আগে চীনাদের চোখে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্র এবং সহকারী গ্রামকর্তার মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না । কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্ররা মনে করতেন যে , গ্রামে গেলে তাদের নিজেদের বিকাশের সম্ভাবনা কম । কিন্তু আজ এই ধারণার কিছু পরিবর্তন ঘটছে । চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী নিজেদের মেধা প্রসারিত করার জন্যে বিশাল গ্রামাঞ্চলে ছুটে যেতে শুরু করেছেন ।
গত কয়েক বছরে চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের ফিং কু এলাকার পাহাড়ে অবস্থিত কোয়া চিয়া ইয়ু গ্রামে কৃষকদের উদ্যোগে স্থানীয় রীতিনীতিসম্পন্ন পর্যটন শিল্প চালু করা হয় । গ্রামে সারিবদ্ধভাবে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠের বাড়ি নির্মাণ করা হয় । বাড়িগুলোর বাইরে সৌরশক্তি-চালিত বা বাতাসে- চালিত জেনারেটর বসানো হয় । গোটা গ্রামে সরলতার পাশাপাশি সবখানেই বিরাজ করছে আধুনিক আমেজ ।
এই গ্রামের সহকারী কর্তা হু থিয়ান ওই একজন সবল তরুণ । ২০০৫ সালে তিনি পেইচিং উদ্যান ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করার পর এই গ্রামে এসে সহকারী গ্রামকর্তা পদে নিযুক্ত হন । তিনি বলেছেন , একদিকে কোয়া চিয়া ইয়ু গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রদের কর্মসংস্থানের জন্যে বেশ ভালো শর্ত সরবরাহ করেছে । অন্যদিকে তিনি মনে করেন যে ,এখানে এসে তিনি কৃতিত্ব দেখাতে পারবেন । তিনি বলেছেন ,
পেইচিংয়ের ফিং কু এলাকা সরকার গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রদের জন্যে সুবিধাজনক নীতি প্রণয়ন করেছে এবং তাদের জন্যে বেশ ভালো প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করেছে । এই গ্রামে পর্যটন শিল্পের দ্রুত প্রসার হচ্ছে । বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যে বিষয় শিখেছি , সেই বিষয় এই গ্রামের পর্যটন শিল্পের বিকাশের চাহিদার সংগে সংগতিপূর্ণ । কাজেই আমার মনে হয় এখানে এসে আমি কিছু কাজ করতে পারি ।
গত কয়েক বছরে হু থিয়ান ওইয়ের মত গ্রামে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে । এই সম্পর্কে কোনো পরিপূর্ণ পরিসংখ্যান না থাকলেও চীনের অধিকাংশ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক কর্মকর্তা রয়েছেন । যেমন মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের ফিং তিং শান শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক কর্মকর্তদের সংখ্যা৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে । তারা গ্রামে গিয়ে শিক্ষাগত জ্ঞান , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিখার ব্যাপারে কৃষকদের সাহায্য করেন, চাষাবাদ করার পাশাপাশি বহুমুখী শিল্পের প্রসারের ব্যাপারে তাদের সহায়তা করে উত্পাদন বাড়িয়েছেন । এভাবে তারা কৃষকদের সংগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন ।
চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীরা গ্রামে গিয়ে যে কর্মসংস্থান করেছেন , সে সম্বন্ধে বিশ্লেষণ করে চীনের সমাজ একাডেমীর লোকসংখ্যা গবেষণা সংস্থার অধ্যাপক ওয়াং তে ওন বলেছেন , প্রথমত গত কয়েক বছরে চীনের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেশি সংখ্যায় ছাত্রদের ভর্তি করেছে । