v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-14 13:12:38    
চীনের গণ হাসপাতাল

cri
    উচ্চ চিকিত্সা ফির জন্যে চীনের বহু লোক অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রায় হাসপাতালে যেতে চান না । তবে আমাদের সংবাদদাতারা সম্প্রতি দেখতে পেলেন , যাদের এই চিন্তাভাবনা আছে , তারা এখন কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন । কেন না , চীনের বেশ কিছু এলাকায় গণ হাসপাতাল বা গণ রোগী-কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে । এই সব হাসপাতাল ও রোগী কক্ষ বিশেষভাবে নিম্ন আয়ের লোকদের চিকিত্সা পরিসেবা যোগাতে পারে ।

    শাংতি হাসপাতাল চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের উত্তর দিকের শাংতি কমিউনিটিতে অবস্থিত । হাসপাতালটি বড় নয় । মাত্র দুই মাস আগে এই হাসপাতাল চালু হয় । আমাদের সংবাদদাতা দুপুর বেলায় সেই হাসপাতালে গিয়েছেন । তিনি দেখতে পেলেন , সেই সময়েও কিছু সংখ্যক লোক লাইন দিয়ে চিকিত্সার জন্যে অপেক্ষা করছেন । এমন কি অনেকে গাড়িতে করে বহু দূর থেকে এখানে এসেছেন । চাং ছিং লিয়াং নামক একজন বুড়ো মানুষ বিশেষভাবে পেইচিংয়ের দক্ষিণ দিক থেকে এখানে এসেছেন । তিনি বলেছেন ,

    শুনেছি এটা একটি গণ হাসপাতাল । দাম সস্তা । আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই , এই হাসপাতালের সত্যিকার অবস্থা কি রকম । এসে দেখতে পেলাম , আমার বেশ ভালো লাগছে । এখানকার পরিবেশ বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন । শৃংখলাও মন্দ নয় । সাধারণ লোকেরা এখানে চিকিত্সা নিলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন ।

    জানা গেছে , বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দু শো লোক শাংতি হাসপাতালে গিয়ে চিকিত্সা নেন । বেশীর পক্ষে তিন শোরও বেশি লোক চিকিত্সার জন্যে সেখানে যান । সবেমাত্র চালু করা একটি হাসপাতালের পক্ষে এমন অবস্থা সন্তোষজনক বলা যায় । তাহলে কি কারণে এত বেশি রোগী এই হাসপাতাল বেছে নিয়েছেন ?

    শাংতি হাসপাতাল হচ্ছে সরকারের পুঁজিতে প্রতিষ্ঠিত চীনের প্রথম গণ হাসপাতাল । হাসপাতালটি চালু হওয়ার প্রথম দিনে যে রোগী সর্বপ্রথমে এই হাসপাতালে গিয়েছেন , চিকিত্সার জন্যে সেই রোগী মাত্র ৫ ইউয়ান ব্যয় করেছেন । এমন চিকিত্সার জন্যে বড় বড় হাসপাতালে সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ ইউয়ান লাগবে ।

    শাংতি হাসপাতালের পরিচালক ওয়াং লিং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , শাংতি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হচ্ছে এই যে , মধ্য ও নিম্ন আয়ের লোকেরাও চিকিত্সা নিতে পারবেন । তিনি বলেছেন,

    পেইচিংয়ের হাইতিয়ান এলাকায় যারা নিম্ন আয় করেন বা গ্রামাঞ্চল থেকে এসেছেন , তাদের জন্যে মৌলিক চিকিত্সার সুযোগ দেয়াই হচ্ছে আমাদের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য । আমরা চাই , সাধারণ লোকেরা এই হাসপাতালে কম খরচ দিলেও মৌলিক চিকিত্সার পরিসেবা ভোগ করতে পারেন ।

    প্রধানত হাইতিয়ান এলাকা সরকারের আর্থিক সহায়তার সুবাদে শাংতি হাসপাতাল বিরাটমাত্রায় জনসাধারণের কাছে এত বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে সক্ষম হচ্ছে। সরকারের অর্থানুকুল্য শাংতি হাসপাতালের অস্তিত্ব থাকার মৌলিক কারণে পরিণত হয়েছে । শাংতি হাসপাতাল অপেক্ষাকৃতকম দাম দিয়ে মধ্য ও নিম্ন আয়ের লোকদের জন্যে যে উত্কৃষ্ট পরিসেবা দিতে পারছে , তার পূর্বশর্তও এখানে নিহিত রয়েছে ।

