v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-03 16:01:16    
চীনের কৃষক সংস্কারকারক ও উদ্ভাবক ওয়াং ল্যু ই

cri
    চীনের শাংতুং প্রদেশের স্যু কুয়াং শহরের সান ইউয়ান চু গ্রামের পার্টি সম্পাদক ওয়াং ল্যু ই বহু পুরস্কার ও মর্যদা পেয়েছেন । কিন্তু এ সব পুরস্কারের মধ্যে তিনি সদ্য প্রাপ্ত ' চীনের কৃষি প্রতিভা পুরস্কারের' ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেন । তিনি বলেছেন , এটাই আমাদের কৃষকদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজের সর্বোচ্চ পুরস্কার ।

    ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় গ্রামীণ কর্ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । এই সম্মেলনে ওয়াং ল্যু ই ছাড়া চীনের কৃষি প্রতিভা পুরস্কার জয়ী অন্য ন'জন সবাই হচ্ছেন শিক্ষাবিদ , বিশেষজ্ঞ আর পন্ডিত । শুধু ওয়াং ল্যু ই একজন হচ্ছেন নিছক কৃষক ।

    ইউয়ান লুং পিং নামে চীনের একজন কৃষি বিজ্ঞানী চীনের প্রাচুর্যময় ফসল পাওয়ার জন্য অবদান রেখেছেন । ওয়াং ল্যু ই চীনের জনসাধারণের খাদ্যদ্রব্য আর শাক- সব্জির পরিমাণ ও রকমারিতা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ।

    স্যু কুয়াং জেলা শাক-সব্জি চাষ করা হয় বলে সুবিদিত। গত শতাব্দির আশির দশকে বহু কৃষক পরিবারের উদ্যোগে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণ ঢাকা কৃষি জমিতে শীতকালে গরমকালের শাক-সব্জি চাষ করা হয়েছিল । তবু তখন তাতে সুফল হয় নি । ওয়াং ল্যু ই এই চাষাবাদের প্রযুক্তি নিয়ে সংস্কার করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন , যাতে তার মাধ্যমে মাসে মাসে আয় করা যায় ।

    তিনি পেইচিং , উত্তর-পূর্ব চীন সহ ছ'টি প্রদেশ মো শহরে গিয়েছিলেন । তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে শাক-সব্জি চাষের জন্য প্রচুর স্বচ্ছ প্ল্যাস্টিকের আবরণের কৃষি জমি আর গ্রীন হাউস পরিদর্শন করেছেন এবং কয়েক লক্ষ শব্দের নোট লিখেছেন ।

    নানা রকম নতুন প্রযুক্তি শেখার জন্য তিনি শুধু অনুকরণ করেন নি । তিনি বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আগেকার স্বচ্ছ প্ল্যাস্টিকের আবরণের জমির ক্ষেত্রে ৫টি প্রযুক্তিগত সংস্কার চালিয়েছেন । এই ৫টি সংস্কারমূলক ব্যবস্থা অনুযায়ী শীত নিবারণের জন্য প্লাস্টিকের তাবুর বাইরের খাটো দেয়ালের ঘনত্ব ৩০ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হবে; এর সংগে সংগে প্লাস্টিকের তাবুর স্বচ্ছতা ও সৌর শক্তি গ্রহণের সামর্থ্য বাড়ানোর জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ।

    প্লাস্টিকের তাবুর প্রযুক্তিগত পরীক্ষা সফল হওয়ায় পরিদর্শন করার জন্য বহু বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপকের মনোযোগও আকর্ষণ করা হয়েছে । বিশেষজ্ঞরা তার সংস্কারমূলক কাজের খুব প্রশংসা করেছেন ।

    ওয়াং ল্যু ই একাগ্রচিত্তে কৃষি প্রযুক্তি সংস্কারের কাজে ব্রতী হন । প্লাস্টিকের তাবুতে শসা চাষের জন্য কাঠি দিয়ে কাঠামো নির্মাণ করা হতো । কিন্তু সংগে সংগে এই সমস্যাও ঘটে । কাঠির কাঠামো ব্যবহার করা হলে সৌর শক্তি ব্যবহারের হারও কমে যেতো । পরে তিনি কাঠির বিনিময়ে প্ল্যাস্টিকের দড়ি ব্যবহার করলেন । এতে যেমন পর্যাপ্ত সৌর শক্তি ব্যবহার করা গেছে , তেমনি ব্যয়ও বাঁচানো হয়েছে । এই প্রযুক্তি সংস্কারে শসা চাষের ব্যয় আগের চেয়ে ১২ গুণ কমে গেছে ।

    এই ধরণের সংস্কার আর উদ্ভাবন ওয়াং ল্যু ই অনেক কিছু করেছেন । কৃষকদের স্বচ্ছল জীবনযাপন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আর কৃষকদের বিশেষ কৃতিত্বের দিক থেকে তিনি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের তাবুতে শাক-সব্জি চাষের ক্ষেত্রে একজন দক্ষ প্রকৌশলীতে পরিণত হয়েছেন ।

