v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-31 15:05:57    
শিশুরাও বড়দের চেয়ে বুদ্ধিমান হতে পারে

cri

    চীনের গণ নিরাপত্তা মন্ত্রনালয় ও সিসিটিভির মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত" জীবন চলার পথে বীর খুঁজে চীনের গৌরব নির্বাচন"নামক তত্পরতা শেষ হয়েছে । ৮ বছর বয়সী মেয়ে ইউয়ান ইউয়ান সর্বাধিকভোট পেয়ে"চীনের গৌরব"নির্বাচিত হয়েছে । সে এই পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে কনিষ্ঠতম বীর ।

    ইউয়ান ইউয়ান চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের সেনচেন শহরের নানথৌছেন প্রাথমিক স্কুলের একজন সাধারণ ছাত্রী । ছোটো হলেও ইউয়ান ইউয়ান এমন এক কাজ করেছে ,যা বড়দের প্রশংসা ও শ্রদ্ধা লাভ করেছে । ঘটনা এ রকম :একবার তার বাবামা বিষাক্ত গ্যাসের শিকার হয়ে গোসলখানায় পড়ে যান । এই গুরুতর বিপদের সামনে নির্ভীক ইউয়ান ইউয়ান বাবামাকে মৃত্যুর কবল থেকে বাঁচিয়েছে ।

    ঘটনাটা সবিস্তারে বলা যাক :২০০৪ সালের ১৬ নভেম্বর এক শীতের রাতে ইউয়ান ইউয়ান সাধারণ দিনের মতো নিজের রুমে স্কুলের দেয়া পড়া তৈরী করছিল । সে সময় তার মা বাবাকে ধরে গোসলখানায় নিয়ে যান । তিনি গ্যাসের বয়লার খুলে পানি গরম করে ইউয়ান ইউয়ানের বাবার পায়ের ক্ষতস্থানের ওষুধ বদল করেন । কাজের সময়ে অসাবধানে ইউয়ান ইউয়ানের বাবার পা আহত হয়েছিল । এখন আবার নতুন ওষুধ লাগাতে হবে এবং প্রতিদিনই ওষুধ বদল করতে হয় । শীতের কারণে ইউয়ান ইউয়ানের মা গোসলখানার জানালা ও দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন ।

    প্রায় রাত ৯ টায় ইউয়ান ইউয়ান তার হোম ওয়ার্ক শেষ করে নিজের রুমে থেকে মাকে ডাকে । বারবার মাকে ডাকলেও মা'র কোনো উত্তর পেলো না ইউয়ান ইউয়ান । গোসলখানার দরজার দিকে এসে ইউয়ান ইউয়ান পানির আওয়াজ শুনল এবং গ্যাসের দুর্গন্ধ পেলো । ইউয়ান ইউয়ান ধাক্কা দিয়ে গোসলখানার দরজা খুলে দেখল বাবা মা দুজনই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছেন ।

    এই দৃশ্য দেখে ইউয়ান ইউয়ান উত্তেজিত হয়নি । সেই দৃশ্য স্মরণ করে ইউয়ান ইউয়ান বলেছে, তখন স্কুলে জরুরী আত্মরক্ষার যে জ্ঞান শিখেছি তা স্মরণ করেছি, আমি শিক্ষকের কথা অনুযায়ী সর্বপ্রথমেগ্যাস বন্ধ করি এবং জানালা খুলে দেয়ার চেষ্টা করি । ঘরে অবশিষ্ট গ্যাস ছড়িয়ে আছে , টেলিফোন করায় বিস্ফোরণ বা অগ্নিকান্ড হতে পারে , এই ভয়ে ইউয়ান ইউয়ান বাবার মোবাইলফোন নিয়ে বাসার বাইরে গিয়ে ১১০ নম্বরে পুলিশ বিভাগ এবং ১২০ নম্বরে হাসপাতালের কাছে ফোন করে । তার পর ইউয়ান ইউয়ান কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে টেলিফোন করে সাহায্যের অনুরোধ জানায় ।

    ইউয়ান ইউয়ানের টেলিফোন পেয়ে নানশান এলাকার নানথৌ পুলিশ বিভাগের পুলিশরা ৩ মিনিটের মধ্যে এবং সঙ্গে সঙ্গে নানশান হাসপাতালের এ্যাম্বুল্যান্স ইউয়ান ইউয়ানের বাসায় পৌঁছায় । ডাক্তারের ত্রানের প্রচেষ্টায় একই দিন রাত ১২টায় ইউয়ান ইউয়ানের বাবা জেগে ওঠেন । দ্বিতীয় দিন সকাল ২টায় ইউয়ান ইউয়ানের মা'র জ্ঞানও ফিরে এসেছে । ইউয়ান ইউয়ানের মা যখন চোখ খোলেন , তখন ডাক্তার তাঁকে যে প্রথম কথা বলেছেন তা হল , আপনার মেয়ে আপনাকে বাঁচিয়েছে ।ডাক্তাররা বলেছেন, কী সর্বনাশ ! যদি আর ২০ মিনিট দেরী হতো ,তাহলে এই স্বামী-স্ত্রীকে বাঁচানো যেতো না । মৃত্যু একজন ৮ বছর বয়সী মেয়ের সামনে থামতে বাধ্য হল ।

