v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-31 16:03:51    
চীনে গ্রামীণ বাচ্চাদের বাধ্যতামূলক শিক্ষা জনপ্রিয় হয়েছে

cri
    গত বছরের শেষ দিক পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের ৯৫ শতাংশ অঞ্চলে প্রাথমিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত নয় বছর বাধ্যতামূলক শিক্ষা জনপ্রিয় হয়েছে, কিন্তু বাকি ৫ শতাংশ অনুন্নত গ্রামাঞ্চলেবাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয় নি। সেখানে আরো কিছু বাচ্চা পরিবারের দারিদ্র্য বা বেশি দূরে থাকার কারণে স্কুলচ্যুত হয়েছে , এমন কি স্কুলে যাওয়ার সুযোগ নেই অনেকের । এই বিষয়ে চীন সরকার কি ভাবছে? এই বাচ্চারা কিভাবে স্কুলে যেতে পারবে এবং তারা কিভাবে সুষ্ঠুভাবে বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্পন্ন করবে?

    বসন্তকালে চীনের পশ্চিমাংশের সিছুয়ান প্রদেশের চাওচিয়া জেলার নানা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল যথাক্রমে খুলেছে। ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মা বাচ্চাদের নানা শিক্ষা ফি জমা দিতে ব্যস্ত আছেন। কিন্তু তাঁরা ভাবতে পারেন নি যে, এই বছর থেকে আর বিবিধ ফি জমা দিতে হবে না। বহু ছাত্রছাত্রীর বাবা-মা এর জন্য আনন্দিত হয়েছেন।

    "জমা দেয়া ফি কমেছে, এটা আমাদের ভার কমেছে, ফলে আমাদের মনও ভালো হয়েছে। ধরুন আমার বাসায় তিন জন ছেলেমেয়ে আছে, এক জন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে, এক জন মাধ্যমিক স্কুলে , এক জন প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। তাদের শিক্ষা ফি বেশি হলে আমি বহন করতে পারি না।"

    চীন সরকার গত বছরের শেষ দিকে এই আনন্দময় নতুন নীতি প্রকাশ করেছে। অর্থাত্ চলতি বছরের শীতকালীন ছুটির পর থেকে চীনের পশ্চিমাংশের গ্রামাঞ্চলে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ের সমস্ত শিক্ষা ও বিবিধ ফি মওকুফ করা হবে। আগামী বছরে এই নীতির আওতা চীনের মধ্যাংশ এবং পূর্বাংশের গ্রামাঞ্চলে সম্প্রসারিত হবে। যাতে চীনের গ্রামের ১০ কোটিরও বেশি স্কুলবয়সী বাচ্চাদের শিক্ষা ও বিবিধ ফি মওকুফ বাস্তবায়িত হবে ।

    আসলে চীন দীর্ঘকাল ধরে প্রাথমিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কিন্তু ছাত্রছাত্রী স্কুলে যাওয়ার জন্য বিবিধ ফি এবং পুস্তক ও খাতা কেনার জন্য নানা ফি জমা দিতে হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো এমন শহরবাসী বা অর্থনৈতিক উন্নত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে ১০০ বা ২০০ ইউয়ান জমা দেয়া কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু অর্থনৈতিক আয় অতি নিচু কৃষক পরিবারের প্রতি এটা সত্যি এক অর্থনৈতিক ভার। ফলে স্কুলচ্যুত ছাত্রছাত্রী আবির্ভূত হয়েছে।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার শিক্ষা জনপ্রিয় করা জনসংখ্যার গুণমান উন্নত করা এবং জনসংখ্যার চাপকে ধীশক্তি সম্পদে পরিবর্তন করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে, ধাপে ধাপে বাধ্যতামূলক শিক্ষার বরাদ্দ বাড়িয়েছে এবং গ্রামাঞ্চলের বাধ্যতামূলক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য নানা ব্যবস্থা চালিয়েছে।

