প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের ধারণা প্রচারের জন্যে একজন বৃটিশ নাগরিক হেঁটে হেঁটে ৪০ হাজারেরও বেশি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন এবং ত্রিশটিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ভূমিতে মোট দশ লাখেরও বেশী গাছ লাগিয়েছেন । কিছু দিন আগে তিনি চীনে এসেছেন । তিনি আশা করেন যে, নিজের তত্পরতার মাধ্যমে চীনা জনগণের মত সবুজ ওলিম্পক গেমসের জন্যে নিজের অবদান রাখবেন । আসুন,আমরা এই বৃটিশ নাগরিক পল কোলম্যানের সংগে পরিচিত হই ।
গত ১০ ফেব্রুয়ারী সকালে চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সব সবেমাত্র পার হয়ে গেছে , এমন সময়ে পেইচিংয়ের তুং ছেং এলাকার তুং সি ওলিম্পিক কমিউনিটির একটি তত্পরতা-কেন্দ্রে একদল দেশী-বিদেশী পরিবেশ সংরক্ষণকারী স্বেচ্ছাসেবক সমবেতকন্ঠে পৃথিবীকে ভালোবাসার একটি গান গাইছিলেন । জনতার মধ্যে মাঝারী গড়ন ও হাল্কা পাকা চুলের একজন বৃটিশ লোক বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় । তিনি হলেন পল কোলম্যান যিনি হেটে হেটে চলা এবং গাছ লাগানোর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ সংরক্ষণের ধারণা প্রচার করেন ।
৫১ বছর বয়সী পল এখনো প্রাণচঞ্চল । কথাবার্তায় ও চালচলনে তিনি প্রাণশক্তিতে ভরপুর । তরুণ বযসে তিনি সমুদ্রগামী জাহাজে নান্নার কাজ করেছিলেন। তখন প্রতিদিন তিনি আবর্জনা সমুদ্রে ফেলে দিতেন । সে সময়ে তিনি ভাবতেন , এটা কী ঠিক ? পরে তিনি একজন ভদ্র মহিলার বাড়িতে ড্রাইভারের কাজ করেন । তিনি তাঁকে নিয়ে বহু জায়গা ভ্রমণ করেছেন । তিনি দেখতে পেলেন , কিছু কিছু স্থানে দূষণের সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর । সুতরাং তিনি তার কাজ ছেড়ে মনেপ্রাণে পরিবেশ ও পৃথিবী সংরক্ষণের কাজে ঝাপিয়ে পড়েন এবং এর জন্যে তার জীবনের সমস্ত সঞ্চয় ব্যয় করেছেন ।
১৯৯২ সালে তিনি হেটে হেটে ভ্রমণের মাধ্যমে তার পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ শুরু করেন । তার মতে এমনি করলে আরো বেশি সংখ্যক লোক পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হবেন । আজ পর্যন্তও তিনি এই কাজ অব্যাহত রেখেছেন ।
চীনে পল এবারকার আগমন হচ্ছে ২০০৬ সালে তার পেইচিং-সিউল -টোকিও সফরের প্রথম ধাপ । চলতি বছরের ২২ এপ্রিল বিশ্ব পৃথিবী দিবসের প্রাক্কালে তিনি পর পর এশিয়ার এই তিনটি শহরে হেঁটে হেঁটে চলবেন এবং জনসাধারণের কাছে পরিবেশ ও পৃথিবী সংরক্ষণের আহবান জানাবেন । পল বলেছেন , এর মধ্যে তার পেইচিং সফরের বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে । তিনি বলেছন , পেইচিংয়ে এখন সবুজ ওলিম্পিক গেমসের প্রকল্পগুলো নির্মিত হচ্ছে । তিনি সকল পেইচিংবাসীর সংগে মিলে এই কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে নিজের শক্তি নিয়োগ করবেন ।
পল বলেছেন , পরিবেশ সংরক্ষণের ধারণা প্রচারের জন্য আমি পেইচিংয়ে এসেছি । অবশ্য এই বছরের ২২ এপ্রিলের বিশ্ব পৃথিবী দিবস এবং সর্বপ্রথমে পেইচিংয়ের সবুজ ওলিমপিক গেমসের গঠনকাজ তরান্বিত করার জন্যেইআমি এখানে এসেছি । পেইচিংয়ের সবুজ ওলিম্পিক গেমসের কাজে শরীক হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত ।
