v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-03-03 13:45:19    
চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোতে প্রচলিত কুকুর সম্পর্কিত গল্প

cri

    চীনের চান্দ্র বর্ষের ঐতিহ্য অনুসারে এ বছর চীনের নতুন বছরকে কুকুর বর্ষ বলে ধার্য করা হয়েছে ।

    চীনের জনসাধারণের মধ্যে যে এত বেশি কুকুর সম্পর্কিত গল্প প্রচলিত , তাতে জনসংখ্যালঘুজাতির কুকুর পছন্দ করার কারণ , জাতির উত্স সম্পর্কিত রূপ - কথা আর ধর্মীয় বিশ্বাসের সংগে এ সব রূপ -কথার সম্পর্কের পরিচায়ক । আজকের অনুষ্ঠান শুনার পর চীনের বহু সংখ্যালঘুজাতি যে কুকুরকে শ্রদ্ধা ও পছন্দ করে আর কুকুরের মাংস খায় না , সে সম্বন্ধে আপনারা কিছু জানতে পারবেন ।

    কুকুর মানব জাতির বন্ধু । ৪ সহস্রাধিক বছর আগেই কুকুর এক জাতের গৃহপালিত পশু হিসিবে লালন পালন হয়েছে । তারা মানব জাতির জন্য শিকার , বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি কাজ করতে পারে । কুকুর মালিকের অনুগত বলে মানুষের আদর পেয়েছে । গত হাজার বছর ধরে কুকুর মালিককে উদ্ধার করা সম্পর্কিত বেশ কিছু গল্প প্রচলিত রয়েছে । ফলে কুকুর এমন কি কিছু জাতির উত্সেপরিণত হয়েছে ।

    দক্ষিণ চীনের পাবর্ত্য এলাকায় বসবাসকারী ইয়াও জাতি আর শে জাতি কুকুরকে যার যার জাতির উত্স হিসেবে মনে করে । অতি প্রাচীনকালে একজন রাজা একটি শত্রু দেশের সংগে যুদ্ধ করলেন । তিনি এই প্রতিশ্রুতি দিলেন যে , যে শত্রু পক্ষের রাজাকে হত্যা করবে তিনি সেই রাজার রাণীকে তার সংগে বিয়ে দেবেন । ফেন্ হু নামে একটি কুকুর তার অসাধারণ কৌশলের সাহায্যে শত্রু পক্ষের রাজাকে হত্যা করে রাণীকে নিয়ে গেল । ফেন হু নামে কুকুর রাণিকে দক্ষিণ চীনের পাবর্ত্য এলাকায় নিয়ে এলো । সে মানুষে পরিণত হল এবং বংশ বিস্তার করল । তাদের বংশধর পশ্চিম ও পূর্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে । পশ্চিমে বসবাসকারীরা আজকের ইয়াও জাতিতে পরিণত হয়েছে এবং পূর্বে বসবাসকারীরা হচ্ছে আজকের শে জাতির লোকেরা । সুতরাং ইয়াও জাতি আর শে জাতি সম্মিলিতভাবে ফেন হুকে যার যার জাতির উত্স হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকে ।

    ইয়াও জাতি আর শে জাতি কুকুরকে যার যার জাতির উত্স হিসেবে যে শ্রদ্ধা করে , সে সম্পর্কিত কতকগুলো আচার ব্যবহার এখনো দেখা যায় । তাদের জামা-পোষাক , উপাসনা ক্রিয়া আর ঐতিহাসিক গ্রন্থেও কুকুরের প্রভাব দেখা যায় । চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর সংখ্যালঘুজাতি তত্ত্ব গবেষণাগারের শে জাতির প্রফেসার মিঃ হো সিং লিয়াং এ প্রসংগে বলেছেন ,

    দক্ষিণ চীনের চেচিয়াং প্রদেশে বসবাসকারী শে জাতির বাড়িতে ড্রাগণ ও কুকুর খচিত যে চিত্র খোদাই করা হয় , তাও ফেন হুর মাথা সংবলিত চিত্র । শে জাতির লোকদের বাড়িতে যখন বিয়ে ও শোকাচার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় , তখন ফেন হুর মাথা সংবলিত চিত্র বাসার বড় কক্ষের মাঝখানের দিকে টাঙ্গানো হয় । তখন সবাই এই ধর্ম ক্রিয়ায় এসে উপাসনা করেন । ইয়াও জাতি ফেন ওয়াং নামক উত্সব পালন করে । এই উত্সবকালে ফেন ওয়াং নাচ করেন , ফেন ওয়াং গান পরিবেশন করেন । ফেন ওয়াং নাচ এমন এক ধরণের নাচ , সে নাচে কুকুরের আকার নকল করা হয় । কোনো কোনো অঞ্চলে এখনো কুকুর সংবলিত জামা-পোশাক সংরক্ষিত আছে । যেমন শে জাতির কুকুরের মাথাওয়ালা টুপি আর ইয়াও জাতির রঙ্গিন পোশাক । ঐতিহিসিক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী ফেন হু কুকুরের লোম রংবেরংয়ের । সুতরাং ইয়াও জাতি ফেন হুর রং অনুকরণ করে রঙ্গিন পোশাক প্রস্তুত করে থাকে ।

