ইতালির বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, রেড ওয়াইনের এক রকম পদার্থ দিয়ে মাছের আয়ু বাড়ানো যায়। তাই বলে রেড ওয়াইন সম্ভবত মানুষ-সহ অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীদের আয়ুও বাড়াতে পারবে।
ইতালির স্নায়ু বিষয়ক গবেষণাগারের আলিসান্ড্রো ছেলেরিনো (Alessandro Cellerino) ও তাঁর সহকর্মী ফেব্রুয়ারি মাসের "সমকালীন জীববিদ্যা"(Current Biology) ম্যাগাজিনের থিসিসে বলেছেন, রেড ওয়াইনের ভেতরকার উপাদান রেজভেরাট্রোল (Resveratrol) নথোব্রানছিয়াস ফুর্জেরি(nothobranchius furzeri)মাছের আয়ু বাড়াতে পারে। এবং যত বেশি এই পদার্থ মাছকে খাওয়ানো হয়, মাছের আয়ু ততই লম্বা হবে।
ছেলেরিনো জেম্বাবুয়ের এই রকম ছোট মাছ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। তিনি মাছগুলোকে তিন গ্রুপে ভিভক্ত করেছেন। তারপর তাদের তিন রকম পরিমানের রেজভেরাট্রোল (Resveratrol) খেতে দেয়া হয়। অল্প পরিমান দেয়ার গ্রুপে মাছ ৯ সপ্তাহ বাঁচতে পারে এবং মাছের উপর কোনো স্পষ্ট প্রভাব দেখা দেয়নি। কিন্তু মাঝারি পরিমান রেজভেরাট্রোল (Resveratrol) খাওয়া মাছের আয়ু ৩০ শতাংশ বেড়েছে এবং বেশী খাওয়া গ্রুপের মাছের আয়ু ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তাছাড়া, ১০ সপ্তাহ বেঁচে থাকার পরও মাছ দেখতে খুবই প্রাণবন্ত।
এই গবেষণার ফলাফল বৈজ্ঞানিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আগেকার গবেষণা অনুযায়ী, রেজভেরাট্রোল (Resveratrol) দিয়ে মাছি ও কতিপয় কীটের আয়ু বাড়ানো যায়। কিন্তু মেরুদন্ডী প্রাণীদের আয়ু বাড়ানোর লক্ষণ এ প্রথম বার আবিষ্কার করা হয়েছে। গবেষকরা ওই পদার্থ খাওয়া মাছ ব্যবচ্ছেদ করে দেখেছেন যে তাদের স্নায়ু সেল পুরোনো হওয়ার গতি খুবই ধীর। তাতে গবেষকরা মনে করেন যে রেজভেরাট্রোল (Resveratrol) সম্ভবত স্নায়ু সেল সুরক্ষা করতে পারে।
রেজভেরাট্রোল (Resveratrol) গাছপালার ভেতরের এক রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবিষ(antitoxin) ও আন্টিওক্সিডেন্ট(antioxidant) পদার্থ। তা প্রধানত রেড ওয়াইনে আছে। গবেষণা অনুযায়ী, রেজভেরাট্রোল (Resveratrol) সেলের ডি.এন.এ রাসায়নিক প্রক্রিয়া থেকে সুরক্ষা করার মাধ্যমে আয়ু বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতে এই আবিষ্কারের ওপর বেশি নির্ভর করা উচিত নয়। কারণ প্রাণীদের শরীর তা কার্যকর হলেও মানুষের জন্য তা ব্যবহার্য কিনা বলা যায় না। এবং যদি এই উদ্দেশ্যে খুব বেশি মদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হয় তা আরো বিপদজনক। জানা গেছে, যে পরিমান ছেলেরিনো মাছকে খাওয়ানো হয় তা মানুষের জন্য প্রায় প্রতিদিন ৭২ বোতল রেড ওয়াইন খাওয়ার সমান। এবং এই পদার্থ রক্তে আসার আগে পাকস্থলী ইত্যাদি তাদের ৯৫% বিধস্ত করেছে। তাতে তার প্রভাব বা উপকারিতা আরো কমে যায়।
রেজভেরাট্রোল (Resveratrol) বা রেড ওয়াইন মানুষের শরীরের ওপর কি রকম প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে আরো গবেষণা করা উচিত। কিন্তু ছেলেরিনোর প্রস্তাব অনুযায়ী "প্রতিদিন দুইএক কাপ রেড ওয়াইন খেলে উপকার হবে"।
|