v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-10 14:32:54    
তেচির আনন্দ ও চিন্তা

cri
    তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাসার ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে শাননান এলাকায় থাকেন তেচিচোমা নামে এক তিব্বতী নারী । শাননান এলাকার প্রশাসনিক পরিষদের কমিশনার হিসেবে তিনি ১২টি জেলা প্রশাসন করেন ।

    শাননান এলাকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তেচি বলেছেন,এখন শাননান এলাকা উন্নয়নের উত্তম সময়পর্বেপ্রবেশ করেছে । সাম্প্রতিক ১০-১২ বছরে শাননান এলাকার অর্থনীতি দুই-অংক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । ২০০৪ সালে শাননান এলাকার অর্থনীতির বৃদ্ধিহার ছিল ১৯ শতাংশ । তিব্বতে শাননান এলাকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুত । এখানকার মাথাপিছু আয় ১৯৭৮ সালের ১৪৩ রেনমিনপি থেকে বেড়ে ২২৫২ রেনমিনপি হয়েছে । যে বিষয়ে তিনি সবচেয়ে বেশী আনন্দ পান তাহল গোটা শাননান এলাকায় ৯ বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত হয়েছে । ২০০৫ সালের শেষ দিকে পুরোপুরিভাবে যুবকযুবতীদের নিরক্ষরতা দূর করা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে ।

    মাদাম তেচিচোমা বলেছেন , এখন তিনি ভীষণ সংকটবোধ এবং চাপ অনুভব করেন । তাঁর চিন্তাও বেশী । তিনি বলেছেন , আমাদের বর্তমানের বৃহত্তম কর্তব্য হল কিভাবে আমাদের স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাধান্যকে আমাদের অর্থনৈতিক প্রাধান্যে পরিণত করা যায় । সবাই বলেন , তিব্বতে সম্পদ আছে । সবই আছে , কিন্তু এই সব সম্পদ পণ্যদ্রব্যে পরিণত হয়নি । সম্পদকে পণ্যদ্রব্যে পরিণত করা আমাদের এখনকার এবং পরের পথ ।

    শাননান এলাকা তিব্বতের জাতীয় সংস্কৃতির উত্স ।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর সবুজ কৃষি ও গবাদি পশু পালন দ্রুত বিকশিত হলেও এর ব্যাপক ফল হয়নি । এটা কৃষক ও পশু পালকদের আয়ের উপর প্রভাব ফেলেছে । তেচিচোমা বলেছেন , সরকারের পরবর্তীকালের প্রধানকাজ হবে স্থানীয় লোকদের তাদের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কৃষি ও গবাদি পশু পালন শিল্পের ঘাঁটি স্থাপন করতে সাহায্য করা । যেমন, তিব্বতী মোরগ-মুরগী পালনের উন্নয়ন , সরিষা ও উন্নতমানের রসুন বপনের আয়তন সম্প্রসারণ এবং উপকন্ঠে গাভী পালনে সমর্থন করা । তাছাড়া খনিজপদার্থ উন্নয়ন, তিব্বতী কার্পেট তৈরী প্রভৃতি সংখ্যালঘূজাতির হস্তশিল্প এবং প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান ও সাংস্কৃতিক পর্যটনচালু করা সরকারের এক প্রধান অর্থনৈতিক কাজ । এই সব কাজ থেকে শাননান এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাধান্য পুরোপুরিভাবে প্রমাণিত হয়।