    ইয়াও জাতি আর শে জাতির লোকেরা দক্ষিণ চীনের ব্যাপক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন । মিয়া , চুয়ান , থু , লি সু প্রভৃতি জাতির লোকেরাও তাদের সংগে মিলে বাস করেন । তাদের জীবনযাপনে ফেন হু সম্পর্কিত রূপকথাও প্রচলিত । তারা কুকুরকে আদর করেন এবং কুকুরের মাংস খান না ।

    চীনে মান জাতি এমন একটি জাতি , যে জাতি কুকুরের মাংস খায় না । তারা যে কুকুরের মাংস খান না , গল্প অনুযায়ী তার মূল কারণ এই যে , এক বার মান জাতির রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নুরহাছ্ শত্রু বাহিনীর গ্রেফতার থেকে রেহাই পাবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন । তিনি একটি কৃষক পরিবারের বাসার একটি উনুনে আশ্রয় নিচ্ছিলেন । এটা দেখে শত্রুরা উনুনে কাঠ দিয়ে তাকে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করতে চেয়েছিল । শত্রুরা চলে যাবার পর একটি কুকুর আসল , তার শরীর পানিতে ভিজে গেল । কুকুর বার বার প্রচেষ্টা চালিয়ে আগুণ নিবিয়ে দিলো । অবশেষে নূরহাছ্ উদ্ধার পেলেও অগ্নিতে কুকুরটি ভস্মীভূত হয় ।

    তার পর নূরহাছ সম্রাট হন । উপকারী হিসেবে কুকুরের ঋণ শোধ করার জন্য তিনি বংশধরের উদ্দেশ্য কুকুরকে আদর করা আর তার মাংস না খাওয়ার একটি আদেশ দিয়েছেন । পেইচিং মান জাতি বিষয়ক সমিতির একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ফুরহাছ্ বলেছেন ,

    নূরহাছ বলেছেন , কুকুর যেমন আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে , তেমনি তারাও আমাদের মান জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সহকারী । তখন থেকে আমি এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে , এক , কুকুরের মাংস খাবো না ; দুই, কুকুরের চামড়া দিয়ে তৈরী টুপি পরবো না আর তিন , যে সব জিনিস কুকুরের সংগে সম্পর্কিত , সে সব জিনিস আমি ব্যবহার করবো না । এখন এই কয়েকটি নিয়মবিধি আমাদের এক ধরণের আচার ব্যবহারে পরিণত হয়েছে ।

    নূরহাছের শিক্ষায় যেমন মান জাতির উপর প্রভাব ফেলেছে , তেমনি মান জাতির সংগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা শিব জাতিও তার এই প্রতিশ্রুতিও মেনে নেয় । তা ছাড়া উত্তর চীনে বসবাসকারী পশুচারণ জাতি , মঙ্গোলীয় জাতি , কাজাখ জাতি , এরওন্ক জাতি , ইয়্যুকুও জাতি প্রভৃতি জাতির জীবনযাপনেও কুকুরের সাহায্য ছিন্ন করা যায় না । যেমন ভেড়াপাল রক্ষণাবেক্ষণ , শিকার , রাতে পাহারা দেয়া প্রভৃতি দিক থেকে কুকুর মালিকের কার্যকর সহকারী বলে মনে করা হয় ।

    আগেই বলেছি এবছর চীনের চান্দ্র বর্ষের কুকুর বর্ষ বলে নির্ধারণ করা হয়েছে । তা ছাড়া চীনের তিব্বতী ক্যালেন্ডার অনুসারে তাকেও কুকুর বর্ষ বলে ধার্য করা হয়েছে ।

    তিব্বতী জাতিও কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করে । এর মূলে রয়েছে তাদের তিব্বতী বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাস । ছিংহাই প্রাদেশিক সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর তিব্বতী জাতির সংস্কৃতি বিষয়ক অধ্যাপক চাওপাতুং বলেছেন , বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা প্রাণী জবাই করার বিরোধিতা করেন । তারা হিংস্র প্রাণীর মাংস খান না ।

    চীনে হুই জাতি , উইগুর জাতি , সারা জাতি প্রভৃতি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ১০টি জাতিও কুকুরের মাংস খান না ।