v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-27 14:37:32    
চীনের পরিসেবা শিল্পের টুকিটাকি

cri
    পরিসেবা শিল্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। কতকগুলো উন্নত দেশে পরিসেবাশিল্পের সৃষ্ট মূল্য দেশের মোট জি ডি পির ৬০ শতাংশেরও বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের পরিসেবা শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। রেস্তোরাঁ, খুচরো বিক্রয়, লোজিস্টিক্স, পর্যটন, ব্যাংকিং ইত্যাদি বিভিন্ন পরিসেবা শিল্পে উন্নয়নের এক প্রাণবন্ত পরিবেশ বিরাজ করছে।

    দক্ষিণচীনের শেনচেন শহরের মাদাম লি হুই'র একটি আনন্দের কথা এই যে, তিনি লক্ষ্য করেছেন, অনলাইনে অর্ডার দিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে পছন্দ-মতো খাবার আনা যায় এবং বাড়িতে বসে বসেই রেস্তোরাঁর পাঠানো খাবার খুব মজা করেই আস্বাদন করা যায় । তিনি বলেছেন, " ছুটির দিনে বাড়িতে বসে বসে অলস হয়ে যাই, রান্না করতে চাই না, রোস্তোরাঁয় গিয়ে খাবার জন্য বাড়ি থেকে বের হতেও চাই না। শুনেছি ইণ্টার্নেটের মাধ্যমেই খাবার অর্ডার দেওয়া যায়। তাই আমি সার্চ করেছি, কম্পিউটারে এক এক খাবারের নাম লিখলেই সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ খুঁজে বের করা যায় এবং সহজেই অর্ডার দিয়ে খাবার আনানো যায় । খুব সোজা।"

    তিনি বলেছেন, আগে তিনি শুধু জানতেন, টেলিফোনযোগে খাবার অর্ডার দেওয়া যায় , কিন্তু তাতে বাছাইয়ের সম্ভাবনা একটু কম । ইণ্টারনেটের মাধ্যমে নানা রেস্তোরাঁর মেন্যু জানা এবং দাম ও ডিস্কাউণ্টের নিয়মবিধি জানা যাবে । সহজে বিচার-বিশ্লেষণের পর বাড়িতে বসে বসেই সস্তা অথচ পছন্দমতো সুস্বাদু খাবার আনানো যায়।

    শুধু রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনার সুবিধাই আছে , তা নয়, বরং পর্যটনের জন্যে বিমান বা ট্রেনের টিকিটও অনায়াসে বুকিং দেয়া যায় অনলাইনে । তা'ছাড়া, জিনিস কেনা, গৃহশিক্ষক বা আয়া নিয়োগ করা, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা ইত্যাদি পরিসেবাও সহজে পাওয়া যায়।

    চীনাদের আয় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সব পরিসেবার বিষয়বস্তুও আরও বৈচিত্রময় হয়ে উঠেছে। তাতে পরিসেবাশিল্প-সৃষ্ট মূল্য বেড়ে যায় এবং জনগণের সুবিধাও বেড়ে যায়।

    চেইন স্টোর, লজিস্টিক্স ব্যবস্থার মাধ্যমে মাল পাঠানো, ই-কমার্স ইত্যাদি পরিসেবার দ্রুত উন্নয়ন চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ফলপ্রসূতা দারুণভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের পরিসেবার উন্নতি ত্বরান্বিত করেছে। সিয়াওথিয়েনও গোষ্ঠি হলো ওয়াশিং মেশিন উত্পাদনের একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এই গোষ্ঠি বছরে ৪০ লক্ষ ওয়াশিং মেশিন বিক্রি করে। আগে গোষ্ঠিটি নিজের পরিবহনদলের সাহায্যে বিভিন্ন স্থানে মেশিন পৌছিয়ে দেয় । তাতে পরিবহনের খরচ খুব বেশি, ফলে মুনাফা কমে যায়।

    ২০০১ সালে এই গোষ্ঠি অন্য একটি বৈদ্যুতিক সামগ্রি কোম্পানি এবং একটি লজিস্টিক্স কোম্পানির সঙ্গে একত্রিত হয়ে চীনের বৈদ্যুতিক সামগ্রির প্রথম লোজিস্টিক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। ফলে পরিবহনের খরচ অনেক কমে গেছে এবং মুনাফার অবকাশও বেড়ে গেছে।