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রদের সংখ্যা বেড়ে গেলে তাদের সবাইকে শহরে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া সম্ভব নয় । দ্বিতীয়ত গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতির বিকাশের সংগে সংগে উচ্চ শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের চাহিদাও অনেক বেড়েছে । তিনি বলেছেন , গ্রামীন অর্থনীতির উন্নতির সংগে সংগে গ্রামের গঠনকাজের জন্যে কিছু যোগ্য ব্যক্তির দরকার পড়বে । এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীরা গ্রামে চাকরী করলে সেখানে তাদের বিকাশের বিরাট অবকাশ থাকবে । চীনের উচ্চ শিক্ষার প্রসারের সংগে সংগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংখ্যা বেড়ে গেছে । অন্যদিকে গ্রামীন অর্থনীতির বিকাশের সংগে সংগে তাদের চাহিদাও দেখা দিয়েছে । তাই অধিক থেকে অধিকতর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গ্রামে গিয়ে কর্মসংস্থান করতে শুরু করেছেন ।
তাহলে যারা গ্রামে গিয়ে চাকরী করছেন , তাদের জীবন ও কাজের অবস্থা কি রকম ? কোয়া চিয়া ইয়ু গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হু থিয়ান ওই বলেছেন , জীবনে ও কাজকর্মে আমি পরিপূর্ণতা বোধ করি । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তার বিষয় ছিল পর্যটন ব্যবস্থাপনা । এই গ্রামে এসে তিনি ঠিক তার পড়ার বিষয় কাজে লাগিয়েছেন । এই গ্রামে আসার পর তিনি প্রথমে গ্রামবাসীদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে শিখান । আগে তারা কেবল চাষবাস করতে জানতেন । তিনি কম্পিউটারে পর্যটন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও ইমেল পাঠানোর ব্যাপারে গ্রামবাসীদের শিখান । হু থিয়ান ওই অবসর সময়ে গ্রামের জন্যে একটি পর্যটন ওয়াইবসাইটও স্থাপন করেছে যাতে এই গ্রামের খ্যাতি সম্প্রসারণ করা যায় ।
হু থিয়ান ওইয়ের প্রচেষ্টা উর্ধতন নেতা ও সহকর্মীদের প্রশংসা পেয়েছে । কোয়া চিয়া ইয়ুর গ্রামকর্তা চাং ছিয়াও ছি হু থিয়ান ওইয়ের কথা উল্লেখ করলে তার মুখে আর হাসি ধরে না । তিনি বলেছেন ,
ছোট হু একজন সত্ ও কাজের লোক । পর্যটন শিল্পের বিকাশের প্রকল্পে তিনি তার তত্ত্ব বাস্তবায়িত করতে পারেন । এখানকার পর্যটনের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে তিনি কিছু অভিজ্ঞতার সারসংকলন করতে পারেন এবং কিছু দুর্বলতাও দেখিয়ে দিতে পারেন । গ্রামে এই ধরণের ছাত্রদের একান্ত প্রয়োজন । জনসাধারণ তাদের স্বাগত জানায় ।
কোয়া চিয়া ইয়ু গ্রাম থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পো লি থাই গ্রামেও এমন একজন ছাত্রী আছেন । তার নাম সুং সিয়াও না । যখন আমাদের সংবাদদাতা সেখানে গিয়েছেন , তিনি কম্পিউটার শিখার ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সাহায্য করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন । তিনি বলেছেন , তিনি গ্রামে থেকে কিছু কাজ করবেন । এখন তিনি গ্রামের সংগে মিশে গেছে এবং এখানে কাজ করতে পেরে গর্ব বোধ করছেন । তিনি বলেছেন ,
এই গ্রামের সহকারী কর্তা হওয়ার পর আমার চিন্তাধারা অনেক পরিপক্ক হয়েছে । নিজের সামর্থ্যও অনেক উন্নত হয়েছে । এখন গ্রামের সুন্দর দৃশ্য দেখে আমি খুবই গৌরব বোধ করি । আমি কিছু কিছু ছোট কাজ করে গ্রামের জন্যে একটু অবদান রেখেছি । যখন দেখতে পাচ্ছি গ্রামবাসীরা সুখ-স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছেন , তখন আমি বিশেষভাবে আনন্দিত ।
চীনে হু থিয়ান ওই ও সুং সিয়াও নার মত আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা গ্রামে গিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে নিজেদের আদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন এবং নিজেদের জীবনের মূল্য হাসিল করছেন । চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে , ৮০ শতাংশ ছাত্র তাদের বাছাইতে সন্তুষ্ট ।
|