v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-09 20:13:52    
খুনমিং শহরের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার

cri
    প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ মাস পযর্ন্ত দলে দলে অতিথি পাখি খুনমিং শহরে অবস্থিত ছিয়ে হ্নদে বসবাস করতে আসে। এ সময়পর্বে হ্নদে গিয়ে এ সব পাখিকে খাওয়ানো অনেক খুনমিংবাসীর নিত্য কতর্ব্য। মানুষ আর পাখিদের মধ্যে সুসংগত সহাবস্থানের দৃশ্য দেখে বাইরে থেকে আসা পযর্টকরা মুগ্ধ হন।অনেক পযর্টক খুনমিং শহরে আসার পর আপনাআপনি জীবনের গতি কমিয়ে দেন। তারা সকালে এ সব পাখিকে খাওয়াতে হ্নদে যান। দুপর আর সন্ধ্যানবেলায় তারা রেস্তোরাঁ অথবা চা দোকানে সুস্বাদু খাবার আর গরম গরম সুগন্দী চা উপভোগ করেন।

    বৈচিত্রময় খাবার সংস্কৃতি হচ্ছে খুনমিংবাসীদের জীবনে একটি অপরিহার্য অঙ্গ। ইয়ুন্নানহচ্ছে চীনের প্রাণী ও উদ্ভিদে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর অন্যতম। খুনমিং শহরে নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। এখানকার খাবার অবশ্যই স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

    চীনের খাবার সংস্কৃতি বলতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চীনের আটটি নাম-করা খাবার শৈলীর কথা মনে পড়ে। এ আটটি খাবারের শৈলী আটটি প্রদেশ অনুযায়ী ভাগ করা হয়। এগুলো হল, সানডং, সিছুয়ান, কুয়াংতোং, ফুচিয়েন, চিয়াংসু, জেচিয়াং, হুনান এবং অনহুওয়ে। আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন উঠবে। এ আটটি নাম-করা খাবারের মধ্যে ইয়ুন্নানের নাম কেন নেই। এর অর্থ এই যে ইয়ুন্নানের খাবারে নাকি কোন বৈশিষ্ট্যই নেই?

    চীনে একটি কথা প্রচলিতরয়েছে যে, ইয়ুন্নানের খাবারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এতে কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। এ কথা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগে। কিন্তু খুনমিংবাসী হওয়াং ইউ লিনের বণর্না শোনার পর আপনি বুঝতে পাবেন যে এ কথায় ইয়ুন্নান খাবারের এক ধরনের বিশেষ প্রশংসা করা হয়েছে। তিনি বললেন,

    চীনের আটটি নাম-করা খাবারে ইয়ুন্নানের খাবার নেই। কিন্তু ইয়ুন্নান খাবারে এ আটটি নাম-করা খাবারের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইয়ুন্নান খাবারে এ আটটি নাম-করা খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়। যে কোন জায়গার পযর্টকরা খুনমিং আসলে প্রত্যেক দিন রাতেরবেলায় তাদের ইয়ুন্নানের খাবার খেতেই হবে।

    মিস্টার হওয়াং ইউ লিন বললেন, শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত নানপিন ওয়ার্কিং সড়কের নিকটবর্তী জায়গায় অনেক ছোট-বড় রেস্তোরাঁ আছে। এটি খুনমিং শহরের সবচেয়ে ব্যস্তজায়গা। প্রায় ৭০০ মিটার দীর্ঘ এই সড়কের দৃ'পাশে প্রচুর রেস্তেরাঁ, দোকানপাট আর হোটেল আছে। এই হওয়াকিং সড়কের বিবরিত পাশে একটি তিন তলা ভবন আছে। এই ভবনের খুনমিংএর নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। বাইরের দিক থেকে দেখলে এই ভবন চীনের ঐতিহ্যিক শৈলীর দুর্গের মতো দেখায়। এই ভবনের চার দরজা আছে। এদের মধ্যে একটি দরজা ওয়াকিং সড়কের বাজারের কাছে। সুতরাং অনেক লোক এই ওয়াকিং সড়ক পরিদর্শনের পর এখানে খেতে আসেন।

