লাতিন আমেরিকার লোকসংখ্যা বিশ্বের লোকসংখ্যার ৮.৫ শতাংশ হলেও সে বিশ্বের ১৫ শতাংশেরও বেশী মিঠা পানি সম্পদ অধিকার করে। লাতিন আমেরিকায় বৃষ্টির পরিমান বিশ্বের ২৯ শতাংশ। বলা যায়, পৃথিবীতে লাতিন আমেরিকা পানি সম্পদে সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চলের অন্যতম। কিন্তু বিভিন্ন দেশে পানি সম্পদের বিন্যাস সমান নয়। লোকসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন ও শহরায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো পানির চাহিদা বৃদ্ধি ও জল সম্পদ দুর্ষিত হওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
জল সম্পদ সুরক্ষা ও যথাযোগ্য ব্যবহার করার জন্য লাতিন আমেরিকার দেশগুলো বিংশ শতাব্দীর ৮০র দশক থেকে পৃথক পৃথকভাবে নতুন জল সংক্রান্ত আইন প্রণয়নও বাস্তবায়ন করেছে, পানি সরবরাহ ও পরিবেশ ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার করেছে এবং ভিন্ন স্তরে জল সম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং পানি বাজারে ব্যক্তি বিশেষের অংশগ্রহণকে উত্সাহ দিয়েছে।
মেক্সিকো সরকার আইন প্রণয়ন উন্নয়নের মাধ্যমে ক্রমে এককভাবে জল সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাঠামো ও অংগ রাজ্য পর্যায়ে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনার কাঠামো চালু করেছে। যাবতীয় পানি ব্যবহার ও নিষ্কাশন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিশেষকে জাতীয় জল কমিশনের অনুমোদন পত্র আদায় করতে হবে।
চিলির জাতীয় জল আইনে জল ব্যবহারের অধিকার হস্তান্তরের ব্যবস্থা লিপিবদ্ধ করা হয়। সরকার ও ব্যক্তি বিশেষের যৌথ শেয়ার অধিকারের ব্যবস্থার মাধ্যমে জল বাজার গঠিত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে জারিকৃত নতুন জল অধিকার আইনে নদী ও হ্রদের সংরক্ষণ সম্পর্কে নিয়ম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, অনাবৃষ্টির মত বিশেষ অবস্থায় গণ পূর্ত মন্ত্রণালয় জল ব্যবহারের অধিকার নিয়ন্ত্রণ করবে যাতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার নিরন্তর ব্যবহারের নিশ্চয়তা বিধান করা যায় এবং সামাজিক ফলপ্রসূতা পাওয়া যায়।
আর্জেনটিনায় রাজধানী ছাড়া জল ব্যবহারের অধিকার বিভিন্ন স্থানীয় প্রাদেশিক সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্য রক্ষার কিছু প্রকল্প ব্যক্তিগত বিভাগকে দেয়া হয়। এভাবে সে দেশের জলসেচ সমিতিকে কর আদায়ের অধিকার সহ বৈধ অধিকার পেয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টিনা সরকার পানি ব্যবহার সমিতিগুলোকে সংযুক্ত হতে উত্সাহ দেয় যাতে বিরাট মাত্রায় জল উন্নয়ন করা যায়, প্রশাসনিক খরচ কমিয়ে আনা যায় এবং পানি সরবরাহের কার্যকরীতা বাড়ানো যায়।
কলম্বিয়ার প্রণিত নতুন জল আইনে জলসেচ ও জল নিশ্কাসন প্রকল্প নির্মানে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ করতে উত্সাহ দেয়া হয়। এবং পানি ব্যবহার সমিতিগুলোকে এই সব প্রকল্প নির্মান ও ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে উত্সাহ দেয়া হয়। বর্তমানে কলম্বিয়ার ২৪টি বড় ও মাঝারী জলসেচ অঞ্চলের ১৬টি পরিচালনার ভার স্থানীয় সমিতিগুলোর হাতে অর্পণ করা হয়েছে। বাস্তব অনুশীলনে প্রমাণিত হয়, এই সব বিধিনিয়ম জল সম্পদ সুরক্ষা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
অর্থনীতি উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় লাতিন আমেরিকার দেশগুলো জল সম্পদ বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে তাদের ব্যবস্থাপনা জোরদার করছে। মেক্সিকোর ভূখন্ডের তিন ভাগের দুই ভাগ অনাবৃষ্টি বা অর্ধ-অনাবৃষ্টির অবস্থায় রয়েছে। তাতে কৃষি উত্পাদন এবং অধিবাসীদের জীবনের পানি ব্যবহারের প্রয়োজনে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত কমেছে এবং পানির মধ্যে লবনের পরিমান বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মেক্সিকো সরকার অব্যাহতভাবে জল ব্যবহারের ফি আদায়ের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করে চলেছে যাতে ভূগর্ভস্থ পানির অতি উত্তোলনকে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। তাছাড়া, জলসেচ আরো কার্যকর করার জন্য মেক্সিকো সরকার কৃষি কাজে ফোঁটা জলসেচ ব্যবস্থা জনপ্রিয় করে তুলেছে। তাতে অনেক পানি সাশ্রয় হয়।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে জলসেচ ব্যবস্থার নির্মান উন্নত করা, শিল্প উত্পাদনের দুর্ষিত পানির বিশুদ্ধিকরণ ও পুনর্ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। অনেক কৃত্রিম জলভূমিতে দূষিত পানি বিশুদ্ধ করা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দূষিত পানি বিশুদ্ধিকরণের সামর্থ্য উন্নত করার জন্যে তারা কিছু উন্নত দেশের সঙ্গে দূষিত পানি বিশুদ্ধির প্রটোকল স্বাক্ষর করেছে, এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ও সংরঞ্জাম আমদানি করেছে। তাছাড়া, তারা জনসাধারণের মধ্যে জল সম্পদ সুরক্ষা ও সাশ্রয়ের প্রচারও জোরদার করেছে।
|