v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-07 18:21:17    
নিজের দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়া সাবেক গভর্নর

cri
    চীনের সবচেয়ে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত হাই নান প্রদেশে বাস করছেন একজন বুড়ো লোক । তিনি তিন বছর আগে তাঁর পরিচিত শহর ছেড়ে নিজের দেশের বাড়ি - একটি দূরদূরান্তের পাহাড়ি গ্রামে ফিরে গেলেন । তাঁর ফিরে যাওয়ার কারণে সেই দরিদ্র ছোট পাহাড়ি গ্রামে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে এবং সেখানকার গ্রামবাসীরা এখন শহুরে লোকের মত জীবনযাপন করতে শুরু করেছেন । এই বুড়ো লোক হলেন হাই নান প্রদেশের প্রাক্তন সহকারী গভর্নর ছেন সু হৌ । আজকের অনুষ্ঠানে আসুন , আমরা একসাথে শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এই পাহাড়ি গ্রামে যাই এবং প্রায় সত্তর বছর বয়সের এই বুড়ো লোকের সংগে পরিচিত হই । অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করছি আমি শি চিং উ ।

    সুং হাই গ্রাম হচ্ছে চীনের হাই নান প্রদেশের লিন কাও জেলার নান পাও নগরের একটি ছোট পাহাড়ি গ্রাম । এখানে সবসময় একজন হাসিখুশী বুড়ো লোক দেখতে পাওয়া যায় । তিনি পানির বোটল সহ একটি কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে গ্রামের এদিকে ওদিকে বেড়াতে পছন্দ করেন । তিনি হলেন ছেন সু হৌ । তাঁর পরিচ্ছেদ একটু মার্জিত হওয়া ছাড়া আশেপাশের কৃষকদের সংগে ছেন সু হৌয়ের কোনো তফাত নেই । গ্রামের অন্য এক শ' সত্তরেরও বেশী পরিবারের মত তিনিও তার বাড়ির সামনে একটি শাকসব্জির ক্ষেত খুলেছেন । সেই ক্ষেতে তিনি চীনা বাঁধাকপি , মূলা প্রভৃতি শাকের চাষ করেন ।

    দেখতে খুবই সাধারণ এই বুড়ো লোক হচ্ছেন হাই নান প্রদেশের সবচেয়ে শীর্ষস্থানীয় কৃষক । তিনি সাত বছর ধরে হাই নান প্রদেশের কৃষি বিষয়ক সহকারী গভর্নর পদে নিযুক্ত ছিলেন । পরে তিনি আবার অনেক বছর ধের প্রাদেশিক গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যাম পদে নির্বাচিত হন । ২০০৩ সালে অবসর নেয়ার পর ছেন সু হৌ ও তার স্ত্রী তাঁর দেশের বাড়িতে ফিরে যান এবং আবার কৃষক হন । ব্যাপক কৃষকদের সংগে তাঁর গভীর অনুভূতি আছে বলে তিনি দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধন্ত নিয়েছেন । এই প্রসংগে তিনি বলেছেন ,

    অবসর নেয়ার পর আমি শহরে থাককো , না গ্রামের বাড়িতে থাকবো । এটা আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ । বহু বছরব্যাপী কাজকর্মে আমাকে সবসময় কৃষকদের সংগে যোগাযোগ করতে হতো । তাই আমি কৃষি ও কৃষকদের প্রতি প্রগাঢ ভাবানুভুতি পোষণ করি । আমার মনে হয় , গ্রামে ফিরে গিয়ে কৃষকদের সংগে আমি অনায়াসে মেলামেশা করতে পারবো ।

    বর্তমানে চীনে ছেন সু হৌয়ের মত প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি উপমন্ত্রী পর্যায়ের উচ্চপদস্থ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন । তাদের অধিকাংশই এখন বড় বড় শহরের পদস্থ কর্মকর্তাদের বিশ্রামাগারে বসবাস করছেন । তাঁরা সবাই উত্তম চিকিত্সা পরিসেবা ও জীবনযাপনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন । এই দিক থেকে ছেন সু হো হলেন তাদের থেকে একটি ব্যতিক্রম ।

    গোড়ার দিকে ছেন সু হৌয়ের ধারণা ছিল শন্তিময় পরিবেশের মধ্যে তিনি তাঁর শেষ জীবন কাটাবেন । তবে দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর তিনি দেখতে পেলেন , সুং হাই গ্রাম তখনো ছিল একটি দরিদ্র গ্রাম । গ্রামবাসীরা প্রধানত ধানের চাষ করতেন । তাদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ছিল মাত্র এক হাজার ইউয়ান । তিনি বলেছেন , দরিদ্র গ্রামগুলো এখনো দারিদ্রবিমুক্ত হয় নি । আমি অনেক দিন ধরে কৃষির দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী গভর্নর ছিলাম । এর জন্যে আমি দায়ী । আমার দোষ কাটিয়ে উঠার জন্যে আমি কি করতে পারি । আমি গ্রামবাসীদের জন্যে কিছু করতে চাই যাতে আমার দেশের বাড়ি দারিদ্রমুক্ত হতে পারে ।

