v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-15 15:34:33    
চীনের কুকুর রাশি বর্ষ

cri

    এ বছর চীনের চান্দ্র পঞ্জিকার কুকুর রাশি বর্ষ । তাই চীনে কুকুর সম্পর্কিত আলোচনা বেশী ।

    গত ২৯ জানুয়ারী ছিল চীনের ঐতিহ্যিক উত্সব , চীনের বসন্ত উত্সব অর্থাত্ চীনের চান্দ্র পঞ্জিকার নববর্ষ। এই দিন থেকে চীন কুকুর বর্ষে প্রবেশ করেছে । চীনের চান্দ্র পঞ্জিকায় চীনাদের বারোটি রাশির বর্ষের প্রতিনিধিত্বকারী বারোটি জন্তু হলোঃ ইদুঁর , গরু , বাঘ , খরগোস , ড্রাগন , সাপ , ঘোড়া , ছাগল , বানর , মোরগ , কুকুর ও শুয়োর । এই বারোটি জন্তুর রাশি বছর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে । প্রতি বারো বছর অন্তর রাশিচক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে । এই বছর চীনের কুকুর রাশির বছর । মানুষের সঙ্গে কুকুরের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ । কুকুর সম্পর্কিত অনেক রুপ কথা আছে । চীনের রীতিপ্রথা সমিতির উপপ্রধান ও চীনের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার থাও লি ফান বহু বছর ধরে চীনের বিভিন্ন জাতির রীতিনীতি গবেষণা করে এসেছেন । তিনি কুকুর সম্বন্ধে বলেছেন , চীনে তথা গোটা পৃথিবীতে অনেকে কুকুর নিয়ে গবেষণা করেন । কেননা কুকুর মানব জাতির প্রথম পোষা প্রাণী , কুকুর মানব জাতির অনুগত বন্ধু । চীনের কুকুর সম্পর্কিত রুপকথাগুলোর মধ্যে কুকুরের আকাশ থেকে মানুষের জন্য ধানের বীজ নিয়ে আসার গল্প বিখ্যাত ।

    এই রুপ কথায় বলা হয়েছে , ধানের বীজগুলো স্বর্গের রাণীর হাতে ছিলো । সাহসী কুকুররা স্বর্গীয় নদী অতিক্রম করে স্বর্গীয় রাণীর হাত থেকে ধানের বীজ চুরি করে পৃথিবীর মানুষকে দিয়েছে । তাই চীনারা কুকুরকে ধান চাষের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শ্রদ্ধা করেন এবং কুকুরকে বিশেষভাবে যত্ন করেন। চীনা ভাষায় ধানের উচ্চারণ চুরির উচ্চারণ একই । চীনা প্রবাদ ' চি মিন কৌ তাও '-তে প্রাচীন চীনের এক লোক কুকুর সেজে রাজার দামী জিনিস চুরি করা আর মোরগের ডাক নকল করে নগরের প্রহরীকে ঠকানোর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । এই প্রবাদ থেকে বোঝা যায় চুরি কুকুরের একটি দক্ষতা ।

    চীনে মানুষ ও কুকুরের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ । পেইচিংয়ের রীতিনীতি বিশেষজ্ঞ ওয়াং চো ই মনে করেন , চীনের কুকুর সম্পর্কিত সংস্কৃতি মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের হুয়াই ইয়া জেলা থেকে শুরু হয় । কারণ সেখানে মানুষের পূর্বপুরুষ ফু সি থাকতেন । এখনও সেখানে ' নি নি কৌ ' নামে মাটির তৈরী এক ধরনের খেলনা পাওয়া যায় । তিনি বলেছেন , ' নিনি কৌ হলো পূর্বপুরুষদের কুকুরকে ভালোবাসার প্রতীক । হুয়াই ইয়াং জেলার পুথিপত্রে বলা হয়েছে , মানুষের পূর্বপুরুষফু সি মানুষকে মাছ ধরা জাল বুনতে ও মাছ চাষের কৌশল শিখিয়েছিলেন । বিশেষজ্ঞদের অনুমান , মানব জাতি ও কুকুরের সম্পর্কের ইতিহাস ১৫ হাজার বছর দীর্ঘ । রুপ কথায় বলা হয়েছে , কুকুর নিজের জন্য এক নির্ভরযোগ্য বন্ধু খুঁজতে চায় এবং চিরকাল মানুষের সঙ্গে থাকতে চায় । কুকুররা অনেক জীবজন্তু খুঁজেছে , কিন্তু শেষে কুকুররা মনে করে মানুষ সবচেয়ে বুদ্ধিমান ,তাই কুকুররা মানুষকে নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছে ।

