v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-03 19:34:46    
মা ও তাঁর তোতলা ছেলে

cri
    মা তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন, তাঁর এক ছেলে আছে ,ছেলের নাম ইয়াংইয়াং । সে প্রাথমিক স্কুলে পড়ছে । তোতলা হওয়ার কারণে সে অন্য লোকের সঙ্গে কম কথা বলে। ক্লাসে শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তার তোতলামি বিশেষভাবে গুরুতর । সহপাঠিরা তাকে উপহাস করে বলে ইয়াংইয়াং হীনমন্যতাবোধ করে । এ জন্যে মা মনে কষ্ট পান ।

    দুবছর আগের পয়লা জুন--শিশু দিবসের প্রাক্কালে , ইয়াংইয়াংয়ের সহপাঠিরা শিক্ষকের পরিচালনায় নাচগাণের মহড়া দিচ্ছিল। তোতলামির কারণে ইয়াংইয়াং সহপাঠিদের সারিতে যোগ দিতে পারেনি । সেই দিন স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে ইয়াংইয়াং দুঃখে কেঁদে উঠে । মা তাকে জিজ্ঞেস করেন , কি হয়েছে তোমার ? সে বলল , সে চায় সহপাঠিদের মতো মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতে । কিন্তু তোতলামির কারণে সে এ ধরণের সুযোগ হারিয়েছে ।

    ছেলের কথা শুনে মার কষ্ট হয় । কিছু ক্ষণ ভাবার পর মা ছেলেকে বললেন , " ইয়াংইয়াং , আজ থেকে তুমি মার সাথে মনোযোগের সঙ্গে কবিতা আবৃতি অনুশীলন করো । মা কথা দিচ্ছি যে, এমন এক দিন হবে সে দিন তুমি মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবিতা আবৃত্তিকরতে সক্ষম হবে । "

    " সত্যি?" ছেলে আবেগের সঙ্গে আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল ।

    " মা বললেনঃ আমি কখনো তোমার সাথে মিথ্যা কথা বলিনি । মনোযোগের সঙ্গে অনুশীলন করলেই কেবল তুমি সফল হবে । কারণ তুমি বুদ্ধিমান ছেলে । আমি বিশ্বাস করি যে , তুমি তোতলামিকে পরাজিত করতে পারবেই " কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে মা নিজের হাত তুলে ছেলেকে উত্সাহ দেন ।

    " তা …তাহলে এখুনি শুরু করা যাক ", ইয়াং ইয়াং এক মিনিটের জন্যেও অপেক্ষা করতে চায় না ।

    " আচ্ছা , আমরা এখনি শুরু করি ।" মা ইয়াংইয়াংকে কবিতা আবৃতি শিখাতে শুরু করলেন ।

    শুরুতে ইয়াংইয়াংয়ের আত্মবিশ্বাস ছিল না ,তাই আবৃত্তির অনুশীলন ধীরগতিতে চলছিল । এই অবস্থা দেখে মা বারবার তাকে উত্সাহ দেন ,তাকে তোতলামি সংশোধন করার আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেন। মায়ের উত্সাহে ইয়াংইয়াং তোতলামি কাটিয়ে ওঠার আস্থা বেড়েছে । ইয়াংইযাংয়ের দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে ।

    ইয়াংইয়াংয়ের তোতলামি সংশোধন করার জন্যে মা অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করেছেন , তাদের পরামর্শ নেন । মা জানেন , ইয়াংইয়াংকে আরও বেশী উত্সাহ দিতে হবে , তার আস্থা জোরদার করতে হবে । তার আত্মবিশ্বাস থাকলে কথা বলা সময় সে সহজে উত্তেজিত হবে না এবং তোতলামির বদলে ধীরেধীরে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে সক্ষম হবে ।

