v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-23 16:18:58    
হারবিনের রুশ শৈলীসম্পন্ন রেস্তোরা

cri
    শতাধিক বছর আগে, অভ্যন্তরীণ আর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রভাবে হাজার হাজার রাশিয়ান ইউরেশিয়া মহাদেশ পাড়ি দিয়ে ভলগা নদীর তীর থেকে সুংহুয়া নদীর তীরে এসে পড়েন। তারা চীনের উত্তরাঞ্চলের হারবিন শহরে বসবাস করেন। শতাধিক বছর পরের আজকে বরফ আর তুষারে ঢাকা এই বিখ্যাত এই শহরের রাস্তার দু'পাশে রুশ শৈলীসম্পন্ন স্থাপত্য ছাড়াও, অনেক রুশ শৈলীসম্পন্ন রেস্তোরাঁ আছে।

    এ দুটো রেস্তোরাঁ হারবিন শহরের নাভীরেখা অথার্ত স্থল---কেন্দ্রীয় সড়কে অবস্থিত। এই কেন্দ্রীয়সড়ক হারবিন শহরের কেন্দ্র স্থলের বাণিজ্যিক হাঁটাপথ। গত শতাব্দীর বিশের দশকে রাশিয়ানরা এই সড়ক নির্মান করেছিলেন।যদি আপনি কেন্দ্রীয় সড়কে রাশিয়ার খাবার খেতে চান তাহলে আপনি হুওয়ামে পশ্চিমা খাবার রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন। এই রেস্তোরাঁ ১৯২৫ সালে খোলা হয়। এই রেস্তোরাঁ শুধু যে হারবিন শহরের সবচেয়ে পুরাতন রাশিয়ান শৈলীর রেস্তোরাঁ তাই নয়, এই শহরের সমস্ত রাশিয়া শৈলীসম্পন্ন রেস্তোরাঁর গর্বওবটে । এ কথা বলা যায় যে, প্রায় সকল হারবিনবাসী এই রেস্তোরায় খেতে আসেন।

    হুওয়ামে পশ্চিমা খাবারের রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করলে প্রথমে একজন চুল পোকা বৃদ্ধ আপনার চোখে পড়ে। এই বুড়ো লোকের নাম হুওয়াং ওয়েন লি। তাঁর  বয়স ৭৫ বছর। তিনি এই রেস্তোরাঁতে ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করেছেন। রেস্তোরাঁর সকল কর্মচারী তাঁকে দাদা ডাকে। তাঁর কাছ থেকে এই রেস্তোরাঁর পুরাতন কাহিনী শোনা সত্যিই এইটি তাত্পর্যসম্পন্ন ব্যাপার। তিনি বলেছেন,

    হুওয়ামে পশ্চিমা খাবার রেস্তোরাঁ যে রাশিয়া শৈলী খাবার পরিবেশিত হয় তা চীনের অন্য যে কোন রেস্তোরাঁতে পাওয়া যায় না। কারণ এই রেস্তোরাঁ ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এই রেস্তোরাঁর মালিক ছিলেন রাশিয়ার একজন ইহুদি লোক।

    মিস্টার হুওয়াং বলেছেন, হুওয়া মে পশ্চিমা খাবার রেস্তোরাঁর পরাতন নাম 'মায়স চা আর খাদ্য দোকান'। এই রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠাতা ছুসকেরমান। পরে রাশিয়ান লোক, জার্মান, পৌলিশ আর চীনারা এই রেস্তোরাঁ পর পর চালিয়েছিলেন। হুওয়ামে রাস্তোরাঁতে এখনও অনেক পুরাতন শৈলীর ঐতিহ্য বজায় রাখা হয়েছে। যেমন, এক বয়স্ক ওয়েটার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। এই বুড়োলোক বলেছেন,

    রাশিয়ার বড় বড় দোকান আর রেস্তোরাঁগুলোতে সাধারণত একজন প্রবীণওয়েটার থাকেন। কারণ অতিথিরা তাকে দেখে আন্তরিকতা বোধ করেন। অনেক অতিথি বলেছেন, একজন প্রবীণ এখানে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে দেখে তারা নিরাপদ বোধ করেন। মনে হয় তারা বাসায় ফিরে এসেছেন ।

