উত্সর্গে যাবার সময় হয়ে গেলো । দুটো লাল রঙের জালা আনা হলো । তারপর ছেলে রূপি উখোং আর মেয়েরূপি পাচিয়ে বসলো ঐ দুই জালার মধ্যে । ঢাক ঢোল পিটিয়ে গ্রামবাসি তাদেরকে মন্দিরে নিয়ে গেলো তাদের প্রথা অনুযায়ী ।
ওদের দুজনকে মন্দিরের বেদির উপর বসানো হলো । বেদিতে লেখা , লিংকান দানব রাজের বেদি।
গ্রামবাসি বিদায় নিলো দুঃখিত মনে । অমনি শোঁ শোঁ শব্দ তুলে মন্দিরের মধ্যে দানব এলো । সে যখন তাদের ধরতে গেলো তখনি নিজেদের রূপ ফিরে এসে দানবের সঙ্গে লড়াই শুরু করলো উখোং আর পাচিয়ে । দানবের গায়ে আঘাত পড়লো কিন্তু সে পালিয়ে গেলো । অমনি উখোং ধাওয়া করলো তার পেছনে । ততোক্ষণে দানব নদির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে । পালিয়ে গিয়ে দানবটা আচার্যের মাংস খাওয়ার পরিকল্পনা করলো । সে জানতো আচার্যের মাংস খেলে পরমায়ু পাওয়া যায় ।
নদির ম্যান্ডরিন বুড়ি মাছ বললো যে সে ধরিয় দিতে পারবে আচার্যকে । বুড়ির বুদ্ধি শুনে দানব নদির পানি জমাট করে দিলো । আচার্য দেখলেন নদি জমে গেছে । লোকজন হেঁটে নদি পার হচ্ছে । আচার্য ও তাঁর শিষ্যরা জমাটবাঁধা নদির উপর দিয়ে হেঁটে যেতে চাইলেন । যেমন ভাবা তেমনি কাজ ।
সবাই যখন নদির মাঝামাঝি পৌঁছেছে তখন হঠাত্ বিকট শব্দে নদি দুভাগ হয়ে গেলো । সুয়ান চুয়ানরা ঘোড়াসহ পড়ে গেলেন নদির মধ্যে । উখোং এক লাফে উঠে গেলো আকাশে ।
দানব আচার্যকে ধরে ফেললো খুব সহজে । ছয় হাত লম্বা এক পাথরের বাক্সে তাকে বন্ধ করে রাখলো । পাচিয়ে আর ভিক্ষু শা সাঁতার দিয়ে নদির উপরে ভেসে উঠলো । উখোং-কে বললো , গুরুদেব ডুবে গেছেন নিশ্চয় । উখোং বুঝলো যে লিংকান দানবই ধরে বন্দি করেছে গুরুকে ।
শিষ্য তিনজন ঠিক করলো যে তারা নদির ভেতর নামবে । উখোং থাকবে পাচিয়ের পিঠে । সাবধানতার জন্য উখোং লাম ছিড়ে নকল উখোং বানালো । আর নিজে উকুন হয়ে পাচিয়ের কান কামড়ে বসে থাকলো শক্ত হয়ে ।
কয়েক শো ক্রোশ নদির ভেতর দিয়ে পথ চলার পর জল প্রাসাদ দেখতে পেলো তারা । উখোং এক চিংড়ি বুড়ির রূপ নিয়ে লাঠি ঠুক ঠুক করে জল প্রাসাদে ঢুকলো । তখন দানবটা বুড়ি ম্যান্ডারিনকে সুয়ান চুয়ানের মাংস খাবার কথা বলছিলো । ভোজটা হবে পরদিন । প্রাসাদে ঢুকে সে জানতে পারলো যে আচার্যকে পাথরের বাক্সে বন্ধ করে রাখা হয়েছে ।
পাথরের বাক্সের কাছে গিয়ে গুউরদেবের কান্না শুনতে পেলো উখোং । সে চুপি চুপি বললো , আর কাঁদবেন না । শিষ্যরা এসে গেছে । এবার আমরা দানবকে দমন করবোই । মুক্ত করবো আপনাকে । ধড়ে প্রাণ ফিরে এলো আচার্যের ।
উখোং প্রাসাদের বাইরে এলো । পাচিয়ে ও শা দানব কে চিত্কার করে যুদ্ধে ডাকলো । তারা বললো , ইতর দানব শিগগির গুরুদেবকে ছেড়েদে । নইলে দফা রফা করবো তোর ।
দানব দল বল নিয়ে প্রাসাদের বাইরে এলো । গুরু হলো জবর যুদ্ধ । সারাদিন ধরে নদির মধ্যে যুদ্ধ হলো । বেকায়দায় পড়ে গেলো দানব । আবশেষে সে আবার নদির মধ্যে পালিয়ে গেলো ।
আবার শিষ্যরা ধাওয়া করলো । কিন্তু কোথাও পেলোনা তাকে ।
উখোং বললো , নদি থেকে একবার তাকে উপরে তুলতে হবে । কারণ উপরেই আমার শক্তি বেশি ।
দানবকে বুড়ি মাছ বললো যে সুন উখোং হলো আচার্যের শিষ্য । ও সেই স্বর্গরাজ্য তোলপাড় করা উখোং । ওকে কাবু করা অসম্ভব । দানব বেশ ভয় পেলো । তাই প্রাসাদের সামনে উঁচু পাথরের প্রাচির তুলে দিলো সে ।
দানব আর বের হলো না । ভেতরেই বসে থাকলো নিরাপদে । তখন ভিক্ষু শা আর চু নদির উপরে উঠে উখোং-কে বললো সব ঘটনা ।
|