    ১৯৯০ সালের শেষ নাগাদ চীনের একজন রাষ্ট্র নেতা শান্ ইউয়ান চু গ্রামে শাক-সব্জি চাষের প্লাস্টিকের তাবু পরিদর্শন করেছেন । তিনি ওয়াং ল্যু ইকে বলেছেন , আপনারা বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে শ্রেষ্ঠ ফলপ্রসূতা অর্জন করেছেন । এই ভিত্তিতে আপনাদের দূষণমুক্ত শাক-সব্জি চাষ করতে হবে , যাতে আরো বেশি শাক-সব্জি রফতানি করা যায় ।

    তাহলে দূষণমুক্ত শাক-সব্জি বলতে কি বুঝায় , এই বিষয়ে ওয়াং ল্যু ই বুঝলেন না । এ বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য তিনি শানতুং প্রদেশের রাজধানী চিনানে প্রাদেশিক শাক্-সব্জি গবেষণাগারে গেলেন । কিন্তু দুঃখের বিষয় , তখন এই গবেষণাগারেও দূষণমুক্ত শাক্-সব্জি বিষয়ক কোনো গবেষণার কাজ চালানো হয় নি । এবার শানতুং প্রাদেশিক শাক্-সব্জি গবেষণাগার পরিদর্শনে যদিও দূষণমুক্ত শাক-সব্জি চাষ সংক্রান্ত কোনো প্রযুক্তিগত তথ্য পাওয়া যায় নি , কিন্তু ওয়াং ল্যু ই দূষণমুক্ত শাক্-সব্জি চাষ বিষয়ক মৌলিক জ্ঞান সম্পর্কে আপাততঃ জানতে পেরেছেন । আসলে শাক্-সব্জি চাষের জন্য বহু জ্ঞান ও কৌশল প্রয়োজন । তখন তিনি এই আশ্বাস দিয়েছেন যে , ক্রেতারা যাতে নিরাপদে খেতে পারেন , সেজন্য তিনি যততাড়াতাড়ি সম্ভব দূষণমুক্ত শাক্- সব্জি চাষের কাজ শুরু করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবেন ।

    বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ১৯৯২ সালে দূষণমুক্ত শাক্-সব্জির চাষ শান ইউয়ান চু গ্রামে প্রথমবারের মতো সাফল্যমন্ডিত হয়েছে । তার পর তারা পেইচিংয়ে স্যু কুয়াংয়ের উন্নত গুণগত মানের শাক-সব্জি বিক্রি করার একটি 'বিশেষ সবুজ পথ' গড়ে তুলেছেন । ২০০১ সালে চীনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শান ইউয়ান চু গ্রামের স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণের ৫০ একর কৃষি জমিকে চীনের প্রথম দফা কীটনাষকমুক্ত শাক্-সব্জি উত্পাদনকারী ঘাঁটির অন্যতম হিসেবে ধার্য করা হয়েছে । এখন তাদের শাক্-সব্জি পেইচিংয়ের বড় বড় সুপারমার্কেটে বিক্রি করা হয় ।

    দূষণমুক্ত শাক্-সব্জি চাষ আর সারা দেশে এই প্রযুক্তি সম্প্রারিত করার জন্য শান্ ইউয়ান চু গ্রামে বেশ কিছু দক্ষ প্রকৌশীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । গত দশ-বারো বছর ধরে তারা সারা দেশের শাক-সব্জি উত্পাদন ব্রতে এগিয়ে রয়েছেন । এসব সাফল্য অর্জন ওয়াং ল্যু ই'র বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান আর ধ্যানধারণার উপর নির্ভর করেছে ।

    যে দিন দূষণমুক্ত শাক-সব্জি চাষের কাজ শুরু হয় , সে দিন থেকে ওয়াং ল্যু ই কখনো তার গবেষণার পদক্ষেপ বন্ধ করেন নি । এই ক্ষেত্রের কাজ আরো গভীরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চীনের কৃষি বিজ্ঞান একাডেমী , শানতুং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি ১৭টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারের সংগে গ্রামের সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । শাক-সব্জির নতুন সংখ্যাপ্রকার আর নতুন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা আর উন্নয়নের কাজ চালাবার জন্য তারা ন'জন বিশেষজ্ঞকে দীর্ঘমেয়াদী পেশাগত পরামর্শদাতা হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ।

    এখন স্যু কুয়াং শাক্-সব্জি প্রদর্শনী শাক-সব্জি চাষের প্রযুক্তি দেখানো একটি মেলায় পরিণত হয়েছে । এই মেলায় দেশ-বিদেশের নানা রকম চাষের প্রযুক্তি দেখানো হচ্ছে । স্যু কুয়াংয়ের শাক-সব্জি আরো বিস্ময়কর পরিচয় দিচ্ছে ।