    এখানে উল্লেখ করতে হবে যে, হুওয়ামে পশ্চিমা খাবারের রেস্তোরাঁয়যে খাবার পাওয়া যায় তা পুরোপুরি রাশিয়ার মতো নয়। আসলে চীনের রুচি অনুসারে কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। কোনো কোনো খাবার একেবারেরই ' চীনাদের তৈরী' রাশিয়ান ধরনের খাবার। যারা হুওয়ামে পশ্চিমা খাবার রেস্তোরাঁয় খেতে আসেন তারা এখানকার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার---লাল শাকসবজির সুপ, পটে সেদ্ধ-করা চিংড়ি মাছ খুব পছন্দ করেন। জাপানী পযর্টক ইয়ামামালা কিউজি প্রথম বার হুওয়ামে রাস্তোরাঁতে খেতে এসেছেন তিনি বলেছেন,

    এখানের রাশিয়ান খাবার খুব সুস্বাদু। আমি এখানকার সুপ খুব পছন্দ করি। সালাদও আমার প্রিয়। তা ছাড়া, পটে সেদ্ধ-করা চিংড়িও আমার ভাল লাগে । হুওয়ামে রেস্তোরাঁরপরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর । এখানে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের শৈলীর স্থাপত্য আছে।আমার মনে হয় এ সব স্থাপত্যে রাশিয়ার শৈলী প্রতিফলিত হয়।

    হুওয়ামে পশ্চিমা খাবারের রেস্তোরথেকে বের হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সড়ক বেয়ে অব্যাহতভাবে উত্তর দিকে এগিয়ে গেলে রাস্তার পূব দিকের মোড়ে একটি দোতলা হলুদ রংয়ের ভবন নজরে পড়ে। এই ভবন এক সময় হারবিনের একটি বিভাগীয় বিপনী কেন্দ্র ছিল। কিন্তু এখন খুব কম লোক তা জানেন । ১৯১৪ সালেএই বিভাগীয় বিপনী প্রতিষ্ঠিত হয় । তবে এই দোতলা ভবনের নিচ তলা হল একটি রেস্তোরাঁ, দোতলা ভবন একটি লাইব্রারিতে পরিণত হয়েছে। বিলাসী আর মর্জিত হুওয়ামে পশ্চিমা খাবারের রেস্তোরাঁর তুলনায় এই রেস্তোরাঁ সাধাসিধে । রেস্তোরাঁতে মাত্র সাত আটটি টেবিল আছে। রেস্তোরাঁর দেওয়ালে একটি তৈল চিত্রঝুলা আছে । এই তৈলচিত্রের দু'পাশে রাশিয়ার পুরাতন প্রবাসীদের পরিবার ছবিগুলো ঝুলানো আছে । এই রেস্তোরাঁরমালিকের নাম হু হং । তার বয়স ৫০ বছর ছাড়িয়ে গেছে । তিনি এক জন সংকর জাতির লোক। তিনি ব্যাখ্যা করে বললেন, দেওয়ালে ঝুলানো তৈল চিত্রের মানুষটি তাঁর নানী । নানীর ছবির পাশে একটি ছবি একজন রাশিয়ান নারীর যিনি হারবিন শহরে ৯০ বছর কাটিয়েছেন। হুহং বলেছেন, একটি পারিবারিক স্মারক ভবনে পরিণত করা এবং এক সময় হারবিন শহরে বসবাসকারী দু' লক্ষ রাশিয়ান প্রবাসীকে স্মরণ করা তাঁর এই রেস্তোরাঁ গড়ে তোলারলক্ষ্য।তিনি বলেছেন,

    সৌভাগ্যক্রমেএক দিন এই ভবন আমার নজরে পড়ল। কারণ আমি এ সব পুরাতন স্থাপত্য পছন্দ করি। তারপর আমি এই ভবনের নিচ তলা সাজিয়ে দিয়েছি। আমার মনে হয়, লোকেরা ভিতরে আসলে অতীতে চীনে বসবাসকারী রাশিয়ানদের লোকদের জীবন সম্বন্ধেসম্যক জানতে পারেন।

    এতক্ষণ আপনারা হারবিন শহরে অবস্থিত রাশিয়ান শৈলীর শৈলী পশ্চিমা খাবারের রেস্তোরাঁ সম্বন্ধেশুনলেন। যদি আপনাদের চীন সফরের সুযোগ হয়. তাহলে সশরীরে ওখানে গিয়ে রাশিয়ান শৈলীর পশ্চিমা খাবার আস্বাদন করতে পারবেন।