v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-22 21:27:06    
চলচ্চিত্র পরিচালক চাং ইয়াং

cri
    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের চলচ্চিত্র মহলে বেশ কয়েকজন ত্রিশাধিক বছর বয়সী যুব পরিচালক বেশ তত্পর রয়েছেন । তাদের পরিচালিত ছবিগুলোতে প্রধানতঃ গত বিশ-ত্রিশ বছরে চীনা নাগরিকদের জীবনের পরিবর্তন চিত্রিত হয়েছে । এই সব ছবি বিদেশের চলচ্চিত্র উত্সবগুলোতে বার বার পুরস্কার পেয়েছে ।

    সম্প্রতি চীনের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে চাং ইয়াংয়ের পরিচালিত কাহিনী ছবি ' সূর্যমুখী ' দেখানো হয়েছে । এই ছবি কিছু দিন আগে স্পেনের সেন্ট সেবাস্টিয়ান চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছে । চলচ্চিত্র ' সূর্যমুখী 'তে গত শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ত্রিশ বছরে রাজধানী পেইচিংয়ের একটি সাধারণ পরিবারের জীবন চিত্রিত হয়েছে । এই ছবিতে এই ত্রিশ বছরে ঘটা বড় বড় ঘটনাগুলোকে পটভূমি হিসেবে গ্রহণ করে এক পরিবারের বাবা ও ছেলের সম্পর্ক –- চীনের পরিবারগুলোতে সবচেয়ে উত্তেজনাময় ও সুক্ষ্ম সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়েছে । ত্রিশ বছরে বাবা ও ছেলের সম্পর্কের সুখ-দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে দুই প্রজন্মের পরিবর্তন চিত্রিত হয়েছে ।

    পরিচালক চাং ইয়াংয়ের বয়স ৩৮ বছর । তিনি পেইচিংয়ের নাগরিক । তার অভিজ্ঞতার সঙ্গে ' সূর্যমুখীর ' নায়কের অভিজ্ঞতার অনেক মিল আছে , তাই অনেক চলচ্চিত্র সমালোচক বলেছেন , এই ছবি চাং ইয়াংয়ের জীবনকথা বলা যায় । চাং ইয়াং বলেছেন , তিনি মনযোগ সহকারে এই ছবি পরিচালনার কাজ করেছেন এবং এতে নিজের অনেক অনুভুতি মিশিয়েছেন । তিনি বলেছেন , এই ছবির অনেক কাহিনী আমার জীবনের অভিজ্ঞতা। যেমন ভূমিকম্প আমার ছোট বেলার একটি অভিজ্ঞতা । এখনও আমার মনে আছে , ভূমিকম্পের দিন আমার জীবনে কি কি ঘটেছে , আমার বাবা বিছানা থেকে আমাকে কোলে নিয়ে বাইরে ছুটে যান , সঙ্গে সঙ্গে আমার বাড়ীর একদিকের দেওয়াল ধ্বসে পড়ে । এই ছবির নব্বইয়ের দশকের ঘটনাগুলো আসলে আমার বাস্তব জীবনকে প্রতিফলিত করেছে ।

    এই ছবিতে অনেক ছোট বড় ঘটনার মাধ্যমে বাবা ও ছেলের মতবিরোধ জীবন্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে । বাবা ছেলেকে কড়া শাসন করেন এবং আশা করেন ছেলে তার নির্ধারিত পথ বেয়ে চলবে । ছোট বেলায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেলেকে ছবি আঁকা শিখতে হয় , একটু বড় হয়ে ছেলে প্রেম করতে চায় আর ব্যবসা করতে চায় , বাবা মরিয়া হয়ে বাধা দেন । তিনি চান নিজের ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে । বাবা নিজের জীবনে যে সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেন নি , সেই সব স্বপ্ন তিনি ছেলের জীবনে বাস্তবায়নের আশা রাখেন । ছেলে বড় হওয়ার পর ছেলের সাফল্য দেখে বাবা আনন্দ বোধ করেন , কিন্তু দু'জনের মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই বাড়ে । এটা চীনের ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সের দর্শকদের অভিন্ন অভিজ্ঞতা বলে ছবিটি তাদের কাছে সমাদৃত হয়েছে ।

    ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যানাডার টরন্টো শহরে এই ছায়াছবি দেখানো হয়েছে । তার পর এই ছবি স্পেন , জাপান ও ইতালিতেও দশর্কদের আন্তরিক সমাদর পেয়েছে । বিদেশী দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে চাং ইয়াং বলেছেন , আমি লক্ষ্য করেছি বিদেশী দর্শকদের প্রতিক্রিয়া চীনা দর্শকদের চেয়েও প্রবল । যদিও তারা ছবিটির পটভূমি বেশী জানেন না , তবে জীনবে পিতা-পুত্রের বিরোধ ও পারিবারিক সম্পর্ক সম্বন্ধে তারা চীনাদের চেয়ে বেশী স্পর্শকাতর । এই ছবি দেখে তারা চীনের পরিবর্তন দেখেছেন । এই ছবির নাম সম্বন্ধে চাং ইয়াং বলেছেন , সূর্যমুখী আশার প্রতীক, আমি আশা করি আমাদের জীবন সূর্যমুখীর মতো হবে ।

    চাং ইয়াং দেখতে বড় ছেলের মতো , হাসতে পছন্দ করেন । ১৯৯১ সালে তিনি চীনের কেন্দ্রীয় নাট্যকলা ইন্সটিটিউটের পরিচালনা বিভাগ থেকে স্নাতক হন । তার পরিচালিত ছায়াছবিগুলোতে চীনের নাগরিকদের বাস্তব জীবন চিত্রিত হয়েছে । তার পরিচালিত ' প্রেমের কাহিনী ' নামক ছবিতে পাঁচটি ছোট প্রেমের কাহিনীর মাধ্যমে আধুনিক চীনের বিভিন্ন বয়সের নাগরিকদের প্রেম ও তাদের মানসিক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে । এই ছায়াছবিতে হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়ে দশর্কদের কিছু শিক্ষনীয় উপদেশ দেয়া হয়েছে বলে ছবিটির দর্শকপ্রিয়তার হার উচুঁ ।

    চাং ইয়াং শহরের নাগরিকদের জীবন ঘনিস্ঠ ছবি পরিচালনা করতে পারদর্শী।১৯৯৯ সালে তিনি ' স্নান ' নামে একটি ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন । এই ছবিতে চীনের নতুন ও পুরনো সংস্কৃতির বিরোধ প্রতিফলিত হয়েছে । প্রবীণ লিউ তার জীবনের বেশীর ভাগ সময় দিয়ে একটি গোসলখানা পরিচালনা করেন । কিন্তু শহরের পুনঃনির্মাণে নতুন দালান প্রতিষ্ঠার জন্য গোসলখানা বন্ধ করতে হবে । এই সম্পর্কে প্রবীন লিউ ও তার ছেলে নবীণ লিউ একেবারে ভিন্নমত পোষণ করেন । ফলে গোসলখানা ভাঙ্গাচোরা হয়েছে , প্রবীণ লিউর মৃত্যু হলো , সেই সময়ই শুধু তার ছেলে নবীণ লিউ নিজের বাবার মমতেজ উপলব্ধি করতে পেরেছেন । এই ছায়াছবি ১৯৯৯ সালে স্পেনের সেন সেবাস্টিয়ান চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছে এবং ক্যানাডার টরন্টো চলচ্চিত্র উত্সবের চিচারক কমিটির পুরস্কার পেয়েছে ।

    চাং ইয়াংয়ের পরিচালিত ' গতকাল ' নামে একটি ছায়াছবিও এক মমর্স্পর্শী ছবি । ছবিতে গত শতাব্দীর আশির দশকে মাদক সেবন করে একজন প্রতিভাবান অভিনেতার নিজের ভবিষ্যত ধ্বংস করা আর তার পরিবারপরিজনের উত্সাহ ও সাহায্যে মাদকাসক্তি ছেড়ে দেয়ার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । এই ছবি একজন অভিনেতার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত হয়েছে।

    চাং ইয়াং মনে করেন , একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , কোনো কোনো সময় এই অভিজ্ঞতা ছবির একটি বিষয়বস্তুও হতে পারে । চীনা সমাজের পরিবতর্নশীল ত্রিশ বছরের সাক্ষী হিসেবে চাং ইয়াং ছায়াছবির মাধ্যমে দেশের পরিবর্তন প্রতিফলনের চেষ্টা করছেন । তিনি বলেছেন , ছায়াছবির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো জীবনের আসল রূপ প্রতিফলিত করা । যদি আপনি জীবনের মূল্যবান জিনিস চিত্রিত করেন , দর্শকদের পক্ষে এটা উপভোগের বিষয় , কারণ ছায়াছবি চিত্র ও সংগীতের চেয়ে আরো কার্যকরভাবে বাস্তব জীবন চিত্রিত করতে পারে । চাং ইয়াং মনে করেন ছায়াছবি হচ্ছে তার ব্যক্তিগত অনুভুতির জীবন্ত রূপায়ন । এটা তার অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভালো জিনিস অন্যদের সঙ্গে উপভোগ করার একটি উপায় ।