    তদন্ত করার পর ছেন সু হৌ দেখতে পেলেন , চাষবাসের একক কাঠামো হচ্ছে সুং হাই গ্রামের দারিদ্র্যের উত্পত্তি । স্থানীয় কৃষকরা বরাবরই ধান প্রভৃতি ঐতিহ্যিক খাদ্যের চাষ করতেন । এসব খাদ্যের উত্পাদন ক্রমে বাড়লেও তাতে অর্থনৈতিক ফলপ্রসূতা কম । তার তুলনায় চারপাশের গ্রামগুলো কলার চাষ করে নিজেদের অবস্থা সম্পন্ন করে তুলেছে । বস্তুত এর আগে সুং হাই গ্রামেও কলার চাষ করা হয়েছিল । তবে তেমন সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায় নি । নান পাও নগরের উপপ্রধান ওয়াং রু এর কারণ ব্যাখ্যা করে কলেছেন , সুং হাই গ্রাম অর্থকরী ফসলের তুলনায় খাদ্যশস্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতো । তিনি বলেছেন ,

    কলার চাষের উন্নতি ঘটাতে চাইলে অনেক সমস্যা সমাধান করতে হবে , তবে সর্বপ্রথমে কৃষকদের ভাবধারার সমস্যার নিরসন করতে হবে ।

    গ্রামবাসীদের ভাবধারার পরিবর্তন করার জন্যে ছেন সু হৌ চেষ্টার ত্রুতি করেন নি । তিনি বাইরের কলা চাষের ঘাঁটি দেখতে গ্রামবাসীদের সংগঠিত করেন । সুং হাই গ্রামের কৃষক লিন মাও ছিং বলেছন ,

    আমাদের সাবেক গভর্নরের পরিচর্যায় আমরা লে তুং , তুং ফাং প্রভৃতি জেলার কলা উত্পাদন ঘাঁটি পরিদর্শন করেছি । ফিরে আসার পর গ্রাম কমিটি কলা চাষের জন্যে আমাদের পরামর্শ দিয়েছে ।

    তারপর ছেন সু হৌ আবার পরিবারে পরিবারে গিয়ে কলা চাষের জন্যে কৃষকদের উত্সাহ দেন । অবশেষে সবচেয়ে সক্রিয় সাতজন কৃষক একটি কলা সমবায় সমিতি গঠন করেন । তিনি বিনাখরচে এই সমিতির উপদেষ্টা হন । পুঁজির সমস্যা সমাধানের জন্যে ছেন সু হৌ ঋণদান সংস্থায় গিয়ে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করেন । ঋণ সংস্থার পরিচালক ছেন ফোং চাং প্রথমদিকে সংশয় প্রকাশ করলেন । ছেন সু হৌ নিজের নাম দিয়ে তার নিশ্চয়তা বিধান করেন । ছেন সুহৌ হাই নান প্রদেশের কৃষি একাডেমির বিশেষজ্ঞদের ডেকে এনে কৃষকদের পরামর্শ দেন । ফলনের পর ছেন সু হৌয়ের প্রচেষ্টায় সংশ্লিষ্ট কারখানার সংগে যোগাযোগ করে প্রথম কিস্তির কলা বিক্রি করা হয় ।

    এক বছর পর এই সাতজন কৃষক ৪ লাখ ইউয়ান উপার্জন করেছেন । তারা শুধু ঋণ সংস্থার ৬০ হাজার ইউয়ান ঋণ পরিশোধ করেছেন , তাই নয় , উপরন্তু এই ঋণ সংস্থায় ৩ লাখেরও বেশি ইউয়ান জমা দিয়েছেন ।

    সু হাই গ্রামের অবস্থা ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়ে উঠেছে । ছেন সু হৌ আবার গ্রামবাসীদের নেতৃত্ব দিয়ে উত্পাদন ও জীবনযাপনের ব্যবস্থাদি উন্নত করার চেষ্টা করছেন । তাঁর উদ্যোগে সুং হাই গ্রামে কৃষি ও বাণিজ্য বাজার , চিকিত্সালয় ও সাংসকৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে । এইভাবে সুং হাই গ্রামের কৃষকদের জীবনযাত্রার অবস্থা ও জীবনের রীতিনীতির বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । গ্রামবাসীরা সবাই বলেন , ছেন সু হৌ দেশের বাড়িতে ফিরে কৃষক হয়েছেন , তার সুবাদে সুং হাই গ্রামের কৃষকরা এখন শহুরে লোকের মত জীবনযাপন করতে পারছেন ।