v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-24 19:06:48    
চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের কয়েকজন সংখ্যালঘূজাতি নারী সদস্য

cri
    চীন ৫৬টি জাতিসম্পন্ন এক দেশ । এর মধ্যে ৫৫টি সংখ্যালঘূজাতি । এই ৫৫টি জাতির মোট লোকসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি । এটা চীনের মোট লোকসংখ্যার ৯ শতাংশ । সবেমাত্র সমাপ্ত চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ২ হাজার ৬০০ জন প্রতিনিধির মধ্যে ৩০০রও বেশিজন প্রতিনিধি সংখ্যালঘূজাতি অধ্যুষিত এলাকা থেকে আসেন ।

    ২৭ বছর বয়সী পাং ইয়েনহুয়া ইয়ুন্নানপ্রদেশের ই জাতির একজন প্রতিনিধি । ই জাতি চীনের সংখ্যালঘুজাতিগুলোর অন্যতম । তারা প্রধানত দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুন্নান, সিছুয়ান প্রভৃতি প্রদেশে বসবাস করেন । ইয়ুন্নান প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ইজাতি বসবাস করে । পাং ইয়েনহুয়া যেমন একজন কনিষ্ঠ প্রতিনিধি তেমনি একজন বিকলাঙ্গ প্রতিনিধি । যখন তার সঙ্গে দেখা হয় তখন বিশ্বাস করা হয় না যে,ছোটোখাটো ও লাজুক মানুষটি ২০০২ সালে বিশ্ব বিকলাঙ্গ গেমসে ২০০ মিটারের মিশ্র সাঁতারে স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন ।এখন পাং ইয়েনহুয়া ইয়ুন্নান প্রদেশের এক মাধ্যমিক ও বিশেষ পেশাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা । তিনি সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন,তিনি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন । ছাত্রছাত্রীরা আন্তরিকভাবে তাকে দিদি ডাকে ।

    এক বিকলাঙ্গ প্রতিনিধি হিসেবে তিনি মূলস্তরের জনসাধারণ , বিশেষ করে বিকলাঙ্গ মানুষদের জীবনযাত্রার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেন । তিনি বলেছেন,এখন আমাদের বিকলাঙ্গদের নিশ্চয়তাবিধান ব্যবস্থা উন্নত করার অবকাশ আছে । আমি মনে করি,নিজের জীবনযাত্রা উন্নত হলে বিকলাঙ্গ ভাইবোনদের কথা ভুলতে হবে না ।

    এ  পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরে অনুষ্ঠিত জাতীয় গণ কংগ্রেসের তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলনে পাং ইয়েনহুয়া বিকলাঙ্গদের নিশ্চয়তাবিধান আইন সংশোধন করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন । তার প্রস্তাব সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে এবং কার্যকরসমাধান হয়েছে । পাং ইয়েনহুয়া আনন্দের সঙ্গে বলেছেন,এখন ইয়ুন্নান প্রদেশের নতুন নির্মিত আবাসিক এলাকাগুলোতে বিকলাঙ্গদের জন্যে বিশেষ পথ বসানো হয়েছে । তাছাড়া সরকারী আর্থিক সাহায্যে কিছু পাব্লিক জায়গার বাধাবিহীন ব্যবস্থার উন্নতিও হয়েছে । নিজের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়েছে দেখে পাং ইয়েনহুয়া অত্যন্ত আনন্দিত । তিনি আরও সাধারণ মানুষদের জন্যে কথা বলার এবং সরকারের কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করার দৃঢ়সংকল্প নিয়েছেন ।

    এ বছর পাং ইয়েনহুয়া মাধ্যমিক ও পেশাগত শিক্ষার সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাব নিয়ে পেইচিং এসেছেন । তিনি বলেছেন , আমাদের দেশে পেশাগত শিক্ষা ব্যবস্থা তেমন পরিপূর্ণ নয় । ছাত্রছাত্রীরা যখন সমাজে প্রবেশ করেন তখন তারা কর্মসংস্থানের অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন । তিনি বিশ্বাস করেন যে,তাদের মিলিত প্রচেষ্টা ও সরকারের সাহায্যে সমস্যাগুলো সমাধান হবেই ।