    ইয়ুন্নান খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার হল' গুওছিও মি ইয়েন'। এই খাবারের ইতিহাস শতাধিক বছরের। ইয়ুন্নানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মনজি জেলায় এই খাবারের জন্ম। কিংবদন্তিতে বলা হয়, এই জেলার রাজধানীর বাইরে একটি ছোট হ্নদ আছে। এই হ্নদের মাঝখানে একটি ছোট দ্বীপ আছে। দ্বীপের পরিবেশ শান্ত বলে সাধারণত অনেক পন্ডিত এই দ্বীপে বই পড়তে পছন্দ করেন। এক জন যুবক সারা দিন এই দ্বীপে বই পড়তেন। তাঁর স্ত্রী এক দিন একটি মুগির্ এটি পটে রেখে তাঁর জন্যে এই দ্বীপে নিয়ে যান। দ্বীপে পৌঁছে দেখা গেলোই পটের মুর্গির সুপ গরম থাকে। বুঝা যায় এই পটে খাবার দীর্ঘ সময়ে গরম রাখা যায়। পরে তাঁর স্ত্রী প্রত্যেক দিন ' মিশিয়েন নামক' বিশেষ খাবার তাঁর জন্যে নিয়ে আসতেন। এই দ্বীপ পৌঁছতে একটি সেতু পার হতে বলে এই খাবারকে ' সেতু অতিক্রম মিশিয়েন' বলা হয়।

    বতর্মান খুনমিংএ অনেক লোক এই খাবার তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার হিসেবে গণ্য করেন। এই খাবারে সুপ, নুডল আর ফ্লেইভারিং অন্তর্ভূক্ত।এই খাবার শুধু খেতে সুস্বাদু লাগে তাই নয় খুব পুষ্টিকরও । এই খাবার আস্তে আস্তে দেশী-বিদেশী পযর্টকদের প্রিয় খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন মার্কিনী খুনমিং মাত্র দু'দিন বসবাস করেছেন। কিন্তু তিনি তিন বার এই খাবার খেয়েছেন। তিনি বললেন,

    আমি এই খাবারের নাম জানি না। আমি শুধু জানি এটা নুডলসের মতো দেখতে। খেতে সত্যি সুস্বাদু লাগে। গত রাতে আমি আবার খেয়েছি। চমত্কার খাবার! আমি দু'দিনে তিন বার এই খাবার আস্বাদন করেছি। আমার খুব ভাল লেগেছে।

    এই তিন তলা ভবনে নানা ধরনের ছোট ছোট রেস্তেরাঁ রয়েছে। এখানে ইয়ুন্নানের খাবারের সমাবেশ। প্রত্যেক রেস্তেরাঁর সামনে সাইনবোড ঝুলানো হয়। এই সব সাইবোডে রেস্তোরাঁর বিশেষ বিশেষ খাবার লেখা আছে। এ সব খাবারের নাম দেখে লোকেদের রুচি আপনাআপনি বেড়ে যায়। এ সব খাবারের নামের মধ্যে একটি খাবার রাজার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই খাবারের নাম হল: ' ডা চিও চিয়া' অতীতে 'চিয়া' মানে রাজার সম্মান করা। তাহলে এই খাবারের নাম কেন রাজার সঙ্গে সম্পর্কিত? এতে কোন কাহিনী আছে? এ প্রসঙ্গে স্থানীয় গাইড লি সিও ইয়েন বলেছেন, এটা হল তিন শতাধিক বছর আগের কথা। অথার্ত এই কাহিনী মিন রাজবংশের শেষ দিকে ঘটে। তিনি বললেন,

    অতীতে 'ডা চিও চিয়া' ইয়ুন্নানের ঠেনছন জায়গার একটি স্থানীয় খাবার। ভাত আর কয়েক ধরনের সবজি আর মাংস এক সঙ্গে মিশিয়ে এই ধরনের খাবার তৈরী হয়। ছিন রাজবংশের প্রথম দিকে মিন রাজবংশের ক্ষমতাচ্যুতইয়াংলি রাজা ইয়ুন্নানের পশ্চিমাংশে পালিয়ে যান। তখন খুব রাত হয়ে গেছে। তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়লেন। তিনি একটি বাসায় আশ্রয় নিতে গেছে । বাসার মালিক তাঁর জন্যে ইয়ুন্নানের এই বিশেষ খাবার পরিবেশন করেন। খাওয়ার পর রাজা ইয়াংলি প্রশংসার অন্ত ছিল না। তখন থেকে এই সাধারণ খাবরের নাম হল ' ডা চিও চিয়া ।