    ১৯৫৯ সালে তেচিচোমার জন্ম হয় । সেই সালে তিব্বতে ব্যাপক গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হয় ।এর উদ্দেশ্য ছিলোতিব্বতের হাজার বছরস্থায়ী ভূমিদাস ব্যবস্থা উচ্ছেদ করা । তেচির বাবামা তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কারে নিয়োজিত ছিলেন । মা সবসময় শিশুবেলার তেচিকে পিঠে বহন করে এখানে ওখানে গিয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কার গ্রুপের জন্যে দোভাষীর কাজ করতেন । ৪৬ বছর বয়সী তেচি স্বয়ং তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পরবর্তীকালের বিশেষ করে এক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে তিব্বতের পরিবর্তন উপলবদ্ধি করেছেন । তিনি বলেছেন , ১৯৭৬ সালে আমি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল পাশ করে গ্রামে জমিচাষের কাজে অংশ নিয়েছি । তার পর আমি লাসায় ফিরে এসেছি এবং নেপালের সঙ্গে সংলগ্ন চাংমু বন্দরে রপ্তানী পণ্যদ্রব্য পরীক্ষারকাজে নিয়োজিত হই । সেই সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা ধরণের পণ্যদ্রব্য এখানে আসত । সেসময় ভারতের বন্দর উন্মুক্ত হয়নি , তিব্বত শুধু নেপালের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালাত ।

    চাংমু বন্দরে তেচিচোমা ৬ বছর কাজ করেছেন ।সেসময় তিব্বত প্রধানত নেপাল থেকে ঘি, কম্বল, চিনি ও খাদ্যশস্য আমদানি করতো । চাংমু বন্দর ছোটো এবং কাজের পরিবেশ অত্যন্ত অসুবিধাজনক হলেও বন্দরটি তিব্বতের বৈদেশিক বাণিজ্যের এক কেন্দ্র ছিল । নেপালী ব্যবসায়ীদের যোগাযোগের প্রক্রিয়ায় তেচির প্রশাসনিক দক্ষতা এবং বাজার পরিচালনার মান অনেক উন্নত হয়েছে । তার পর তিনি লাসায় যুবসম্প্রদায়ের কাজে নিয়োজিত হন ।তিনি তিব্বতেররিকাচা এলাকার প্রশাসনিক পরিষদের ভাইস কমিশনার ছিলেন । ২০০৩ সালে তিনি শাননান এলাকার প্রশাসনিক পরিষদের হাই কমিশনার নিযুক্ত হন ।

    তেচি বলেছেন ,তাঁর যেমন আনন্দ আছে তেমনি চিন্তাও আছে । যেমন কাজের সময়ে সংখ্যালঘূজাতির একজন উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সহজভাবে তাঁর পুরুষকর্মীদের সমঝোতা পাবেন না । কাজের ব্যস্ততায় তিনি সময়করে পরিবার দেখাশোনা করতে পারেন না বলে পরিবারপরিজনও তাঁকে উপলবদ্ধি করেন না । তাঁর বড় আনন্দ হল , মেয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময়ে যখন তিনি নিজের চিন্তা ও দুঃখ ব্যক্ত করেন তখন মেয়ে তাঁকে প্রেরণা ও সাহস দেন ।তিনি বলেছেন , আমার মেয়ে আমাকে নিজের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে ।সে সব কথা আমাকে বলে এবং আমিও তাকে নিজের মনের কথা বলি । তাই সে আমাকে খুবই বুঝে। সে আমাকে বলে যে,সে পরে আমার মতো মানুষ হবে । সে আমার কাছ থেকে শিখবে । আমি তাকে বলি যে ,আমার কাছ থেকে শিখবে না , তুমি নিজের বৈশিষ্ট্য অনুসারে মানুষ হও । সমাজের জন্যে এক কল্যাণকামী মানুষ হও ।

    শাননান এলাকার ৩ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করা কমিশনার তেচির বৃহত্তম কর্তব্য । কাজ অত্যন্ত ভারী , নিজের চিন্তা ও অসুবিধা কম না হলেও তিনি যথাসাধ্য দিয়ে নিজের কাজ সম্পন্ন করতে চান । তিনি বলেছেন,আমি জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার প্রচেষ্টা চালাব ।এখন শুধু জনসাধারণের আয় নয়, তাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত করতে হবে । আমাদের কৃষক ও পশুপালকদের উত্পাদন,তাদের খাওয়া , পরা আর থাকার মান উন্নত করতে হবে । যাতে আমাদের তিব্বতী কুষক ও পশুপালকরা যথাশীঘ্রই সমৃদ্ধশালী হতে পারেন ।