v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-24 14:16:35    
হাইনানে সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠা অভিযান

cri
    গত ৫ বছরে দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশে পরিবেশ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেয়া , পরিবেশ -সহায়ক অর্থনীতি আর সংস্কৃতির উন্নয়নকে কেন্দ্র করে সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠা নামে একটি অভিযান চালানো হয়েছে । ২০০৫ সালের শেষ নাগাদ সারা প্রদেশে এই খাতে মোট ৫৩ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করা হয়েছে । এই অভিযানের মাধ্যমে এই প্রদেশে ৫৩ সহস্রাধিক সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে । এই সংখ্যা সারা প্রদেশের গ্রামের সংখ্যার ২২.৮ শতাংশ হয়েছে । সম্প্রতি হাইনানের পার্টি-কমিটি আর প্রাদেশিক সরকার সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠাকে সমাজতান্ত্রিক নতুন গ্রাম নির্মাণের লক্ষ্য হিসেবে ধার্য করা এবং একাদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা চলাকালে এই ধরণের গ্রামের সংখ্যা সারা প্রদেশের গ্রামের সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশিতে উন্নীত করার নির্দেশ দিয়েছে ।

    সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম গড়ে তোলায় গ্রামাঞ্চলে আগেকার নোংরা আর দূষিত পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে । এই অভিযান চালাবার জন্য শুরুতেই গ্রাম্য পরিবেশের ময়লা আর আবর্জনা দূর করার ব্যাপারে বিবিধ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । বহু বছর ধরে স্তূপীকৃত জঞ্জাল সরানো আর তা কাজে লাগানোর জন্য ডাস্টবিন আর মিথেন গ্যাস ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে , পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে এবং বৃক্ষ রোপন আর ঘাঁস লাগানো হয়েছে । এই সব ব্যবস্থা নেয়ায় গ্রামের আগেকার পরিবেশের অসঙ্গতি আর অপবিত্রতা দূর হয়ে গেছে । সম্প্রতি সংবাদদাতা হাইনানের রাজধানী হাইখৌ শহরের ইয়েন ফুং থানা , ওয়েন ছাং শহরের মেই লিউ গ্রাম আর ছুনহাই শহরের ওয়েন থুং গ্রামে সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় দেখেছেন , এই সব গ্রামে কৃষকদের আবাসের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে । এখন গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে , গ্রাম সবুজ গাছপালায় ঘেরা , পরিবেশ পরিপাটি আর বায়ুপ্রবাহ বিশুদ্ধ । বর্তমানে বহু সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে । অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী , সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠার অভিযান চালাবার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র , জাপান , থাইল্যান্ড , সিংগাপুর প্রভৃতি দেশ আর চীনের পেইচিং , হেইলুংচিয়াং , কুয়াংতুং , কুয়াংসি প্রভৃতি প্রদেশ , স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আর শহরের ৯ শতাধিক পর্যটক দল আর ৬০ হাজারেরও বেশি পর্যটক সেখানে বেড়াতে গিয়েছেন ।

    সভ্যতা সম্প্রসারন আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠার কেন্দ্রীয় মর্মতেজ হলঃ পরিবেশ সংরক্ষণের ভিত্তিতে অর্থনীতির উন্নয়ন সাধন করা আর কৃষকদের আয় বাড়ানো । সারা প্রদেশের বিভিন্ন শহর , জেলা আর গ্রামে যার যার বাস্তবতার দিক থেকে সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠার অভিযান চালাবার সংগে চাষাবাদ ও পশু পালনের কাঠামোর সংস্কার করা , কৃষকদের ঘরোয়া অর্থনীতি উন্নয়ন করা আর চাকরি করার জন্য শহরে গ্রামীণ উদ্বৃত্ত শ্রম- শক্তি পাঠানো প্রভৃতি ব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে । ফলে অর্থনীতি উন্নয়ন করা , আয় বাড়ানো আর স্বচ্ছলতা বাস্তবায়িত করার নতুন কৌশল আর প্রণালী অন্বেষণ করা হয়েছে । বিশেষ করে হাইনানের প্রচুর আলোক- রশ্মি আর উচ্চফলনশীল মিথেন গ্যাস সম্পদ কাজে লাগিয়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজারেরও বেশি নতুন ধরণের বাথরুম , গ্যাসের চুলা আর মিথেন গ্যাস ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে । এতে যেমন পরিবেশ দূষণমুক্ত হয়েছে , শক্তি সম্পদ বাঁচানো হয়েছে আর বনাঞ্চল সংরক্ষিত হয়েছে , তেমনি পশুপালন ব্রত ত্বরান্বিত করা হয়েছে , বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস উত্পাদিত হয়েছে আর দূষণমুক্ত কৃষি সম্প্রসারিত হয়েছে । ফলে হাইনানের বৈশিষ্ট্যের সংগে সংগতিপূর্ণ , মানুষ ও প্রকৃতির সমন্বিত বিকাশের অনুকূল আর সম্পদ সাশ্রয়ী ও সুষম সমাজের সংগে সংগতিপূর্ণ গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নের নতুন পথ সূচীত হয়েছে । বহু কৃষক নিজেদের বাসার সামনে ও পেছনের জমিতে নারকেল , পান , লিচু , আম প্রভৃতি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অর্থকরী ফসল চাষ করেন । ফলে যার যার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সভ্যতা সম্প্রসারিত আর বিপুলসংখ্যক পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । যেমন লিন কাও জেলার সুং মেই গ্রামে মিথেন গ্যাস , পশু পালন আর অর্থকরী ফসল চাষাবাদের প্রণালীতে , ছুং হাই শহরের পিয়েন কাও গ্রামে সভ্যতা সম্প্রসারণ ও পরিচ্ছন্ন গ্রাম আর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গ্রাম নির্মাণের প্রণালীতে এবং পাই শা লি জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলায় রবার , লতা ও বাঁশ , ওষুধ আর চা চাষাবাদের প্রণালীতে অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে ।

    সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠার অভিযান চলার সংগে সংগে কৃষকদের কিছু অপ্রীতিকর ও অশালীন আচার ব্যবহারও পরিবর্তিত হয়েছে । এতে কৃষকদের গৌরব আর আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গেছে । এই অভিযানে হাইনানের বিভিন্ন বিভাগ , শহর আর জেলায় যাবতীয় মহলের শক্তি সংগঠিত করে তত্ত্ব , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি , সংস্কৃতি ও সাহিত্য আর স্বাস্থ্যের দিক থেকে ব্যাপক কৃষকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দানের কাজ জোরদার হয়েছে ; সক্রিয়ভাবে গ্রামাঞ্চলে প্রচার ও সংস্কৃতির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , গণ -সাংস্কৃতিক আর ক্রীড়া ও বিনোদনমূলক তত্পরতা আয়োজিত হয়েছে এবং পুরানো অপবিত্র রীতি-নীতি বদলানো ও আইন জনপ্রিয় করার শিক্ষা আন্দোলন চালানো হয়েছে এবং অভদ্র আচার ব্যবহার বর্জন , জন্মভূমি ভালবাসা , মাদকমুক্ত ও পরিবার- পরিকল্পনা ভিত্তিক অগ্রণী গ্রাম প্রতিষ্ঠার তত্পরতা আয়োজিত হয়েছে । ফলে কৃষকদের কিছু অশুভ রীতি-নীতি অপসৃত হয়েছে এবং তাদের বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক উত্কৃষ্টতা উন্নত হয়েছে । আইনের অনুসারী এবং বৈজ্ঞানিক , সভ্য ও সুস্থ জীবনধারার অনুরাগী , কৃষকদের সংখ্যা আনেক বেড়েছে । এর সংগে সংগে যারা মাদক সেবক , জুয়াড়ী , মারকুটে আর অন্ধ সংষ্কারে বিশ্বাসীদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে । এখন সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রামগুলোতে শান্ত , সম্প্রীতিময় আর আনন্দপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান ।

    সভ্যতা সম্প্রসারণ আর পরিচ্ছন্ন গ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্তরের ক্যাডাররা বিশেষ করে ব্যাপক গ্রামীণ ক্যাডাররা কৃষকদের মধ্যে ধৈর্যের সংগে প্রচার আর রাজনৈতিক ও আদর্শিক কাজ চালিয়েছেন এবং তাদের পুরানো ধারণা পরিবর্তনে সাহায্য করেছেন । জন্মভূমির উত্কৃষ্টতার বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করার জন্য তারা নিজেও চাঁদা আর অনুদান দিয়েছেন । কৃষকদের স্বচ্ছলতা বাস্তবায়িত করা আর তাদের জীবনযাত্রার নানা রকম অসুবিধা দূর করার জন্য তারা স্বচ্ছলতার পথ অন্বেষণ করেছেন একং প্রায়োগিক প্রযুক্তি জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । এতে জনসাধারণের কাছে পার্টি ও সরকার আর পার্টির সদস্য ও ক্যাডারদের মর্যাদা আর আস্থা অনেক উন্নত হয়েছে ।