরকালীন ভাতা খুবই কম ছিল ।

    সুখের কথা এই যে, বুড়ো লির শরীর খুবই ভালো । তার খরচ বেশি নয় । আরো সান্ত্বনার কথা এই যে, তার ছেলে লি চুন ফোং সংস্কারের পরের সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান ব্যবস্থার আওতাভূক্ত হয়েছেন । দু বছর আগে ৬২ বছর বয়সের লি চুন ফোং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কম্পানি থেকে অবসর নেন । তিনি বলেছেন , এক বছর আগে তাঁর অবসরকালীন ভাতা আরেকবার বাড়ানো হয় । এখন তিনি মাসে ২ হাজার ইউয়ান ভাতা পান । জীবনযাত্রার মান মোটামুটি ভালো । তার বাবার চেয়ে ভালো ।

    লি চুন ফোং নিজের ভাতা নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট । তিনি সংস্কারের আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন এবং সংস্কারের পরে অবসর নিয়েছেন । সুতরাং তার অবস্থা তার বাবার চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে । তার কারণ ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক লি শাও কুয়াং বলেছেন ,

    তাঁর যুগের লোকদের অবসরকালীন ভাতা বীমা তহবিলের মধ্যে কিছু ঘাটতি ছিল বটে , তবে ১৯৯৭ সালের শ্রম বীমা বিধি জারি হওয়ায় তার ঘাটতি কিছুটা পুরণ হয়েছে । তাছাড়া সরকার বয়স্কদের নির্দিষ্ট ভর্তুকীও দেয় । সামাজিক মাথাপিছু বেতন বাড়ার সংগে সংগে লি চুন ফোংয়ের বেতন স্বাভাবিকভাবে তার বাবার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে ।

    লি চুন ফোংয়ের ছেলের নাম লি সিয়াও ফোং । তার বয়স ২৮ বছর । তিনি অবসরকালীন ভাতা ও চিকিত্সা বীমা তহবিলের পরোয়া করেন না । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর তিনি বিদেশী পুঁজিবিনিয়োজিত একটি কম্পানিতে কাজ করেন । শ্রম প্রটোকল স্বাক্ষরের দিন থেকে তার কম্পানি তার জন্যে প্রতি মাসে অবসরকালীন ভাতা , চিকিত্সা বীমা তহবিল ও বেকার বীমা তহবিলের অর্থ জমা রাখে । তবে অন্যান্য বহু তরুণ-তরুণীর মত তিনিও এসবের ওপর বেশি নজর দেন না । তার পরিবারে বয়স্করা জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের ওপর বেশি নজর দেন আর যুবক-যুবতীরা টাকা ধার করে জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করেন । কিছু দিন আগে লি সিয়াও ফোং ঋণ নিয়ে একটি নতুন গাড়ি কিনেছেন । তিনি বলেছেন ,

    এখন বিদেশী পুঁজি ও ব্যক্তিবিশেষের পুঁজি বিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কর্মচারী ও শ্রমিকদের জন্যে অবসরকালীন ভাতা , চিকিত্সা বীমা তহবিল ও বেকার বীমা তহবিলের অর্থ জমা রাখে । তবে ভবিষ্যতে কেউই তার ওপর নির্ভর করবেন না । তরুণ বয়সে বেশী করে উপার্জন করলে ভবিষ্যত সুন্দর হবে ।

    ২০০৫ সালের পর জাতীয় গণ কংগ্রেস ও গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক প্রতিনিধি ও সদস্যরা প্রস্তাব করেছেন , যেসব গ্রামের অবস্থা ভালো , সেসব গ্রামকে সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে ।