v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-06 14:15:01    
ওয়াং শুয়েন আর তাঁর লেজার স্কেনিং ফোটো টাইপসেটিং সিস্টেম

cri
    তিনি হলেন, চীনা অক্ষর লেজার স্কেনিং ফোটো টাইপসেটিং সিস্টেমের উদ্ভাবক। এই উদ্ভাবন চীনে তথা বিশ্বে চীনা অক্ষরে ছাপার প্রযুক্তির পরিবর্তন করেছে। তিনি সম্প্রতি রোগে চিরকালের মতো চলে গেছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও তাঁর শোক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর নাম ওয়াং শুয়েন।

    ৭০ বছর আগে, ওয়াং শুয়েন চীনের মহানগর শাংহাইয়ের এক পন্ডিতের পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ছোটোবেলা থেকে তিনি গণিত চর্চায় বেশি আগ্রহী। ১৯৫৪ সালে তিনি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন, আর সবই গণিত বিষয়ে। অবশেষে তিনি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গণিত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন। দ্বিতীয় বছরে বিষয় বেছে নেয়ার সময়ে তিনি সাহস নিয়ে তখনকার খুব অনুন্নত কোম্পিউটার গণিত বিষয় নিয়েছেন। তিনি মনে করেন এ বিষয় নতুন বলে তার বিকাশের সম্ভাবনা কিন্তু বিশাল এবং তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এই বিষয় চীনের উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর তিনি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে অব্যাহতভাবে তার গবেষণা চালিয়েছেন।

    ওয়াং শুয়েনের দীর্ঘকালিন সহকর্মী লিউ ছিও ইয়ুন সাক্ষাত্কার দেয়ার সময়ে বলেছেন, নয়া চীন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর, বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে, ওই আমলের চীনা প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীরা দেশের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে বহন করতে সংকল্পবদ্ধ। ওয়াং শুয়েন তাঁদের এক দৃষ্টান্ত।

    "ওয়াং শুয়েন মনে করেন, বিজ্ঞান চর্চার ব্যাপারে শুধু ভাল থিসিস লিখতে পারলেই যথেষ্ট নয়, বরং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলগুলোকে বাজারের পণ্যদ্রব্য হিসাবে কাজে লাগাতে হবে, তা সমাজের উন্নয়নের চালিকাশক্তিতে পরিণত করা উচিত।"

    বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে ওয়াং শুয়েন চীনা অক্ষর প্রোসেসিং প্রযুক্তি নিজের গবেষণার প্রধান অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তখন চীন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো লিড প্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করতো। এই প্রযুক্তির অনেক অসুবিধা আছে। তখন বিদেশে কম্পিউটারে টাইপসেটিং সিস্টেমের গবেষণা চলছিল। কিন্তু চীনা ভাষার চিত্রাক্ষরগুলোকে বর্ণানুক্রমিক ভাষার চেয়ে কম্পিউটারের ভাষায় রূপান্তরিত করা আরো কঠিন।

    মনোযোগ দিয়ে গবেষণার পর, ওয়াং শুয়েন নিজের প্রস্তাব পেশ করেছেন।

   "আমি গণিত পদ্ধতিতে অক্ষরের আকার প্রকাশ করার প্রস্তাব পেশ করেছি। এই ধারণা তখন লোকেরা কল্পনাও করতে পারেননি তারা তামাসা করে বলেছেন, এটা নিছক এক গণিত গেমস। এই চাপে পড়েও আমার নিজের প্রস্তাবে দৃঢ় বিশ্বাস বজায় রেখেছি।"

    ওয়াং শুয়েনের পদ্ধতি হলো প্রতি চীনা অক্ষরকে বিভিন্ন বিন্দুতে রূপান্তর করা। এরপর লেজার স্কেনিং করা। চীনা অক্ষরের মোট সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি, তা প্রকাশ করার জন্য শত বিলিয়ন বাইটের ডেটা প্রয়োজন। তখন এই বিশাল ডেটা কিভাবে সংরক্ষণ করা একটি সমস্যা।

    তা সমাধান করার জন্য ওয়াং শুয়েন ও তার কর্ম গ্রুপের সঙ্গে দিনরাত কাজ করে অবশেষে নতুন তথ্য প্রোসেসিং যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেছেন। ১৯৭৯ সালে ওয়াং শুয়েন প্রথম চীনা ভাষার লেজার স্কেনিং ফোটো টাইটসেটিং সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন। ১৯৮৫ সালে তার গবেষণার ফলাফল চীনের শিনহুয়া সংবাদ সংস্থায় ব্যবহৃত হয়।

    পশ্চিমা দেশ ৪০ বছর ধরে লেজার স্কেনিং টাইটসেটিং সিস্টেম গবেষণা করেছে। ওয়াংশুয়েন ১৮ বছরের মধ্যে চীনা ভাষার সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর অর্জিত এই সাফল্যে সন্তুষ্ট নন। তার উদ্যোগে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় ফাউন্ডার কোম্পানি স্থাপন করেছে। ১৯৮৮ সালে ফাউন্ডার কোম্পানির লেজার স্কেনিং টাইপসেটিং সিস্টেম বিদেশের অনুরূপ সিস্টেমের পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম নিয়ে চীনের প্রায় গোটা বাজার ও বিদেশের ৮০ শতাংশ বাজার দখল করেছে।

    তাঁর বিরাট অবদানের জন্য তিনি চীনের পেটেন্ট উদ্ভাবনের পুরষ্কার, ইউনেস্কোর বিজ্ঞান পুরষ্কার এবং চীনের জাতীয় সর্বোচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরস্কার ইত্যাদি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ওয়াংশুয়েনের মতে তিনি এতো বেশি পুরস্কার পাওয়ার প্রধান কারণ তিনটি :

    "আমার মতে তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি, বিজ্ঞানের প্রতি আসক্তি এবং টীম-স্পিরিট হলো সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ কারণ। একজন বৈজ্ঞানিকের অবশ্যই তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি থাকতে হয়।"

কাজ ছাড়া, ওয়াং শুয়েনের শখ হলো পিকিং ওপেরা। তিনি বলেছেন, বিখ্যাত পিকিং ওপেরা অভিনেতার অনন্য সাধারণ দক্ষতা আছে। বৈজ্ঞানিকদেরও অনন্য সাধারণ দক্ষতা থাকতে হবে, তা হলো স্বাধীন উদ্ভাবনা।