v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-29 20:52:28    
মিয়াও জাতির সূচিশিল্পকর্ম ও তার প্রতিনিধি চাং ছুন ইং

cri
    দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুই চৌ প্রদেশের মিয়াও জাতির নারীদের সূচিশিল্পকর্ম বিখ্যাত । অনেক লোক মিয়াও জাতির নারীদের হাতের সূচিশিল্পকর্ম পছন্দ করেন ।

    দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুই চৌ প্রদেশে অনেক সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে মিয়াও জাতি একটি । মিয়াও জাতির নারীদের জীবনে সূচিশিল্প শেখা এক অবশ্যকরণীয় কাজ । দশ- বারো বছরের কিশোরী থেকে সাদা চুলের বৃদ্ধা পর্যন্তসবাই সূচিকর্মে পারদর্শী । তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের পোশাক ও উত্সবের সময় পরিধেয় সুন্দর পোশাক আর বিছানাপত্রগুলোতে সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের সূচিকর্ম করেন । ছোট বেলা থেকে মিয়াও জাতির মেয়েরা নাচগান ও সূচিকর্ম শিখেন । একটি মেয়ে যদি নাচগান করতে পারে এবং সুন্দরভাবে সূচিকর্ম তৈরী করতে পারেন , তাহলে তার বাবা মা গৌরব বোধ করেন এবং মনে করেন তাদের মেয়ে অবশ্যই ভালো জামাই পাবেন । তাই মেয়েরা সাত-আট বছর বয়স থেকেই মায়ের কাছ থেকে সূচিশিল্প শিখতে শুরু করে । চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে তারা সূচিশিল্প ভালোভাবে আয়ত্ত করেন । মেয়েরা সাধারণতঃ বাসায় মা বা বড় বোনের কাছ থেকে সূচিকর্ম শিখে , বাইরে ওস্তাদের কাছে শিখেন না। চাং ছুন ইং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , আমি ছোট বেলা থেকেই নিজের কাপড়ের সূচিকর্ম নিজেই করি । শহরে লেখাপড়া না জানলে অন্যরা ছোট করে দেখেন । কিন্তু আমাদের গ্রামে একজন যুবতী সুন্দর সূচিশিল্পকর্ম না জানলে পরিবারপরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের প্রশংসা পাবে না , তিনি ভালো স্বামীও পাবেন না ।

    চান ছুন ইংয়ের বয়স ৩৬ বছর । তিনি কুয়েই চৌ প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের একটি মিয়াও জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে থাকেন । তিনি প্রাদেশিক রাজধানী কুয়েই ইয়াং শহরে একটি সূচিশিল্পকর্মের দোকান খুলেছেন । এই দোকানে তার নিজের ও গ্রামের মেয়েদের তৈরী সূচিশিল্পকর্ম বিক্রি হয় । সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে দেয়া সাক্ষাত্কালে চাং ছুন ইং বিশেষভাবে মিয়াও জাতির অধিবাসীদের উত্সবের পোশাক পরেছেন । তার গায়ের কালো রংয়ের সুতি কাপড়ে , লম্বা বিনুনি করা স্কার্ট , কোমরবন্ধের সামনে ও পিছনে আর জুতায় অনেক লাল ও সবুজ রংয়ের সূচিশিল্পকর্ম আছে । সুন্দর পোশাক পরার পাশাপাশি তিনি মাথায় , গলায় ও বাহুতে প্রচুর রুপার অলংকার পরেছেন , দেখতে দারুণ লাগছিলো ।

    চাং ছুন ইং বলেছেন , তার গায়ের কাপড়ের সূচিকর্ম তিনি ও তার বোন করেছেন । মিয়াও জাতির সূচিশিল্পকর্মের পদ্ধতি ত্রিশটিরও বেশি । কোনো কোনো সূচিকর্ম খুব কঠিন বলে ওস্তাদের কাছে পাঠাতে হয় । চাং ছুন ইং ছোট বেলা থেকেই সূচিশিল্পকর্ম পছন্দ করেন । তিনি সেলাইয়ের প্রায় সব পদ্ধতি আয়ত্ত করেছেন । সাক্ষাত্কালে তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে তার সূচিশিল্পের নৈপুন্য দেখিয়েছেন ।

