v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-08 15:14:34    
গত এক বছরে চীনের যাদুঘর ব্রতের প্রসার

cri
    নান থুং দক্ষিণ-পূর্ব চীনের একটি ছোট শহর , গাড়ীতে করে চীনের মহানগর সাংহাই থেকে নান থুং যেতে প্রায় দুই ঘন্টা লাগে । কিছু দিন আগে নান থুনের একটি যাদুঘরের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য দেশবিদেশের এক শ' ত্রিশটিরও বেশী যাদু ঘরের প্রধানরা নান থুং গিয়েছিলেন । আন্তর্জাতিক যাদুঘর সমিতির চেয়ারম্যানও ফ্রান্সে প্যারিসে জাতি সংঘ শিক্ষা , সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান সংস্থার সদর দপ্তর থেকে নান থুং গিয়েছেন । আজকের সংস্কৃতি সম্ভার আসরে আমি নান থুঙের যাদুঘর ও চীনের যাদু ঘর ব্রতের প্রসার সম্পর্কে শ্রোতা বন্ধুদের কিছু বলবো ।

    ১৯০৫ সাল চীনের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক স্মরণীয় বছর । তখনও চীন সামন্ততান্ত্রিক ছিং রাজবংশের শাসনাধীন ছিল । ১৮৪০ সালের আফিম যুদ্ধের পর ছিং রাজবংশ শক্তিশালী পাশ্চাত্যদেশগুলোর চাপে অনেক অসম চুক্তি স্বাক্ষর করে । ফলে চীন এক আধা-সামন্ততান্ত্রিক দেশ ও আধা-উপনিবেশে পরিণত হয় । এই সময়পর্বে নান থুং শহরে চাং চিয়েন নামে এক শিল্পপতি শিক্ষার মাধ্যমে দেশ বাঁচানোর কাজ শুরু করেন । ১৯০৫ সালে তিনি চীনের প্রথম আধুনিক যাদুঘর –নান থুন যাদু ঘর প্রতিষ্ঠা করেন ।

    মাদাম ওয়াং তুং ইয়ুন নান থুং যাদু ঘরের বর্তমান প্রধান । তিনি বলেছেন , নান থুং যাদুঘর কোনো সাধারণ যাদু ঘর নয় । চাং চিয়েনের যাদু ঘর প্রতিষ্ঠার ধারণা আজকের দিনেও উন্নত বলা যায় । তিনি বলেছেন , নান থুং যাদুঘর মধ্য , দক্ষিণ ও উত্তর তিনটি ভবন নিয়ে গঠিত । এই তিনটি ভবনে ইতিহাস , চিত্রশিল্প ও উদ্ভিদ , পোকা ও প্রাণীর নমুনা রাখা হয় । এই যাদুঘরে সুসজ্জিত প্রদর্শনী কক্ষছাড়াও বাইরের মাঠে নানা ধরনের গাছগাছড়া ও জীবজন্তুর প্রদর্শনীও রয়েছে । প্রতিষ্ঠাতা চাং চিয়েনের ধারণা হলো এই যাদুঘর স্কুলগুলোর শিক্ষার একটি সহায়ক সংস্থা হিসেবে বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রচারের ভূমিকাও পালন করতে পারে । তা ছাড়া এই যাদুঘর নাগরিকদের ছুটির দিনের একটি বিনোদনের জায়গাও হতে পারে ।

    চীনে যাদু ঘরের ইতিহাস সুদীর্ঘ । যাদুঘর স্কুলগুলোর মতো সমাজের বিকাশের প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৬৮২ সালে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা ও প্রত্নবিদ্যা যাদুঘর দর্শকদের জন্যে উন্মুক্ত হয় । এটা পৃথিবীর প্রথম আধুনিক যাদুঘর । উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে পাশ্চাত্যের যাদুঘরগুলো নাগরিকদের কাছে উন্মুক্ত হওয়ার ধারণা চীনের বুদ্ধিজীবীরাও গ্রহণ করেছেন । সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান প্রচারের ক্ষেত্রে যাদুঘরের ভূমিকা চীনারাও দেখেছেন । তাই উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যাদুঘর প্রতিষ্ঠা ছিল চীনের অগ্রনী বুদ্ধিজীবীদের নাগরিকদের মনোগত মান উন্নত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা।

    আন্তর্জাতিক যাদু ঘর পরিষদের চেয়ারম্যান মাদাম আলিসান্দ্রা কামিন্স নান থুং যাদুঘর পরিদর্শনের পর এই যাদুঘরের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেছেন , গত শতাব্দীর শেষ দিকে প্রতিষ্ঠিত নান থুং যাদুঘর হচ্ছে যাদুঘরের ভূমিকা সম্প্রসারণের একটি দৃষ্টান্ত । কেননা পাশ্চাত্য দেশগুলোর যাদু ঘরগুলোতেও বিদ্যাগত গবেষণা ও প্রদর্শনীর সম্বন্বয়ের ইতিহাস মাত্র বিশ-ত্রিশ বছরের । তাই নান থুং যাদুঘরের ব্যবস্থাপনা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যাদুঘর চালুর জন্যে তাত্পর্যপূর্ণ।

    জানা গেছে গত শতাব্দীর প্রথম দিকে চীনে যাদুঘরের সংখ্যা ৭০ ছিল । কিন্তু ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে জাপানী আগ্রাসনের দরুন চীনের সামাজিক উন্নয়ন ও সংস্কৃতি গুরুতরভাবে বিপন্ন হয়েছিল । ১৯৪৯ সাল চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সময় যাদুঘরের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫টি। নান থুং যাদুঘর এই ২৫টির মধ্যে অন্যতম । নান থুং যাদুঘরের প্রধান মাদাম ওয়াং তুং ইয়ুন বলেছেন , জাপানী আগ্রাসী বাহিনী নান থুং দখল করে যাদু ঘরের বেশীর ভাগ পুরাকীর্তি ও নমুনা লুট করে । তাই নান থুং যাদুঘরের ইতিহাসে দেশের নিয়তিও প্রতিফলিত হয় । তিনি বলেছেন , নান থুং যাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে চাং চিয়েনের বলিষ্ঠ আর্থিক সমর্থন ও সাহায্যে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতো । চাং চিয়েনের মৃত্যুর পর , বিশেষ করে জাপ আক্রমণ বিরোধী যুদ্ধের সময় নান থুং যাদুঘর জাপানী বাহিনীর সদর দপ্তর ছিল । যাদুঘরের বিরাট বাগান তাদের ঘোড়াশাল ছিল , যাদুঘরের অনেক পুরাকীর্তি জাপানী আগ্রাসী বাহিনী নিয়ে যায় ।

    ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চীন সরকার চীনের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নান থুং যাদুঘরের অবস্থানকে স্বীকৃতি দেয় এবং চীনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুরানিদর্শনের মতো হিসেবে নান থুং যাদুঘর পুনঃনির্মাণ করেছে । তখন থেকে এই যাদুঘরে প্রদর্শিত পুরাকীর্তির সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে । বিশেষ করে এই যাদুঘর প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকীর আগে সরকারের অর্থবরাদ্দে যাদুঘরের পুরনো ভবনের পাশে এক আধুনিক ভবন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , এই নতুন ভবনে বিশেষভাবে নান থু শহরের ইতিহাস সম্পর্কিত প্রদর্শনী আয়োজিত হয় ।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার সাংস্কৃতিক গঠনকাজ জোরদার করছে এবং মানুষ ও সমাজের সামঞ্জস্য বিকাশের শ্লোগান তুলেছে । রাজধানী পেইচিংয়ে জাতীয় যাদুঘরের পুননির্মাণ হচ্ছে । পুনঃনির্মিত জাতীয় যাদুঘর আগের দ্বিগুন হবে । সাংহাই , সি আন ও চেং চৌ ইত্যাদি বড় শহরে নতুন আধুনিক যাদুঘরগুলো শহরগুলোর আকর্ষণীয় নিদর্শনে পরিণত হয়েছে । নান থুং শহরে নগররক্ষী হাও নদী বরাবর অঞ্চলে মোট ২৩টি পেশাগত যাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , এগুলোর মধ্যে বস্ত্র যাদুঘর , স্থাপত্য যাদুঘর , শরীরচর্চা যাদুঘর ও গণনাযন্ত্র এব্যাকাস যাদুঘর ইত্যাদি নানা বিষয়ের যাদুঘর আছে । নান থুং শহরে গড়পড়তা প্রতি ৫০ হাজার নাগরিকের জন্যে একটি যাদুঘর আছে । চীনের জাতীয় পুরাকীর্তি ব্যুরোর প্রধান সান চি সিয়ান বলেছেন , গত এক শ' বছরে চীনে যাদু ঘর ব্রতের যথেষ্ট প্রসার হয়েছে । বর্তমানে চীনে মোট ২৩০০টিরও বেশী যাদুঘরে মোট দুই কোটিরও বেশী পুরাকীর্তি আছে , প্রতি বছর ১৫ কোটি দর্শক এই সব যাদুঘর পরিদর্শন করতে যান । পুরনো চীনে শিল্পপতি চাং চিয়েন ব্যাপক জনসাধারণ ও সমাজের সেবার জন্য যে যাদুঘর চালু করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন , আজ পর্যন্ত তার এই ধারণার ঐতিহাসিক ও বাস্তব তাত্পর্য আছে ।

    তিনি আরো বলেছেন , সরকারের অর্থবরাদ্দে প্রতিষ্ঠিত পাবলিক যাদুঘর ছাড়া ব্যক্তিবিশেষের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যাদুঘরের সংখ্যাও বাড়ছে। গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে চীনে বেসরকারী যাদুঘরের আবির্ভাব ঘটে । বতর্মানে এই ধরনের যাদু ঘরের সংখ্যা এক শ'র বেশি হয়েছে । পেইচিংয়ের রক্ত চন্দন আসবাবপত্র যাদুঘরে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন রক্ত চন্দন আসবাবপত্র আর কুয়াং ফু যাদুঘরে ষষ্ঠদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর চীনামাটির পাত্র ও আসবাসপত্র সংরক্ষিত আছে ।