v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-30 21:13:16    
সংস্কৃতিক শহর----থিয়েনজিন

cri
    থিয়েনজিন শহর উত্তর চীনের সমভূমিতে অবস্থিত। এই শহরের ইতিহাস ছ'শতাধিক বছরের। রাজধানী পেইচিং থেকে থেকে হাইওয়ে ধরে থিয়েনজিন যেতে মাত্র এক ঘন্টা লাগে। এক হাজার বছর আগে থিয়েনজিন কেবল একটি স্থল আর সমুদ্রবন্দর ছিল। ৬০০ বছর আগে থিয়েনজিন একটি শহরের রুপ নেয়। থিয়েনজিন শহরের কথা উল্লেখ করলে লোকেদের মনে পড়ে এই শহরের স্থানীয় অপেরা । সুতরাং থিয়েনজিন চীনের একটি পুরাতন সাংস্কৃতিক নগর ।এই শহরের স্থানীয় অপেরা, লোক চিত্রাঙ্কনএবং নানা ধরনের পুরাকীতি সুবিখ্যাত। আজকের এই আসরে প্রথমে আপনাদের এই শহরের কয়েকটি পুরাতন স্থাপত্য সম্বন্ধে কিছু বলবো। তাহলে এখন এই শহরের কনফুসিয়াস মন্দির নিয়ে শুরু করি।

    চীনের অনেক জায়গায় কনফুসিয়াস মন্দির আছে। কনফুসিয়াস যেমন ছিলেন চীনের ইতিহাসের বিখ্যাত চিন্তাবিদ আর শিক্ষাবিদ তেমনি তাকে পুজা করার জায়গা আর গবেষণা করার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অনেক। পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে মোট দু'হাজারাধিক কনফুসিয়াস মন্দির আছে। বর্তমানে তিন শতাধিক কনফুসিয়াস মন্দির অপেক্ষাকৃতভাবে সুসংরক্ষিত আছে। থিয়েনজিনের কনফুসিয়াস মন্দির এ সব মন্দিরেমধ্যে অন্যতম।

    থিয়েনজিনের কনফুসিয়াস মন্দির হচ্ছে থিয়েনজিন শহরের কেন্দ্র স্থানে সবচেয়ে সম্পূর্ণ এবং সবচেয়ে বড় আকারের প্রাচীন স্থাপত্যের সংগ্রহশালা । থিয়েনজিনের কনফুসিয়াস মন্দির জাদুঘরের উপ পরিচালক ম্যাডাম জেন ঠং ব্যাখ্যা করে বলেছেন, কনফুসিয়াস মন্দির পরিদর্শন করার সময় পযর্টকরা আরও ভালভাবে চীনের প্রাচীকালের ' কর্মকতার পদে উন্নীত হওয়ার' প্রক্রিয়া জানতে পারেন। তিনি বলেছেন,

    প্রাচীনকালে মানুষ কেবল কনফিউসিয়াস মন্দিরে প্রবেশ করেই শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেতেন। কারণ তা ছিলো প্রশাসকদের পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওখানে পড়াশুনা করলে তত্কালীণ কতৃর্পক্ষের আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। যদি কেউ পরীক্ষায় প্রথম ,তাহলে তিনি খুব শীঘ্রই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হতে পারতেন। এ কথা বলা যায় যে কনফিউসিয়াস মন্দির ছিল অতীতে কর্মকর্তায় পরিণত হবার একটি সোপান।

    অবশ্যই বর্তমানে কনফুসিয়াস মন্দির আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভুমিকা নেই। এখন এটা পরিদর্শন আর পূজা করার জায়গায় পরিণত হয়েছে। প্রতি বছরের বসন্তকাল আর শরত্কালে থিয়েনজিন কনফুসিয়াস মন্দিরে নিদির্স্ট সময়ে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কারণ বসন্তকাল আর শরত্কাল যথাক্রমে কনফুসিয়াসের জন্ম আর মৃত্যুর সময়।

    কনফুসিয়াস মন্দিরের কাছে রয়েছে থিয়েনজিন শহরের ঢাকঢোলেরটাওয়ার। এই টাওয়ার ১৪ শতাব্দীতে অথবা চীনের মিং রাজবংশের প্রথম দিকে নির্মিত হয়। ঢাক ঢোলের টাওয়ার বলা হলেও বাস্তবে এটা হল একটি ঘন্টা টাওয়ার । এই টাওয়ার ইতিহাস বৈচিত্রময়। থিয়েনজিন ঢাক ঢোল টাওয়ার পরিচালক ম্যাডাম ই হুওয়া সংবাদদাতাকে বললেন, ইতিহাসে এই ঢাক ঢোল টাওয়ার দু'বার নির্মান করা আর ভেংগে দেওয়া হয়। তিনি বলেছেন,