    যাতে ইযাংইয়াংয়ের আত্মবিশ্বাস জোরদার হয় তার এক মাত্র উপায় হল অনবরতভাবে তাকে উত্সাহ দেয়া । সুতরাং ইয়াংইয়াংয়ের সামান্য অগ্রগতি উপলব্ধি করলে মা অনেক উত্সাহব্যন্জক কথা বলে তার প্রশংসা করতেন । যাতে ইয়াংইয়াং উত্তেজনা ও মঞ্চ ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারে তার জন্যে মা সর্বপ্রথমে ছেলেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবৃত্তিরঅনুশীলন করাতেন । ছেলের সামান্য উন্নতি দেখলে মা আতীয়স্বজন আর বন্ধুদের দর্শক হিসেবে আমন্ত্রণ জানান । ইয়াংইয়াং সবার সামনে আবৃত্তি করে । প্রথমে সে উত্তেজিত হয় । কিন্তু সবার উত্সাহ ও প্রশংসা শুনে তার সাহস হয় এবং স্বাভাবিকভাবে আবৃতি করতে শুরু করে । ইয়াংইয়াংয়ের তোতলামির অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে ।

    এ সময়ে ইয়াংইয়াংয়ের মা ছেলের শিক্ষকের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সাক্ষাত করেছেন ।ছেলেকে প্রশ্ন করার সময় শিক্ষকে তাকে উত্সাহ দিতে এবং সহপাঠিদের তাকে উপহাস না করার তাগিদ দিতে মা শিক্ষকের কাছে অনুরোধ জানান ।

    সবার উত্সাহে এক বছর কঠোর প্রচেষ্টা চালানোর পর ইয়াংইয়াং সাফল্যের সঙ্গে তোতলামি সংশোধন করেছে । এতে শিক্ষক ও সহপাঠিরা বিস্মিত হন এবং তার জন্যে আনন্দবোধ করেন ।

    দ্বিতীয় বছরের পয়লা জুন—শিশু দিবস উদযাপনী অনুষ্ঠানে ইয়াংইয়াং সাফল্যের সঙ্গে "উত্সবকালে আমি উচ্চকন্ঠে গান গাই "শিরোনামে কবিতা আবৃত্তিকরল । মায়ের লেখা শতাধিক লাইনের দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তিকরার সময়ে ইয়াংইয়াংয়ের মোটেই তোতলামো ছিল না । তার আবৃত্তিউপস্থিত দর্শকদের ভীষণ সমাদর পেয়েছে ।

    এখন ইয়াংইয়াংয়ের তোতলামো অবস্থা পুরোপুরি কেটে গেছে । শিক্ষকের সাহায্যে সে স্কুলের ক্ষুদ্র ঘোষণা মঞ্চের এক ক্ষুদ্রেঘোষক হয়েছে ।

    নিজের ছেলেকে তার তোতলামি সংশোধন করতে সাহায্য করার মাধ্যমে ইয়াংইয়াংয়ের মা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন যে ,উদ্ভিদের রোদ আর ও বৃষ্টি দরকার তেমনি শিশুদেরও উত্সাহ প্রয়োজন। কারণ উত্সাহ বাচ্চাদের সাফল্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে ।

    "মা ও তাঁর তোতলা ছেলে"শিরোনামে গল্পটি শোনানো হলো । বন্ধুরা,বিশেষ করে বাবা-মায়েরা গল্পটি থেকে আপনারা কিছু বুঝেছেন, কিছু শিখেছেন ? আশা করি এতে আপনারা কিছু উপকৃত হলেন । যদি আপনার ছেলে বা মেয়ে থাকে , যদি তাদের কোনো ভুলত্রুটিবা দুর্বলতা থাকে ,তাহলে তাদের ভুলত্রুটি বা দুর্বলতাদূর করতে তাদের নিজের প্রচেষ্টা ছাড়াও বিশেষভাবে আপনার উত্সাহ প্রয়োজন ।আপনার উত্সাহ তাদের অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে আস্থা ও সাহস যোগাবে । আশা করি আপনাদের স্নেহে ও যত্নে আপনাদের সন্তানরা সুষ্ঠুভাবে বড় হয়ে উঠবে ।