গত ৩ থেকে ১৪ মার্চ পেইচিংয়ে চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন এবং জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক নিয়মিত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বছরের অধিবেশনে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো নতুন গ্রাম বিনির্মান করা। দেখুন এই বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্যরা কি কি মন্তব্য রেখেছেন।
চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও "সরকারী কার্যবিবরণীতে" ঘোষণা করেছেন, গ্রামীণ বাধ্যতামূলক শিক্ষা সার্বিকভাবে জাতীয় আর্থিক নিশ্চয়তাবিধানের আওতাভূক্ত করা হবে, এই বছর থেকে দু'বছর সময়ের মধ্যে গ্রামীণ বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত শিক্ষা ও বিবিধ ফি মওকুফ করা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত চীনের গণ -রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষা মহলের সদস্য ছাই কে ছিন মনে করেন, এটা অত্যন্ত উত্সাহব্যন্ঞ্জক এবং যুগান্তকারী ব্যাপার। তিনি বলেছেন, "এই সিদ্ধান্ত চীনের গ্রামাঞ্চলের প্রায় ১৬ কোটি স্কুল বয়সী শিশুর জন্যে কল্যাণ বয়ে আনবে। তাদের সংখ্যা চীনের প্রায় ২০ কোটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক ছাত্রছাত্রীর মোট সংখ্যার ৮০ শতাংশ। চীনের শিক্ষার ইতিহাসে এর যুগান্তকারী তাত্পর্য আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা অর্থাত্ সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে প্রথমে সত্যিকার "বাধ্যতামূলক শিক্ষা" বাস্তবায়িত করা, সমাজতান্ত্রিক নতুন গ্রাম বিনির্মানের লক্ষ্য ত্বরান্বিত ও কার্যকরী করা, চীনের বিরাট জনসংখ্যার চাপ "জনশক্তির প্রাধান্য" রুপান্তর করা নিঃসন্দেহে সার্বিকভাবে সকল নাগরিকদের গুণ মান উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর প্রভাব ফেলবে। "
১৯৮৬ সাল থেকে "বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন" চালু হওয়ার পর চীন বাধ্যতামূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে যথাযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, কিন্তু অর্থ বরাদ্দের অভাবে গোপনে ফি নেয়ার অবস্থা আবির্ভুত হয়েছে। এর ফলে কিছু দরিদ্র পরিবার বিশেষ করে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা বাধ্যতামূলক শিক্ষা শেষ করতে পারে না। চিকোং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান উ মিং সি পরপর চিকোং পার্টির সদস্যদের নিয়ে কুইচৌ , ছুংছিং, সিছুয়েন প্রভৃতি অঞ্চলে গিয়ে গ্রামের বাধ্যতামূলক শিক্ষার অবস্থা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, "পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন স্কুলচ্যুত শিশু আর বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে নি এমন শিশুর সংখ্যা মোট সংখ্যার তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশে । যদিও বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন ন্যায়পরভাবে সম্পদ বন্টন করা হয়েছে, তবে কিছু বাস্তব কারণে সত্যিকার ন্যায়পরায়ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় নি। "
এই বছরের সরকারী কার্যবিবরণীতে প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা করেছেন, ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় সরকার আর স্থানীয় সরকার গ্রামের বাধ্যতামূলক শিক্ষার অর্থ ভাগাভাগি করার নিশ্চয়তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে, গ্রামাঞ্চলের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের সরকারী মূলধনের নিশ্চয়তাবিধানের মাত্রা উন্নীত হবে, গ্রামাঞ্চলের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ক্লাসরুম মেরামতের অর্থ দেয়ার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং গ্রামীণ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দেয়ার নিশ্চয়তাবিধান ব্যবস্থা সুসম্পন্ন হবে ইত্যাদি। সদস্যরা মনে করেন, এই প্রস্তাবগুলো অবশ্যই জনগণকে দেয়া চীনের ইতিহাসে বিশাল সুযোগ-সুবিধা বাস্তবায়িত হবে।
কিছু সদস্য গ্রামীণ শিশুদেরকে উপযুক্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা দিতে পারে কিনা এর উপর নজর দিয়েছেন। নানচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রিন্সিপ্যাল ছুন ছিন ইয়ু বলেছেন, "আমাদের গ্রামীন বাধ্যতামূলক শিক্ষা কেবল শিশুদের লেখাপড়ার সমস্যা সমাধান করবে না, বরং তারা স্কুলে যাওয়ার পর উপযুক্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।" অনেক সদস্য বলেছেন, তাঁরা অব্যাহতভাবে গ্রামীণ বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ের স্কুলগুলোর শিক্ষাদানের গুণগত মান উন্নয়নের উপর মনোযোগ রাখবে, যাতে গ্রামের বাচ্চারা সুষ্ঠু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
সদস্যরা গ্রামীন বাধ্যতামূলক শিক্ষা জোরদার করার ক্ষেত্রে আরো কিছু প্রস্তাব করেছেন।
ছাই কে ছিন ন্যায়পরায়ন শিক্ষাদান রক্ষা করাকে দেশের শিক্ষা নীতির মৌলিক মর্মে নির্ধারণ করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষার সমান সুযোগ পাওয়া হচ্ছে আধুনিক সমাজের ভিত্তি-প্রস্তর। আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক শিক্ষার অর্থ বরাদ্দ সুনিশ্চিত করতেই হবে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার ভারসাম্যমূলক উন্নয়নকে একটি দায়িত্ব ও কাজকর্মের মূল নীতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানের নানা ক্ষেত্রে নির্মানের অর্থ গ্রাম এবং দূরবর্তী সংখ্যালঘু জাতির দুর্বল স্কুলগুলোর উপর প্রাধান্য দেয়া উচিত। " তিনি আশা করেন, নতুন বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইনের সংশোধনের গুণমান উন্নত করবে, নতুন আইনে "অর্থ বরাদ্দের নিশ্চয়তা" সংক্রান্ত বিশেষ ধারা অন্তর্ভুক্ত হবে, যাতে স্পষ্টভাবে বাধ্যতামূলক শিক্ষার অর্থের মোট চাহিদা নির্ধারিত হয় এবং তা যথাক্রমে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে।"
সদস্য চু ইয়ো সিন বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার আর স্থানীয় সরকার অর্থ ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বেশির ভাগ বহন করা উচিত । বাধ্যতামূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয় অর্থ আর্থিক বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তারপর সমাজে তা প্রকাশ করে হিসেব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তত্ত্বাবধান গ্রহন করতে হবে। ইচ্ছা মতো বাধ্যতামূলক শিক্ষার অর্থ কমানো বা অন্য দিকে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হবে।
আরো কিছু সদস্য আশা প্রকাশ করেছেন যে, শিক্ষা প্রশাসনিক পরিচালনা বিভাগ বাস্তব অবস্থা অনুসারে গ্রামীন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বেতন নিশ্চিত হবে এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ জোরদার হবে। সদস্যরা সরকারী কার্যবিবরণী আলোচনা করার সময় নতুন "বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইনের" সংশোধনের উপর প্রত্যাশা রেখেছেন, আশা করেন , তা সকল শিশুদের জন্য ন্যায়পর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বয়ে আনবে।
|