সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সুদূর পেইচিং থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের সুরের ভুবন পরিবেশন করছি আমি আপনাদের বন্ধু লিলি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অনেক প্রতিভাবান বেহালাবাদক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বহু পুরস্কার জয় করেন এবং আন্তর্জাতিক সঙ্গীত মঞ্চে তারা খুবই তত্পর। আজকের অনুষ্ঠানে আমি তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। তিনি হচ্ছেন চীনের বিখ্যাত বেহালাবাদক সুয়ে ওউই।
সু্প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যে সঙ্গীত শুনছেন তা হচ্ছে "উপকূলের সাংগীতিক কবিতা" নামে সুয়ে ওউই'র পরিবেশিত একটি বেহালা সঙ্গীত। এই সঙ্গীতে সমুদ্রের বর্ণনা করার মাধ্যমে হৃদয়ানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। আচ্ছা, এখন সঙ্গীতটি শুনবো।
সুয়ে ওউই ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৮ বছর বয়সে বেহালা শিখতে শুরু করেন, ১৪ বছর বয়সে চীনের শাংহাই সঙ্গীত ইন্সটিটিউটের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং ১৯ বছর বয়সে চীনের কেন্দ্রীয় সঙ্গীত ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। তিনি যথাক্রমে লিন ইওচি, চেং শিশেং প্রমুখ চীনের বিখ্যাত বেহালা অধ্যাপকের কাছে বেহালা শিখেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর সুয়ে ওউই বৃটেনে গিয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে তিনি মস্কোয় অনুষ্ঠিত অষ্টম আন্তর্জাতিক ছাইকোভস্কি বেহালা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হন। দু'সপ্তাহ পর তিনি লন্ডনে ফিরে গিয়ে কার্ল ফ্লেছ আন্তর্জাতিক বেহালা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পুরস্পকারসহ যাবতীয় পুরস্কার পান। একই বছরে তিনি ব্রিটেনের তরুন একক বাদ্যযন্ত্র বাদকের বার্ষিক পুরস্কার অর্জন করেন। চমত্কার পরিবেশনা ও শ্রেষ্ঠ সাঙ্গীতিক প্রতিভার কারণে ২৬ বছর বয়সী সুয়ে ওউই বৃটেনের রাজকীয় সঙ্গীত ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত হন। তিনি হচ্ছেন এই প্রখ্যাত ইন্সটিটিউটে সবচেয়ে তরুন অধ্যাপক। এখন আমার সঙ্গে "তাশকোর্গানের ওপর সূর্যের আলো" নামে একটি বেহালা সঙ্গীত শুনবেন আপনারা। তাশকোর্গান চীনের সিনচিয়াংয়ের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। এটা চীনের সংখ্যালঘু তাজিক জাতির জনগণের প্রধান বসবাস এলাকা। সুয়ে ওউইয়ের পরিবেশনা উত্সাহব্যঞ্জক ও তেজীয়ান। তিনি তাঁর বিশেষ শৈল্পিক শৈলী ও বেহালার বৈচিত্র্যময় ধ্বনির মাধ্যমে তাজিক জাতির জনগণ গান গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাচ করার আনন্দদায়ক দৃশ্য ও জীবনের প্রতি তাদের ভালবাসা বর্ণনা করেন।
সুয়ে ওউই সবসময় আন্তর্জাতিক বিখ্যাত বাদক দল ও সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে সহযোগিতা করে অসংখ্য কন্সার্টের আয়োজন করেন এবং উচ্চ পর্যায়ের মূল্যায়ন পান। আন্তর্জাতিক সঙ্গীত সমালোচকদের মতে, তিনি হচ্ছেন একমাত্র অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ একক বাদ্যযন্ত্র বাদক। তার পরিবেশনা অতুল্য শৈল্পিক মানে পৌঁছেছে। আচ্ছা, প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এখন " জন্মভূমিকে অনুভব করি" নামে একটি সঙ্গীত শুনবো। এই নমনীয় ও কোমল সুরে যারা জন্মভূমি ছেড়ে দূরে চলে যায় তাদের মনের এক রকম আবেগ প্রকাশ পেয়েছে। এই সঙ্গীত সুয়ে ওউই খুব পছন্দ করেন। আচ্ছা, সঙ্গীতটি শোনা যাক।
বহু বছর ধরে সুয়ে ওউই বিদেশে জীবন কাটান। ২০০৪ সালে চীনের কেন্দ্রীয় সঙ্গীত ইন্সটিটিউটের আমন্ত্রণে তিনি মাতৃভূমিতে ফিরে এসে অর্কেস্ট্রা সঙ্গীত বিভাগের অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আশা করেন, শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাঁর পরিবেশনার অভিজ্ঞতা এবং সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ ও উপলব্ধি ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেবেন এবং আরো বেশী সঙ্গীত প্রতিভা লালন করবেন। আজকের অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমরা "মিওলিং পাহাড়ের ভোর"নামে একটি বেহালা সঙ্গীত উপভোগ করবো। এই সঙ্গীতে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সংখ্যালঘু জাতি মিয়াও জাতির লোকসঙ্গীতের সুর গ্রহণ করা হয়। সঙ্গীতে মনোগ্রাহী ও সাবলীল সুর এবং দ্রুত ও তুমুল ছন্দের মাধ্যমে মিয়াওলিং পাহাড়ের সুন্দর ভোরের দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে এবং মিয়াওলিং জাতির জনগণের আনন্দদায়ক ও সুখী জীবন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আচ্ছা, একসাথে সঙ্গীতটি শুনবো আমরা।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের সুরের ভুবন এখানে শেষ হলো। আগামী সপ্তাহের একই সময় আবার কথা হবে। আজকের সুরের ভুবন শোনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
|