    চীনে লোকসংখ্যা এক লক্ষের কম এমন সংখ্যালঘুজাতি ২২টি । বুলাং জাতি এর মধ্যে একটি যা শুধু ইয়ুন্নান প্রদেশে বসবাস করে । বুলাং জাতির প্রতিনিধি মাদাম ইয়ু সুয়াইচিয়াও সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন,বুলাং জাতি সাধারণ প্রত্যন্ত পাহাড়ী গ্রামে থাকেন বলে তাদের বাইরের সঙ্গে আদানপ্রদানের সুযোগ কম,অর্থনীতি পশ্চাদপদ । দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত করার জন্যে সরকার বরাবরই বুলাং জাতিকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে আসছে ।  

    বুলাং পাহাড়ী গ্রামের নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ইয়ু সুয়াইচিয়াও স্থানীয় মহিলাদের জীবনযাপনের উপর বেশি মনোযোগ দেন । তিনি বলেছেন,সরকারের আর্থিক সাহায্যে পাহাড়ী এলাকার দরিদ্র অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে বটে, কিন্তু বুলাং জাতির নারীদের সমাজে প্রবেশ করার সচেতনতা দুর্বলএবং প্রগতিশীল কৌশল শেখার আগ্রহও তেমন বেশি নয় । শীঘ্রই শুরু হওয়া 'একাদশ পাঁচ সালা কর্মসূচি' সম্পর্কে ইয়ু সুয়াইচিয়াও আশাবাদী । তিনি বলেছেন ,এ বছর আমাদের 'একাদশ পাঁচসালা কর্মসূচি'র সূচনা বছর । এ পাঁচ বছরে আমার এলাকার গরিব অবস্থার পরিবর্তন হবে ,সরকার বুলাং জাতির নারীদের প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ দেবে বলে আমি আশা করি ।

    চিলিন প্রদেশ হুই,কোরিয়া,মান সহ বেশ কয়েকটি জাতি অধ্যূষিত প্রদেশ । এর মধ্যে ইসলামধর্ম বিশ্বাসী হুই জাতি হানজাতির সঙ্গে মিলে চিলিন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে । কোরিয় জাতির লোক সংখ্যা কম এবং চিলিন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকলেও স্থানীয় সরকার মুসলমানদের দেয়া সমর্থন ও সাহায্য কমিয়ে দেয়নি । ছোং লিয়েনপিয়াও সরকারের ভালবাসায় বড় হয়ে ওঠা একজন মুসলমান । তিনি বলেছেন, হানজাতির সঙ্গে একই জায়গায় বসবাস করলেও আমরা মুসলমানরা সর্বত্রই সযত্ন ও ভালবাসা অনুভব করতে পারি । কেন্দ্রীয় সরকার আর বিভিন্ন স্তরের সরকার সংখ্যালঘূজাতিকে খুব গুরুত্ব দেয় এবং সম্মান প্রদর্শন করে । প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি,বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার আমাদের সংখ্যালঘূজাতির ছেলেমেয়েদের বেশ কয়েকটি সুযোগসুবিধা দেয় ।

    ছোং লিয়েনপিয়াওর খাদ্য কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন । তাদের মধ্যে বেশির ভাগ হলেন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মচ্যুত শ্রমিক । হাজার হাজার বছর ধরে মুসলমানদের অভ্যাস হল " অ-মুসলমান খাবার" না খাওয়া। সংখ্যালঘূজাতির খাবার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিশ্চয়তাবিধান জোরদার সম্পর্কে প্রস্তাব তিনি দাখিল করেছেন । তিনি মনে করেন যে,মুসলমান খাবার শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভালভাবে চালু করা মুসলমানদের জীবনযাত্রা জোরদার এবং সমাজের স্থিতিশীলতা ও সংহতির পক্ষে সহায়ক হবে ।

    ৫৬টি জাতি ৫৬টি ফুল,৫৬টি জাতির ভাইবোনেরা এক পরিবারের লোক । গানের মতো গণ কংগ্রেসের মঞ্চে সংখ্যালঘূজাতির শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধিরা তত্পর আছেন । তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজদের মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে অবদান রাখছেন ।