    মিয়াও জাতির ঐতিহ্যিক রীতি অনুসারে মেয়েরা বিশ বছরের আগে বাড়ি ত্যাগ করতে পারেন না , তাদের লেখাপড়া শিখতে হয় না , বাড়ীর কাজ ও সূচিশিল্প শিখাই তাদের প্রধান কাজ । চাং ছুন ইং তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম বলা যায় । চাং ছুন ইং বিশ বছর বয়সে গ্রাম ত্যাগ করে কুয়াং চৌ শহরের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেন । তিনি এই কারখানায় মেশিন দিয়ে কাপড়ে সূচিকর্ম তৈরীর কৌশল আয়ত্ত করেন । কিন্তু তিনি মনে মনে নিজের জন্মস্থানের হস্তসূচিশিল্প পছন্দ করেন । তাই অবসর সময় তিনি ঐতিহ্যিক সূচিকর্মের কাজ বন্ধ করেন নি । পরে তার তৈরী সূচিকর্ম আশেপাশের লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং পরে তিনি পেইচিংয়ের একটি প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে । অনেক লোক হস্তসূচিশিল্প পছন্দ করেন বলে চাং ছুন ইং পেইচিংয়ে মিয়াও জাতির ঐতিহ্যিক পোশাকের একটি দোকান খুলেছেন । পেইচিংয়ের অনেক বিদেশী চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর বৈশিষ্ট্যময় বেশভুষা পছন্দ করেন এবং সূচিশিল্পকর্ম কিনে ঘর সাজান । পেইচিংয়ের দোকানে কেনা-বেচা ভালো হলেও বাবা মা ও ছেলেমেয়ের জন্য চাং ছুন ইং জন্মস্থানে ফিরে গেলেন । কিন্তু পেইচিং ও দেশের অন্যান্য জায়গায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে চাং ছুন ইং সূচিশিল্পকর্মের মূল্য ও চাহিদা বুঝতে পেরেছেন । তিনি জানেন শহরের অনেক লোক মিয়াও জাতির সূচিশিল্পকর্ম পছন্দ করেন , তারা নানা ধরনের সূচিশিল্পকর্ম সংগ্রহ করেন এবং এগুলো দিয়ে ঘর সাজান । তিনি এটাও দেখেছেন যে মিয়াও জাতির মেয়েরা আর গ্রামের বাড়ীতে বসে বসে সূচিকর্ম করতে চান না , তারা গ্রাম ছেড়ে শহরে কাজ করতে বা পড়াশুনা করতে যাচ্ছেন । তাই মিয়াও জাতির ঐতিহ্যিক সূচিশিল্প বিলুপ্ত হবার সম্ভাবনা আছে । তাই চাং ছুন ইং অর্থবিনিয়োগ করে নিজের জন্মস্থানে একটি সূচিশিল্প কারখানা খুলেছেন । তার কারখানায় পঞ্চাশের মতো শ্রমিক আছে । তিনি সূচিশিল্পকর্ম তৈরীর সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজও করেন । তিনি বলেছেন , এখন সূচিশিল্পকর্মের দাম ক্রমেই বাড়ছে । কারণ গ্রামের যুবতী মেয়েরা বাসায় বসে সূচিকর্ম করতে চায় না , তারা বাইরের পৃথিবী দেখতে চায় । কিন্তু মনোযোগ সহকারে কাজ করতে না পারলে হাতের সূচিকর্ম ভালো হবে না । তাই আমি শ্রমিকদের সূচিকর্ম তৈরীর সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়া শেখার ব্যবস্থাও করেছি । চাং ছুন ইংয়ের কারখানার সূচিকর্মগুলো কুয়াং চৌ শহরের বাজারে বিক্রি হয় । এক সেট মিয়াও জাতির ঐতিহ্যিক পোশাক তৈরী করতে অনেক সময় লাগে ,একজন শ্রমিক বছরে মাত্র দুই সেট তৈরী করতে পারেন , এই ধরনের একসেট পোশাকের দাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার । মিয়াও জাতির ঐতিহ্যিক পোশাকের দাম বেশি বলে তা সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে । তাই চাং ছুন ইং বাজারের চাহিদা অনুসারে মিয়াও জাতির সূচিশিল্প দিয়ে আধুনিক জামা-পোশাক আরো সুন্দর করার চেষ্টা করেছেন । তিনি বলেছেন , মিয়াও জাতির সূচিশিল্পকেও বাজারের চাহিদা পূরণ করতে হবে । হান জাতির লোকেরাযদি আমাদের সূচিকর্ম পছন্দ করেন , তারা আমার কারখানার তৈরী সূচিকর্ম কিনে নিজের পোশাকের পাড় , কলার বা হাতায় সূচীকর্ম করাতে পারেন । এই ধরনের সূচিকর্ম ক্রেতারা পছন্দ করেন , দামও কম । তা ছাড়া চাং ছুন ইং ও তার শ্রমিকদের তৈরী সিল্কের চাদর , ওড়না ও টাই ইত্যাদি সূচিকর্ম বাজারে খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে ।

   চাং ছুন ইং সূচিশিল্পকর্ম তৈরী করা ছাড়াও গ্রামে সংরক্ষিত পুরানো সূচিকর্ম সংগ্রহের চেষ্টা করেন । তিনি বলেছেন , এই সব পুরনো সূচিশিল্পকর্ম মিয়াও জাতির মূল্যবান সম্পত্তি । এখন সংগ্রহ না করলে হয়ত আমরা এই সম্পত্তি চিরকালের জন্য হারাবো । তিনি আরও বলেছেন , আমার সূচিশিল্প কারখানা চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য অর্থ যোগাড় করে নতুন বাড়ী তৈরী নয় , আমি আমার সব অর্থ ও শক্তি মিয়াও জাতির সূচিশিল্প প্রসারের কাজে ব্যবহার করবো ।