v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-17 11:34:39    
চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনেরসদস্যা চাং হাইতি

cri
    চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের মধ্যে এক বিশেষ নারী সদস্য আছেন । ৫ বছর বয়সে তিনি হঠাত বুক থেকে পা পযন্ত পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন । এর পর চার চাকার চেয়ারে বসে তিনি নিজের জীবনযাত্রা শুরু করেন । তিনি কখনো স্কুলে যান নি , কিন্তু তিনি স্ব-নির্ভরশীল হয়ে প্রাথমিক , মাধ্যমিক স্কুলের সব লেখা পড়া সম্পন্ন করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও মাষ্টারডিগ্রীর লেখাপড়া সম্পন্ন করেছেন । তিনি ভাল করে ইংরেজি, জাপানী , রুশ ,জার্মান ও এস্প্যারান্টো জানেন । ১৯৮৩ সালে তিনি সাহিত্য রচনা শুরু করেন । এপর্যন্ত তিনি প্রায় দশ লক্ষ চীনা অক্ষরের বই লিখেছেন বা অনুবাদ করেছেন । তিনি হলেন চাং হাইডি । হাই ডি এমন এক সুন্দরী নারী , তিনি জীবিত থাকাকালে সমাজের পক্ষে এক উপকারী মানুষ হওয়ায় আস্থাবান । তিনি দৃঢ় মনোবল নিয়ে নিজের রোগের সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন ,গুরুতর অসুস্থ হয়েও তিনি জীবন সম্পর্কে উত্সাহব্যঞ্জক ।

    চাং হাইতি গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেরনেরসামাজিক কল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিয়তাবিধান মহলের একজন সদস্যা । গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্যা নির্বাচিত হওয়ার সেই দিন থেকে এ পর্যন্ত ৯ বছরে তিনি সবসময় বিকলাঙ্গ বিষয়ক ব্রতের উপর নজর রাখেন । সাক্ষাত্কার দেয়ার সময়ে চাং হাইতির একটি দৃষ্টিকোণ আমাদের সংবাদদাতার মনে আলোড়ন তোলে । তিনি বলেছেন , যেদিন মানবজাতির জন্ম হয় সেদিন বিকলাঙ্গ মানুষেরও জন্ম হয় । বিকলাঙ্গতা কোনো ব্যক্তির দুঃখ নয়, বরং গোটামানবজাতির দুঃখ ।বিকলাঙ্গ মানুষ আমাদের ভাইবোন ।

    আমাদের সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দেয়ার আগে তিনি নিজের প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে সংশোধন করছিলেন । তিনি বলেছেন, এবার আমি দু-একটা প্রস্তাব এনেছি । আমি মনে করি , গুরুতর বিকলাঙ্গদের লালনপালন ও রক্ষার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এ কয়েক বছরে আমি সমস্যাটির উপর অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে আসছি । চীনা বিকলাঙ্গ সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমি কিছু আবাসিক এলাকা এবং কয়েকটি বিকলাঙ্গ পরিবারে তদন্ত ও গবেষণা চালিয়েছি । এর আগের দশ-বারো বছরে আমি অসংখ্য বিকলাঙ্গ বন্ধু ও তাদের পরিবারপরিজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি । আমি যততাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধান হওয়া দরকার এমন কিছু সমস্যা উপলব্ধি করেছি । আমি সবসময় ভাবছি , কিভাবে এ ধরণের পরিবারকে যত্ন দিতে হবে ? আমি কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি । গুরুতর বিকলাঙ্গদের লালনপালন ও রক্ষার সমস্যা আরও বেশী লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে , গোটা সমাজ এদেরকে যত্ন দেবে বলে আমরা আশা করি । কারণ সকল মানুষ সুখী হলেই কেবল আমরা সুখী হতে পারি ।