    চীনের লোকশিল্প সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান পাই কেন সেন বলেছেন , হান জাতি প্রথম দিকে একটি শিকারী জাতি ছিল , পরে ধীরে ধীরে জমি চাষ করতে শুরু করে । এই প্রক্রিয়ায় মানুষ ও কুকুর পরস্পরকে নির্ভর ও সাহায্য করেছে। তাই জীবজন্তুর মধ্যে কুকুর মানুষের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু । তিনি বলেছেন , শিকারী জীবনে কুকুর ছিল মানুষের অন্যতম অস্ত্র বলা যায় । শিকার করতে গেলে তীর-ধনুক ছাড়া শিকারীর হাতের জ্যান্ত অস্ত্রই হচ্ছে কুকুর । কুকুর এক অনুগত প্রাণী । চীনের একটি প্রবাদে বলা হয়েছে , কুকুর গরীব মালিককে তাচ্ছিল্য করে না । তাই দীর্ঘ দিন ধরে মানুষ সব সময় কুকুরকে বিশ্বাস ও সম্মান করেন ।

    চীন এক বহুজাতিক দেশ । চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সংস্কৃতিতে কুকুরের মর্যাদাও বেশী । এক বুদ্ধিমান ও সাহসী কুকুর সংকটের সময় তাদের পূর্বপুরুষ নুরহাছকে বাচিঁয়েছে বলে উত্তর চীনের মান জাতির লোকেরা কুকুরকে খুব শ্রদ্ধা করেন । তারা কুকুরের মাংস খান না , ঘরের ভিতরে কুকুরের চামড়া দিয়ে তৈরী টুপি ও জামা পরেন না । দক্ষিণ চীনের মিয়াও , ইয়াও ও শে জাতির লোকেরা ফান হুকে নিজের পূর্বপুরুষ বলে গণ্য করেন । ফান হু হলো রুপ কথার একটি কুকুর , কুকুরটি যুদ্ধের সময় রাজ্য রক্ষার জন্য অবদান রেখেছে , রাজা তাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য নিজের মেয়েকে কুকুর ফান হুকে বিয়ে করার নির্দেশ দেন । ইয়াও জাতি ও মিয়াও জাতির প্রাচীন কবিতাগুলোতে ফান হুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে । দক্ষিণ চীনের কিছু সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীরা মনে করেন , কুকুর তাদের সবচেয়ে অনুগত সঙ্গী ও অস্ত্র ।তাই উত্সবের সময় চিংপো জাতি , লাকু জাতি , ইয়াও জাতি আর হান জাতির অধিবাসীরা প্রথম বাটি ভাত কুকুরকে দেন ।

    দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের নাসি জাতির রুপকথায় বলা হয়েছে , প্রাচীনকালে মানুষের আয়ু ছিল মাত্র ১৩ বছর , কিন্তু কুকুরের আয়ু ছিল ৬০ বছর । মানুষরা মনে করেন , মানুষের আয়ু কম বলে বংশবৃদ্ধি সম্ভব হবে না । কুকুরের আয়ু বেশি লম্বা , তারা সারা দিন বন্য পশুর সঙ্গে লড়াই করে বলে কুকুরদের ক্লান্তি বেশি । তাই মানুষরা ভগবানের কাছে মানুষ ও কুকুরের আয়ু বদল করার অনুরোধ জানালেন। ভগবান মানুষের এই অনুরোধ গ্রহণ করলেন ।এই কারণেই নাসি জাতির অধিবাসীরা মনে করেন , মানুষের ১৩ বছর পরের আয়ু কুকুর দিয়েছে । নাসি জাতির অধিবাসীরা চান্দ্র পঞ্জিকার নববর্ষের আগের দিন আর নতুন বছরের প্রথম দিন পরিবারের ছেলেমেয়ের সাবালক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন । এই অনুষ্ঠানে তের বছর বয়সের ছেলে এক নতুন পাজামা পরেন এবং তের বছর বয়সের মেয়ে এক নতুন স্কার্ট পরেন । কিন্তু পাজামা ও স্কার্ট পরার আগে প্রথমে কুকুরের গায়ের উপর রাখতে হবে । এর অর্থ হলো ছেলেমেয়েরা সাবালক হওয়ার সময় প্রথম উপহার কুকুরকে দেয়া । নাসি জাতির অধিবাসীরা কুকুরকে মানব জাতির আয়ুর প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা করেন ।

    কুকুর সম্পর্কিত রুপকথা আরো আছে । যেমন অনুগত ও বুদ্ধিমান কুকুর রাজার প্রাণ বাচাঁনো আর স্বর্গীয় কুকুর চাঁদ খেয়ে ফেলা ইত্যাদি কাহিনী এখনও চীনাদের মুখে মুখে । প্রাচীন চীনের কবিতা ও কাহিনীতে আর আধুনিককালের চিত্রশিল্প ও ছায়াছবিতে কুকুরের প্রতি মানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসা ব্যক্ত করা হয়েছে । কুকুর রাশি বর্ষকে স্বাগত জানানোর জন্য চীনারা বলেন , কুকুর রাশি বর্ষে কৃষির চমত্কার ফলন হবে , কুকুরের প্রহরায় সুখশান্তি স্থায়ী হবে । আজকের অনুষ্ঠান শেষে আমিও কুকুর রাশি বর্ষে শ্রোতাবন্ধুদের সুস্বাস্থ্য ও সুখশান্তি কামনা করি ।