v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-04-03 15:14:46    
পেইচিংয়ের সুং থাং জীবন পরিচর্যা হাসপাতাল

cri
    লাইফ কনসের্ভেশন বাংলায় জীবন পরিচর্যা, মানে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত রোগীদের শেষের দিনে তাদের আরাম ও আনন্দ দেয়া, যাতে তারা যন্ত্রণা ও মৃত্যুর ভয় না করে আনন্দের সঙ্গে শেষের দিন কাটানো যায়। এমন বিশেষ যত্ন দেয়ার হাসপাতালকে জীবন-পরিচর্যা হাসপাতাল বলে ডাকা হয়। পেইচিংয়ের সুং থাং জীবন পরিচর্যা হাসপাতাল এমন একটি বিশেষ হাসপাতাল।

    সুং থাং হাসপাতালের দ্বারের ভেতরে ঢুকলে আপনি একটি পার্কে ঢুকেছেন বলে মনে করবেন। উঠানে দেখা যায় ডজন খানেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একসঙ্গে বসে, কেউ পিকিং ওপেরা গাইচ্ছেন, কেউ শরীরের চর্চা করছেন। এখানে তারা কিন্তু তাদের জীবনের শেষ দিন কাটাচ্ছেন।

    সুং থাং হাসপাতাল একটি বহুমুখী হাসপাতাল। তার ২০ বছরের ইতিহাস আছে। এখানে বিশেষ করে কিছু ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত রোগীদের সার্বিক চিকিত্সা দেয়া হয়, তাদের জন্য ২৪ ঘন্টা ধরে মানসিক চিকিত্সা দেয়া হয়। এখানে কয়েক'শ রোগী ঘর এবং শতাধিক চিকিত্স কর্মী আছে। ২৩০জনেরও বেশী রোগী এখানে থাকেন, তাদের মধ্য অধিকাংশই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

    সুং থাং হাসপাতালের পরিচালক লি ওয়েই মনে করেন, চীনাদের মধ্যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভাল করে যত্ন দেয়ার রীতিনীতি আছে। তবে এখানে তাদের শুধু জীবনের যত্ন দেয়া হয়, তা নয়। লি বলেছেন

    "ছেলেমেয়ে হিসেবে, বুড়ো বাবা মাদের জন্য জীবনের যত্ন দিতে পারে। তবে চিকিত্সা ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা নেই। তাই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বৈজ্ঞানিক পরিসেবা দিতে পারে না এবং তাদের অনেক চাহিদাও মেটাতে পারে না। এমন অবস্থায় আমাদের হাসপাতাল তাদের জন্য বিশেষ পরিসেবা যুগিয়ে দিতে পারে।"

    সুং থাং হাসপাতল ২৪ ঘন্টা ধরে চিকিত্সা ও পরিসেবা করার ব্যবস্থা চালু করেছে। রোগীরা যে কোনো সময়ে ডাক্তার ও নার্সদের ডাকতে পারেন। প্রতিটি রোগী-ঘরে একজন করে পরিসেবক আছে। তারা রোগীদের সঙ্গে থেকে ২৪ ঘন্টা ধরে তাদের যত্ন নেন। প্রধান নার্স মাদাম লি বলেছেন

    "আমাদের নার্সরা প্রতিদিন ৫ ও ৬টায় উঠে বুড়োদের জন্যে হাতমুখ ধুওয়া করেন এবং নাস্তা খাওয়ান। তারপর যারা শরীর চর্চা করতে পারেন ,তাদের বাইরে ব্যয়াম করতে বলেন। যারা শরীর চর্চা করতে না পারেন বিছানায় তাদের জন্য অংগমর্দন করেন।"

    সুং থাং হাসপাতালের আরেকটি বৈশিষ্ট্য আছে, তা হলো ২০০টিরও বেশী বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক সংস্থা হাসপাতালের সঙ্গে দীর্ঘকালিন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা নিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের নিজের তৈরী অনুষ্ঠান দেখান, তাদের সঙ্গে আড্ডা করেন এবং যত্ন সেবা করেন।

    একজন বৃদ্ধের ঘরে আমাদের সংবাদদাতা চীনের গণমাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের লিউ ইউয়ান নামক একজন স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে দেখা করেছেন। লিউ ইউয়ান বলেছেন:

    "আমি নিয়মিত এখানে আসি। প্রতি সপ্তাহে একবার। আমি সবসময় একজন নানীর সঙ্গে আড্ডা করি। তিনি কথাবার্তায় পটু। এতে তিনি আনন্দ পাবেন এবং আমি তার কাছ থেকেও কিছু শিখতে পারি।"

    এই ঘর হাতে তৈরী কাগজের সারস ও তারায় ভরা রয়েছে। ৯১ বছর বয়স্কা কান্সারে আক্রান্ত নানী লি এখানেই থাকেন। তিনি বলেছেন

    "আমি লম্বা সময় ধরে এখানে আছি। এখানে আমার বাড়ির মত। আমি এই সুং থাং বড় পরিবারের একজন সদস্য। এখানে সবাই আমার সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করেন। আমি খুব সুখী।"

    নানী লি হাসিমুখে সংবাদদাতাকে এই কথা বলেছেন, যেমন আপনজনদের সঙ্গে আড্ডা করছেন। তাঁর মুখে ভয়াবহ কোনো আক্রান্ত রোগীর উদ্বেগ দেখা যায় না। এই হাসি মুখ এখানকার সকলের মুখে দেখা যায়।

    বর্তমানে চীনে প্রায় ১৩ কোটি বুড়ো মানুষ আছে, তা লোকসংখ্যার ১০শতাংশ । তাদের কিভাবে যত্ন নেয়া যায়, বিশেষ করে রোগে আক্রান্ত হওয়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যত্ন নেয়া চীনের বিভিন্ন মহলের এক মনোযোগী প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    বর্তমানে চীনে প্রায় ১০০টি জীবন পরিচর্যা হাসপাতাল আছে এবং কয়েক হাজার লোক এই সব হাসপাতালে নিয়োজিত রয়েছেন। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবন পরিচর্যা ক্লাসও খুলেছে। তাছাড়া, চীনে জীবন পরিচর্যা সমিতি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমাদের অভিন্ন আশাআকঙ্কা, আরো বেশি সংখ্যক ব্যক্তি ও সামাজিক শক্তি এই ক্ষেত্রে তাদের অবদান রাখবে।