v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-31 16:33:08    
তিব্বতী কৃষক ও পশুপালকদের ছায়াছবি উপভোগের সুযোগ সুবিধা

cri
    তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী- লাসার উত্তরাংশের একটি গ্রামে ৩ শতাধিক তিব্বতী কৃষক আর পশুপালক আনন্দের সংগে ছবি দেখছিলেন ।

    তিব্বতী ভাষায় অনুদিত ছবি দেখতে পেয়ে তিব্বতী কৃষক আর পশুপালকরা খুব আনন্দিত হয়েছেন । তিব্বতী কৃষক মাদাম জোলমা বলেছেন , তিনি ছবি দেখতে খুব পছন্দ করেন । ছবি উপভোগের মাধ্যমে তিব্বতের বাইরের জগত্ যে কি ধরণের , তিনি তা জানতে পেরেছেন । কৃষি সম্পর্কিত শিক্ষা ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রামান্য কিছু ছবি দেখার পর তিনি আরো বেশি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান জানতে পেরেছেন । এটা তার চাষাবাদের অনুকূল হবে ।

    এখন তারা মাসে একবার ছবি দেখতে পারেন । তাতে তিনি বেশ কিছু নতুন জ্ঞান শিখতে পেরেছেন । তিনি বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ সম্পর্কিত ছবি দেখতে খুব পছন্দ করেন । যেমন শীতকালে স্বচ্ছ প্লাস্টিক আবরণের জমিতে শাক-সব্জি চাষ , কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও মেরামত , হাঁস-মুর্গী পালন , দুধেল গাইয়ের বংশের সংস্কার কাজ ইত্যাদি শিক্ষা আর বিজ্ঞানভিত্তিক প্রামান্য ছবি । এই সব ছবির মাধ্যমে তারা সহজে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন । এতে তারা খুব আগ্রহী ।

    জোলমা বলেছেন , ছবি দেখার মাধ্যমে তিনি স্বচ্ছ প্লাস্টিক আবরণের জমিতে শাক-সব্জি চাষের উপায় শিখতে পেরেছেন । শীতকালে তার স্বচ্ছ প্লাস্টিক আবরণের জমিতে নানা রকম শাক-সব্জি দেখা যায় । এর মধ্যে কিছু কিছু নিজের খাওয়ার জন্য বন্দোবস্ত , আর বাকী অংশটা লাসায় বিক্রি করা হয় । এতে তিনি বেশি আয় করছেন ।

    তিনি বলেছেন , এখন ছবি এমন এক ধরণের প্রনালীতে পরিণত হয়েছে , যার মাধ্যমে তিব্বতের ব্যাপক কৃষক আর পশুপালক বাইরের তথ্য , বৈজ্ঞানিক আর প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে পারেন । বিশেষ করে তিব্বতী ভাষায় অনুদিত শিক্ষা ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রামান্য চলচ্চিত্র কৃষক আর পশুপালকদের জীবনযাপনের চাহিদার দিক থেকে কৃষক ও পশুপালক দের ধারণার পরিবর্তন , প্রযুক্তি রুপান্তর আর জীবনযাপনের মান উন্নত করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ।

    তিব্বতের কৃষক আর পশুপালকরা যে নিয়মিতভাবে ছায়াছবি দেখতে পারেন , তার মূলে রয়েছে কৃষকদের ছবি দেখার সুবিধার জন্য চীন সরকার প্রণীত একটি সুবিধাজনক নীতি । গত শতাব্দির শেষ নাগাদ চীনের গ্রামাঞ্চলের সাংস্কৃতিক জীবনযাপন সতেজ করে দেযার জন্য চীন সরকার '২১৩১' নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে । এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলঃ একবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে সমগ্র দেশের গ্রামাঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকের পক্ষে মাসে একবার ছায়াছবি দেখা যাবে । তিব্বতের ১২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার কৃষি ও পশুপালন অঞ্চল অবশ্যই এই প্রকল্প চালু হওয়ার অন্যতম অঞ্চলে পরিণত হবে ।