    শিক্ষা মন্ত্রী চৌ চি বলেছেন, "দশম পাঁচসালা পরিকল্পনায় গ্রামীণ শিক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মর্যাদা দেয়া হয়েছে, অতিরিক্ত বাড়ানো শিক্ষা বাজেট প্রধানতঃ গ্রামে ব্যবহার করার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আরো বেশি শক্তি কেন্দ্রীভূত করে ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে । চীনের গ্রামীণ শিক্ষা অভূতপূর্ব গুরুত্ব এবং বাস্তব জোর পেয়েছে। "

    মধ্য-পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষা ও বিবিধ ফি, পুস্তক ফি সব মওকুফ করা হয়েছে, এবং হলে থাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ ভর্তুকি দেয়া হয়, এগুলো হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের গ্রামীণ শিক্ষা ক্ষেত্রে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। চীনের ইউন্নান প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক হো টিয়ান ছুন বলেছেন, "ইউন্নান প্রদেশ ২০০০ সাল থেকে শিক্ষার বিবিধ ফি, পুস্তক ফি ইত্যাদি মওকুফ করতে শুরু করে। এ ব্যবস্থা তখন মাত্র সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে চালু হয়েছে, পরে যথাক্রমে সীমান্ত অঞ্চলের জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষ ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী এ ব্যবস্থা থেকে কল্যাণ পেয়েছে।"

    এর সঙ্গে সঙ্গে ইউন্নান প্রদেশে তথাকথিত "পাঁচটি ছোট প্রকল্প" কার্যকরী করেছে, অর্থাত্ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে ছোট আকারের শুয়োরের খোঁয়াড়, ছোটআকারের শাকসব্জীর বাগান এবং ছোট খাবারঘর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসের পর শিক্ষকের নেতৃত্বে কিছু সংশ্লিষ্ট কাজ করে। এর মাধ্যমে এক দিকে অর্থ সৃষ্টি করতে পারে, তা দিয়ে শিক্ষার শর্ত উন্নত করতে এবং ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা ফি ভর্তুকি দিতে পারে। অন্য দিকে বাচ্চারা ছোট বেলা থেকে কিছু কৌশল শিখতে পারে। এখন ইউন্নান প্রদেশের ৯০ শতাংশের বেশি গ্রামীন স্কুলে এ রকম কাজ চালু হয়েছে।

    ২০০৪ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছরে গ্রামীণ স্কুলের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ অর্থ দেয়। যাদের বাড়ি স্কুল থেকে অতি দূরে এমন ছাত্রছাত্রীকে আর রোজ পাহাড় পার হয়ে স্কুলে যেতে হবে না। তারা স্কুলের পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন বাসস্থানে থাকতে পারে। গ্রাম আর শহরের শিক্ষা ব্যবধান কমানোর জন্য চীন "গ্রামীণ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের আধুনিক দূর-শিক্ষা প্রকল্প" কার্যকরী করেছে, অর্থাত্ কম্পিউটার আর স্যাটেলাইট টেলিভিশন নেটের মাধ্যমে গ্রামের বাচ্চারাও শহরের ছাত্রছাত্রীদের মতো বিখ্যাত শিক্ষকদের পাঠ শুনতে পায় এবং মাল্টি মিডিয়া আধুনিক পদ্ধতির শিক্ষা উপভোগ করতে পারে। আগামী বছরের শেষ দিকে, চীনের প্রতিটি গ্রামীণ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের স্যাটেলাইট টেলিভিশন গ্রহনের সামর্থ্য থাকবে। প্রতিটি গ্রামীণ মাধ্যমিক স্কুল কমপক্ষে একটি কম্পিউটার ক্লাস ঘরের অধিকারি হবে।

    চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও উত্থাপন করেছেন, "পরবর্তী পাঁচ বছরে রাষ্ট্রীয় আর্থিক বাজেটে নতুন বাড়ানো বাধ্যতামূলক শিক্ষার বরাদ্দ ২১৮.২ বিলিয়ন ইউয়েন হবে। গ্রামাঞ্চলের বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের গণ ব্যয়ের নিশ্চিত মান উন্নত হবে, গ্রামীণমাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ভবন মেরামত করার নিশ্চয়তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, প্রত্যেক বাচ্চা বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহনের সমান সুযোগ পাবে।"