    বিগত কয়েক বছরে চাং হাইতি মূলস্তরে গিয়ে সাধারণ বিকলাঙ্গমানুষের সুখ-দুঃখ জেনে নেন , তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন এবং তাদের সক্রিয়ভাবে জীবনযাত্রার সম্মুখীন হতে উত্সাহ দেন । পক্ষান্তরে বিকলাঙ্গ মানুষের জীবনযাত্রার বাস্তব সমস্যা জানলে তিনি সর্বাধিক শক্তি দিয়ে তাদের সাহায্য করেন । তিনি সবসময়ে দুর্বল আবস্থায়র নিপতিত বিকলাঙ্গদেরসাহায্যের জন্যে আহবান জানান । যার ফলে "বাধাহীন ব্যবস্থা নির্মাণ সম্পর্কে প্রস্তাব", " অনাথ ও বিকলাঙ্গ শিশুদের সামাজিক নিশ্চয়তাবিধান সম্পর্কে প্রস্তাব", " বিমানবন্দরে , বাস-স্টেশনে ও নৌবন্দরে বাধাহীন ব্যবস্থা নির্মাণসম্পর্কে প্রস্তাব" সহ বিকলাঙ্গদের স্বার্থজড়িত ধারাবাহিক প্রস্তাব প্রণয়ন হয় । প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে বলতে গেলে চাং হাইতি আনন্দে হেসে ওঠেন ।গত বছরের এক প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেছেন, গত বছর আমি গাড়ি চালাতে সক্ষম এমন বিকলাঙ্গদের জন্যে এক প্রস্তাব উত্থাপন করেছি । অনেক বছর আগে আমি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছি । সেখানে আমি লক্ষ্য করেছি , সেখানকার বিকলাঙ্গ মানুষের শরীর বিকলাঙ্গ হলেও তাদের স্বাধীনভাবে গাড়ি চালানোর অধিকার আছে । সেই সময়ে আমি আশা করি , চীনের বিকলাঙ্গরাও সার্বিকভাবে সামাজিক জীবনযাত্রায় যোগ দেবেন, সত্যিকারভাবে স্বাস্থ্যবানলোকদের সমতা পাবেন । তদন্ত ও গবেষণা এবং স্বয়ং অনুশীলন করার পর আমি মনে করি , বিকলাঙ্গদের গাড়ি চালানোর সক্ষমতাআছে । গত বছরে গণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় বাম পা বিহীন বিকলাঙ্গদের গাড়ী চালাতে অনুমোদন সহ ৩০টি ব্যবস্থা নিয়েছে । এথেকে বহু বিকলাঙ্গ ভাইবোনরা ভরসা দেখতে পাবেন । রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে হস্তচালিত গাড়ি গবেষণা ও তৈরী করার প্রস্তাব করেছে । ২০০৮ সালে বিকলাঙ্গ অলিম্পিক গেমস যখন পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে তখন চীনের বিকলাঙ্গ ভাইবোনরা স্বয়ংগাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন দেশের বিকলাঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গেমিলীত হতে পারবেন ।

    চাং হাইতির অন্য প্রস্তাবও সংশ্লিষ্ট বিভাগের গুরুত্ব লাভ করেছে । এখন অনেক জায়গার রাস্তা ও বিমানবন্দরে বিকলাঙ্গদের জন্যে বিশেষ পথ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে । এটা যেমন বিকলাঙ্গ ভাইবোনদের তেমনি বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ও প্রয়োজনীদেরজন্যে সুবিধা সৃষ্টি করেছে । তার প্রস্তাবের জবাব সম্পর্কে হাইতি বলেছেন , খুশির ব্যাপার এই যে , সদস্যদের প্রস্তাবের জবাব অধিক থেকে অধিক বেড়ে যায় । এ জন্যে আমরা সন্তুষ্ট । আমি যে প্রস্তাবগুলো পেশ করেছি তার প্রতিটির জবাব পেয়েছে ।

    রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য হিসেবে চাং হাইতি নিজের অধিক থেকে অধিকতর দায়িত্ব অনুভব করছেন । সরকারী ও রাজনৈতিক বিষয়ে অংশ নেয়া আমাদের সদস্যদের বহন করা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব । আমি এই দায়িত্ব পালন করাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কাজ হিসেবে গ্রহণ করি ।

    এ বছরের দুটো সম্মেলন সম্পর্কে চাং হাইতি বলেছেন, সম্মেলন দুটোর উপর আমি বিরাট আশা রাখি ।প্রত্যেক বছরের দুটো সম্মেলন নতুন ,তাই সদস্যরা এর উপর নতুন আশা রাখেন । জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রত্যেক নীতির পরিপূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিশ্বাস করি , নতুন "একাদশ পাঁচ সালা কর্মসূচি"তে আরও বেশী কার্যকরব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে । যাতে সাধারণ মানুষরা সুখী জীবনযাপন করতে পারবেন ।