    নানথৌ পুলিশ বিভাগের পুলিশ লিয়াং বলেছেন , ইউয়ান ইউয়ানের বাড়ি শহর কেন্দ্র থেকে কিছু দূরে । টেলিফোন করার সময়ে সে স্পষ্ট ও নির্ভুলভাবে নিজের ঠিকানা জানিয়েছে । এটা আকস্মিক ঘটনার সামনে অনেক বয়স্ক মানুষের পক্ষেও সহজ ব্যাপার নয় । ডাক্তার ও পুলিশরা যে ৩ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পেরেছেন , তা নিতান্তই ইউয়ান ইউয়ানের অবদান ।

    শিক্ষিকা ছিউ পাওলান ইউয়ান ইউয়ানকে সঙ্গে নিয়ে পেইচিংয়ে " নির্বাচনীতত্পরতা"য় অংশ নিতে যান । তিনি বলেছেন,এখন বহু বাবামা নিজের সন্তানকে পিয়ানো বা ইংরেজী শিখতে পাঠান ,কিন্তু তাঁরা সন্তানকে আত্মরক্ষার জ্ঞান শেখানোর গুরুত্ব উপেক্ষা করেছেন । ইউয়ান ইউয়ান"চীনের গৌরব"নির্বাচিতহয়ে সবাইকে জানাতে চায় যে , সন্তানদের জীবিত থাকার শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত । ইউয়ান ইউয়ানের কাহিনী অনেক বয়স্ক মানুষকে এই শিক্ষা দিয়েছে যে,সন্তানদের নিরাপত্তা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে ।

    ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর ইউয়ান ইউয়ান টেলিফোনে সংবাদদাতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে । বাবামা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছেন দেখে তোমার ভয় হয়নি ? তুমি কি কাঁদো নি ? সংবাদদাতার এই প্রশ্নের উত্তরে ইউয়ান ইউয়ান বলেছে , প্রথমে আমি উত্তেজিত হলাম , কিন্তু পরক্ষণেই আমি শিক্ষকের শেখানো উপায় স্মরণ করেছি । আমি কাঁদিনি । কারণ কেঁদে কোনো লাভ নেই । কাঁদলে আরও উত্তেজিত হয়ে উপায় খুঁজে বের করতে পারব না । তখন শুধু আমি একা, পরামর্শ করার এমন কোনো লোক ছিলেন না , আমি উত্তেজিত হতে পারি না , আমাকে উপায় খুজে বের করতে হবে।

    তুমি কি করে জানো বাবামা গ্যাসের বিষক্রিয়ার শিকার হলেন ? ইউয়ান ইউয়ান বলেছে , বাবামা মাটিতে পড়ে আছেন দেখে আমি তাদেরকে ডাকাডাকি করি,কিন্তু তাঁরা কোনো উত্তর দিলেন না । এ সময়ে আমি গ্যাসের গন্ধ পেলাম , গ্যাসের নীল শিখা দেখলাম এবং শিস শিস আওয়াজ শুনলাম । তখনি আমি বুঝেছি, বাবামা বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছেন । শিক্ষকরা আমাদেরকে বলেছেন ,এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে গ্যাস বন্ধ করতে ও জানালা খুলতে হবে এবং তার পর টেলিফোন করে সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে ।

    ইউয়ান ইউয়ান জানায় , গ্যাসের বিষক্রিয়ার বিষয় ছাড়াও সে আরও জানে ,কেউ জলে ডুবে দম বন্ধ হলে সর্বপ্রথমে তার মুখের জিনিস বের করতে হবে ,তার পর তাকে কৃত্রিম শ্বাস করাতে হবে । কারও নাকে রক্ত জমলে তার কপালে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে ।

    ইউয়ান ইউয়ান বলেছে ,পুরস্কার পেয়ে সে খুব খুশি । সে আগের মতো ভালভাবে পড়াশুনা করবে । বড় হলে সে মডেল হতে চায় । সে তার সমবয়সী ছেলেমেয়েদেরকে বলতে চায় : ভালভাবে পড়াশুনা করো, সমাধান করা যায় না এমন সমস্যার সম্মুখীন হলে টেলিফোনের মাধ্যমে সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করো । চোর হলে ১১০ নম্বরে পুলিশকে , বাসায় কেউ অসুস্থ হলে ১২০ নম্বরে হাসপাতালকে আর আগুণ লাগলে ১১৯ নম্বরে অগ্নিযোদ্ধাদের ফোন করো । পক্ষান্তরে সাধারণ সময়ে বাবামার উচিত সন্তানকে আত্মরক্ষা ও অন্যান্যকে বাঁচানোর সাধারণ জ্ঞান শেখানো ।