    ১৯০০ সালে আটটি দেশের যৌথ বাহিনী থিয়েনজিনে অনুপ্রবেশ করার পর ১৯০১ সালে থিয়েনজিনের দেওয়াল ভেংগে দিতে বাধ্য হয়। তখন ঢাক ঢোল টাওয়ার ভেংগে দেওয়া না গেলেও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন টাওয়ারের ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্তহয়। ১৯২১ সালে এই টাওয়া আবার মেরামত করা হয়। মেরামত হওয়ার পর বাইরে থেকে lদেখলে টাওয়ারটি আগের চাইতে আরও সুন্দর হয়। টাওয়ার আকার আগের চাইতেও অনেক বড় হয়েছে। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, থিয়েনজিন শহরের নির্মান কাজ দ্রুতভাবে বিকশিত হয়েছে। রাস্তা প্রসারিত করার জন্যে ১৯৫২ সালে এই টাওয়া ভেংগে দেওয়া । থিয়েনজিনের জাতীয় সংস্কৃতি সম্প্রচার করার জন্যে ২০০০ সালে একই জায়গায় এই ঢাক ঢোল টাওয়ার আবার নির্মিত হয়।

    এখন পযর্টকরা যে টাওয়ার দেখছেন, তা হল ২০০০ সালের নির্মিত টাওয়ার। এই নতুন টাওয়ার পুরাতন টাওয়ারের শৈলী অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে। টাওয়ারের উচ্চতা আগের তিন তলা থেকে পাঁচ তলায় বেড়েছে। আগের লোহিত ঘন্টা একটি তিন টন ওজনের ব্রান্জ ঘন্টায় পরিবর্তিত হয়েছে। যারা এখানে ভ্রমণ করতে আসেন তারা এই ঘন্টায় আঘাত করতে পারেন। তারা সশরীরে থিয়েনজিন শহর কাঁপানো ঘন্টার আওয়াজ অনুভব করতে পারেন।

    শ্রোতা বন্ধুরা, কনফুসিয়াস মন্দির আর ঢাক ঢোল টাওয়া পরিদর্শনের পর চলুন আমরা থিয়েনজিনের আরেকটি জায়গা ঘুড়ে আসি। এই জায়গা থিয়েনজিনের স্থানীয় অপেরা শোনার আদর্শ জায়গা। জায়গাটির নাম কুওয়াংতং থিয়েটার ।

    থিয়েনজিনের কুওয়াংতু থিয়েটার দেখতে পেইচিং শহরের চক মেলানো বাড়ীর মতো। উদ্যানের দরজার আকার বিরাট। দেওয়াল উঁচু উঁচু। এই থিয়েটারের স্থাপত্যে দক্ষিণ চীনের কুওয়াংয়ের স্থাপত্যের শৈলী প্রতিফলিত হয়। এ থেকে বুঝা যায় যে, থিয়েনজিনে বসবাসরত কুওয়াংতুবাসীরা থিয়েনজিন শহরের জন্যে অনেক অবদান রেখেছেন।

    এই থিয়েটার হয়তো এমন একটি থিয়েটার যা পৃথিবীতে সংক্ষরিত কয়েকটি চীনের প্রাচীন শৈলীসম্পন্ন স্থাপত্যের অন্যতম। এই থিয়েটারের ভিতরে সাত আট শো লোক বসতে পারেন। উপর তলায় সাধারণত বক্ম এবং নিচ তলায় শুধু সাধারণ সীট। থিয়েনজিন অপেরা যাদুঘরের উপ মহা পরিচালক শিয়েবোমে ব্যাখ্যা করে বলেছেন,

    শুনা গেছে, এই যাদুঘরের ছাদ তিনটি বড় কাঠের উপর নির্ভর করে। এ সব কাঠ দক্ষিণ চীন থেকে আনা হয়। সাধারণত একটি স্তম্ভের জন্যে একটি সম্পূর্ণ কাঠ ব্যবহার করা হয়। কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ মিটার লম্বা গাছ থেকে এই কাঠ তৈরী করা হয়।

    শ্রোতা বন্ধুরা, দশনেই বিশ্বাস। সুযোগ পেলে থিয়েনজিন দেখতে যাবেন। আপনি অবশ্যই থিয়েনজিনের পুরাতন সংস্কৃতি অনুভব করতে পারবেন।