গত ১৫ জানুয়ারী পেইচিংয়ে পৌছার পর পল বরাবরই হেঁটে হেঁটে চলেছেন । ইতিমধ্যে তিনি পেইচিংয়ের অধিকাংশ এলাকা ও জেলায় গিয়েছেন । পেইচিং সবখানেই সবুজায়নের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং ওলিম্পিক গেমসের প্রকল্পগুলো নির্মাণের কাজে সবুজ ও কম শক্তি-সাশ্রয়ী নির্মাণ-সামগ্রী ব্যবহারের পদক্ষেপ পলের মনে গভীর রেখাপাত করেছে । তার মনে হয় , অন্যান্য দেশের মত চীন পরিবেশ দূষণের সমস্যার সম্মুখীন হলেও চীন পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে । তিনি বিশ্বাস করেন , অদূর ভবিষ্যতে চীন পরিবেশ সংরক্ষণের সমস্যায় একটি অগ্রগামী দেশে পরিণত হবে এবং পেইচিং ওলিম্পিক গেমস অবশ্যই একটি সফল ও সবুজ ওলিম্পিক গেমসে রূপান্তরিত হবে । ভ্রমণের সময়ে পল চীনের বহু লোকের সংগে মেলামেশা করেছেন । চীনা জনগণের আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বে তিনি অত্যন্ত মুগ্ধ । তিনি বলেছেন , পেইচিং ভ্রমণের সময়ে প্রতিদিন মজার মজার ব্যাপার ঘটে থাকে । রোজ নানা ধরণের লোকের সংগে আমার দেখা হয় । তারা সবাই উত্সাহী ও বন্ধুভাবাপন্ন। বসন্ত উত্সবের আগের রাতে আমি রাস্তায় হাটছিলাম । তখনো আমি থাকার জায়গা খুঁজে পাই নি । এমন সময়ে গাড়ি চালানো একটি মেয়ে আমার কাছে এসে পড়লেন । তিনি আমাকে তার বাসায় গিয়ে একসাথে উত্সব পালনের আমন্ত্রণ জানালেন ।
পলের সমর্থিত সবুজ ওলিম্পিকের তত্পরতা চীনের সরকার ও সমাজের বিপুল সমর্থন পেয়েছে । চীনের জাতীয় বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিশেষভাবে তার সংগে দেখা করেছেন এবং তার তত্পরতার প্রশংসা করেছেন । পেইচিংয়ের একটি বেসরকারী পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা - পেইচিং পৃথিবী গ্রামের কর্মীরা তার তত্পরতায় অংশ নেয়ার জন্যে অনেক স্বেচ্ছাসেবককে জড়ো করেছেন । পেইচিং পৃথিবী গ্রামের ছি থিয়ান উ আমাদের সংবাদদাতাকে কলেছেন , পলের তত্পরতা প্রচারের জন্যে আমরা প্রথমে পৃথিবী গ্রামের ৭ শ' স্বেচ্ছেসেবককে জানিয়ে দিয়েছি । তারপর আমরা একটি ওয়াইবসাইট খুলেছি । যারা পলের সংগে হেঁটে হেঁটে চলতে চান , আমরা সবসময় তাদের সংগে যোগাযোগ বজায় রাখছি । সংগে সংগে পলের তত্পরতা ব্যাপক পেইচিংবাসীর মধ্যেও সাড়া জাগিয়েছে । পল বলেছেন , তার জীবদ্দশায় তিনি হেঁটে হেঁটে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করবেন এবং দশ কোটি গাছ লাগাবেন । পেইচিংবাসীরা তার এই মনোবলে বিমুগ্ধ না হয়ে পারে না ।
পেইচিংবাসী ইয়ু সিন পিন অবসর নেয়ার পর বরাবরই পরিবেশ সংরক্ষণের ধারণা প্রচার করেন । তিনি বলেছেন , পলের তত্পরতা গভীরভাবে তাকে বিমোহিত করেছে । তিনি বলেছেন , তার তত্পরতা যেমন পবিত্র , তেমনি মহান । তবে তা একটি দুরুহ কাজ । এই কাজের বিরাট তাত্পর্য আছে । আমি পরিবেশ সংরক্ষণ প্রচারের কাজ করে যাবো । যেমন আমরা আমাদের কমিউনিটিতে অধিবাসীদের শিখাবো , কেমন করে আবর্জনাকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা যায় এবং পরিবেশ রক্ষা করার জন্যে কেমন করে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যায় এবং কেমন করে সবুজ কমিউনিটি গড়ে তোলা যায় ।
গত ১১ ফেব্রুয়ারী পল পেইচিং ত্যাগ করে থিয়ান চিন শহরে গিয়েছেন । ২৩ ফেব্রুয়ারী তিনি জাহাজে করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে গিয়েছেন । তারপর তিনি আবার জাপানের রাজধানী টোকিও যাবেন ।
|