    ১৯৯৮ সালে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এই প্রকল্প প্রবর্তন শুরু হয় । তিব্বতের ছায়াছবি কোম্পানি শ্রম- শক্তি আর অর্থের দিক থেকে কৃষক ও পশুপালকদের ছবি দেখানোর কাজ জোরদার করেছে । যেহেতু তিব্বতী কৃষক আর পশুপালকরা শুধু তিব্বতী ভাষায় প্রস্তুত ছবি বুঝতে পারেন , সেহেতু তিব্বতী ভাষায় যত বেশি ছায়াছবি অনুদিত হয় , তত বেশি ভাল । তিব্বতের চলচ্চিত্র কোম্পানির ম্যানেজার মিঃ পাগবা ছোজিন বলেছেন , তারা সর্বপ্রথমে ছায়াছবির অনুবাদের কাজ জোরদার করেছেন ।

    পর্যাপ্ত ছায়াছবি দেখানো নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কোম্পানী ব্যাপকভাবে ছায়াছবি অনুবাদের কাজ আঁকড়ে ধরেছে । ছায়াছবি অনুবাদের সংখ্যা আর উত্কৃষ্টতা নিশ্চিত করার জন্য চলচ্চিত্র কোম্পানি বেশ কয়েকজন অনুবাদক আর অভিনেতাকে আমন্ত্রন জানিয়েছে । এর সংগে সংগে কৃষক আর পশুপালকদের চাহিদা মেটানোর জন্য শিক্ষা ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রামান্য ছায়াছবির অনুবাদ আর অনুবাদের কাজ জোরদার হয়েছে । তাতে কৃষক আর পশুপালকদের চাষাবাদ আর পশুপালনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বেড়ে গেছে ।

    তিনি বলেছেন , গত কয়েক বছরে কোম্পানি অনুদিত সহস্রাধিক ছায়াছবিতে যেমন কাহিনী ছায়াছবি তেমনি শিক্ষা ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রামান্য চলচ্চিত্র আছে । ফলে তিব্বতীদের দেখার জন্য পর্যাপ্ত ছবি বন্দোবস্ত করা যাচ্ছে ।

    ছায়াছবি অনুদিত হবার পর গ্রামে গ্রামে দেখানোর জন্য বিপুলসংখ্যক কর্মীও লাগে । গত কয়েক বছরে তিব্বতে ছায়াছবি দেখানোর জন্য বেশ কিছু কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । জেলায় জেলায় ছায়াছবি দেখানোর কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এ পর্যন্ত তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৫ শোটি ছায়াছবি দেখানোর কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে ।

    সবাই জানেন , তিব্বত আয়তনের দিক থেকে বিস্তীর্ণ , তুষার পর্বতমালায় আবৃত এবং এই অঞ্চলে যোগাযোগ লাইন খুব দীর্ঘ । ছায়াছবি দেখানোর জন্য কর্মীদের গাড়িতে করে বহু দিন ঘুরে বেড়াতে হয় । নিমা সেরিং লাসা শহরের উত্তর উপকন্ঠের তাচি জেলার ছায়াছবি দেখানোর কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি । তিনি বলেছেন ,

    আমাদের জেলার বহু গ্রাম জেলা শহর থেকে দূরে অবস্থিত । এই সব গ্রামে ছায়াছবি দেখানোর জন্য যে সব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন , সে সব যন্ত্রপাতির পরিবহন তিব্বতী ষাঁড় আর ঘোড়ার ওপর নির্ভর করতো । প্রত্যেক গ্রামে এক রাত একটি কাহিনী ছায়াছবি আর একটি শিক্ষা ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রামান্য চলচ্চিত্র দেখানো হতো ।

    ছায়াছবির উপভোগে তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের জীবনযাপন স্ফুর্তিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে । যখন ছায়াছবি দেখানো হয় , তখন কেউ কেউ দূর থেকে ঘোড়ায় চড়ে , হেঁটে বা মোটর সাইকেলে আসেন । তিনি বলেছেন , বহু বছর ধরে কত গ্রামে যে কত ছায়াছবি দেখানো হয়েছে , তা হিসাব করা খুব কঠিন । কিন্তু তার জীবনে এটা অবিস্মরণীয় যে , যখন তারা গ্রামে যান , তখন গ্রামবাসীরা তাদের খুব পছন্দ করেন এবং তাদের ছেড়ে দিতে চান না ।

    বর্তমানে তিব্বতের ৭৩টি জেলার মধ্যে ৬৯টি জেলায় কৃষক আর পশুপালকরা মাসে একবার ছায়াছবি দেখতে পারেন । ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগে তিব্বতী ভাষায় অনুদিত আরো বেশি ছায়াছবি তৈরী করতে হবে আর ছায়াছবি দেখানোর আরো বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে , যাতে আরো বেশি কৃষক ও পশুপালক ছবি দেখতে পারেন ।