    বস্তুত শাংতি হাসপাতালের মত বিশেষ বিশেষ গণ হাসপাতাল ছাড়াও নিম্ন আয়ের লোকদের চিকিত্সার সমস্যা সমাধানের জন্যে চীনের বিভিন্ন স্থানের হাসপাতালগুলো তাদের জন্যে গণ রোগী-কক্ষ খুলেছে ।

    শানতুং প্রদেশের রাজাধানী চি নানের ১২ বছর বয়সের মেয়ে সুই মেং মেং হাড় ভাঙার কারণে গত দশ বারো দিন ধরে চি নান কেন্দ্রীয় হাসপাতালের গণ রোগী-কক্ষে চিকিত্সাধীনে রয়েছে । ছোট মেয়েটির বয়স ও তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে তার প্রধান চিকিত্সক কাও হুং অস্ত্রোপচার না করে সামগ্রিক মেরামতের একটি নতুন চিকিত্সা পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন । এই পদ্ধতি অস্ত্রোপচারের চেয়ে আরো বেশি প্রযুক্তি ও শক্তির দরকার পড়বে । চিকিত্সক কাও হুং বলেছেন ,

    অস্ত্রোপচার করলে তার হাসপাতালের উপার্জন বেশি হবে এবং সংগে সংগে রোগীর খরচও অনেক বাড়বে আর মেয়েটির ব্যথাও বাড়বে । মেয়েটির হাড় ভাঙা অবস্থাও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হবে ।

    অবশেষে সুই মোং মোংয়ের চিকিত্সার জন্যে মাত্র ২ হাজার তিন শোরও বেশি ইউয়ান লেগেছে । তার পরিবার আগে কল্পনা করেছিলেন , এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করবে । চিকিত্সক কাওয়ের এই প্রস্তাবের জন্যে সুই মোং মোংয়ের মা ওয়াং সু হুং তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    চিকিত্সক ওয়াং তাদের হাসপাতালের উপার্জনের দিক থেকে নয় , বরং সর্বপ্রথমে রোগী ও রোগীর পরিবারের দিক থেকে বিবেচনা করে এই চিকিত্সা পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন । শেষ পর্যন্ত এই হাসপাতালের রোগী-কক্ষ আমার মেয়ের কিছু ওষুধের ফিও মওকুফ করেছে । বড় কথা হচ্ছে এই যে, আমার মেয়ের কম ব্যথা হয়েছে ।

    গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে চিনান কেন্দ্রীয় হাসপাতাল মধ্য ও নিম্ন আয়ের লোকদের জন্যে গণ রোগী-কক্ষ খুলেছে । সংশ্লিষ্ট নিয়ম অনুসারে যারা চিকিত্সা বীমা ও পাবলিক চিকিত্সা ব্যবস্থার আওতাভুক্ত হন নি , তারা সবাই এই হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে পারেন । যেসব রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন , সেসব রোগী চিকিত্সা ফি, পর্যবেক্ষণ ফি , ওষুধের ফি ও বেডের ফির ২০ শতাংশ মওকুফ পেতে পারেন ।

    ৩২ বছর বয়সের চাং সি ও উত্তর চীনের চিলিন প্রদেশের নুং আন জেলার একজন কৃষক । বিয়ের তিন বছরের পর তার স্ত্রী ওয়াং ইয়ু মেই গর্ভবতী হলেন । তার পরিবারের অবস্থা ভালো নয় বলে একটি সস্তা দামের হাসপাতাল বাছাই করার জন্যে স্বামী-স্ত্রী বেশ মাথা ঘামালেন। অনেক খোঁজাখুজির পর তারা ছিয়াং ছুন স্ত্রী ও শিশু হাসপাতাল বেছে নিলেন । চিকিত্সকদের আন্তরিক পরিচর্যায় ওয়াং ইয়ু মেই অবাধে একটি ছেলের জন্ম দিলেন । অন্য হাসপাতালের তুলনায় তারা এক হাজারেরও বেশি ইউয়ান কম খরচ করেছেন । মিস্টার চাং আনন্দের সংগে বলেছেন ,

    আমাদের জন্যে এক হাজার ইউয়ান চার মাসের জীবনযাপনের খরচের সমান । মা ও ছেলে দুজনই নিরাপদ । এটাই সবচেয়ে আনন্দ ও আবেগের ব্যাপার । আমার জন্যে ছেলেটি অত্যন্ত মূল্যবান । তাই আমি খুবই খুশী ।