    সিয়াওথিয়েনও গোষ্ঠির ভাইস প্রেসিডেণ্ট স্যু ইউয়ান জানিয়েছেন , এখন তাঁদের লোজিস্টিক্স খরচের শতকরা ৩৭ ভাগ সাশ্রয় হয়েছে । বছরে কয়েক কোটি ইউয়ান ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে, অর্থাত্ একই পরিমাণের অতিরিক্ত আয় অর্জিত হয়েছে। তিনি লোজিস্টিক্স কোম্পানির শেয়ার-ধারী বলে প্রত্যেক বছর শেয়ার অনুসারে তাঁর বেশ কিছু আয় হয়। তিনি বলেছেন, "শেয়ারধারী হিসেবে আমি প্রত্যেক বছর শেয়ারের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ পাই। আমরা খরচ কমিয়েছি, নিজের প্রাপ্য মুনাফাও পেয়েছি। এই যৌথ ব্যবস্থা আমাদের আগেকার ' একলা চলার' লোজিস্টিক্স কোম্পানির চেয়ে অনেক ভাল।

    গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চীনের লোজিস্টিক্স শিল্পের সৃষ্ট বর্ধিত মূল্য ১৪ শতাংশ বেড়ে ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে । এটা চীনের গোটা পরিসেবা শিল্পের সৃষ্ট মোট বর্ধিত মূল্যের ২১ শতাংশ।

    নতুন জরীপ অনুযায়ী ২০০৪ সালে চীনের জি ডি পি ছিল প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার ৪১ শতাংশই পরিসেবা শিল্পের অবদান।

    চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক লি তেশুই বলেছেন, "আগে বিদেশীরা মনে করতেন, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রধানত শিল্পের ওপর নির্ভর করে , এমন কি বলিষ্ঠ রপ্তানীর প্রবনতার ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু এখন দেখতে গেলে , অবস্থা মোটেই -এরকম নয় । বরং আমাদের জরীপের ফলাফল থেকে দেখা গেছে, পরিসেবাশিল্প চীনের অর্থনীতির বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।"

    অবশ্য পরিসেবা শিল্পের উন্নয়নে বেশ কিছু সমস্যাও থেকে গেছে। যেমন , পরিসেবার গুণগত মান অনেক ক্ষেত্রে এখনও সন্তোষজনক নয়।

    বীমা শিল্পের কথাই ধরা যাক , ২০০৫ সালে চীনের বীমা শিল্পের আয় প্রায় ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটা বিশ্বে একাদশ স্থানে উন্নীত হয়েছে । কিন্তু বীমা শিল্পের ব্যবস্থাপনার মধ্যে বিশ্বস্ততার সমস্যা হলো এই শিল্প উন্নয়নের পথে এক প্রতিবন্ধকতা। চীনের বীমা তত্ত্বাবধান কমিটির চেয়ারম্যান উ তিংফু বলেছেন, " বর্তমানে কোনো কোনো বীমা কোম্পানি স্বল্পমেয়াদী মুনাফা অর্জনের জন্য বাজারে বিশৃংখলভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালাচ্ছে, ফলে গোটা বীমাশিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাতে গোটা বীমাশিল্পের অভিন্ন উন্নয়নের পরিবেশ আর গোটা শিল্পের সামগ্রিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। এটা কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ উন্নয়নের প্রতিকূল।

    এই সব সমস্যা প্রসঙ্গে পরিসেবা শিল্পের ব্যক্তিরা উল্লেখ করেছেন, চীনের পরিসেবা শিল্পের মান উন্নততর করার জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সুশৃংখলভাবে চলতে হবে, সরকারকেও সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি প্রণয়ন করে বাজার সুশৃংখল করে তুলতে হবে। উন্নত দেশের তুলনায় দেশের গোটা অর্থনীতির মধ্যে চীনের পরিসেবা শিল্পের অনুপাত এখনও কিছুটা কম। রেস্তোরাঁ, খুচরো বিক্রয় এবং পর্যটন ইত্যাদি ঐতিহ্যিক পরিসেবাশিল্প ছাড়াও , ব্যাংকিং, তথ্যশিল্প আর লোজিস্টিক্স শিল্প ইত্যাদি আধুনিক পরিসেবাশিল্পের উন্নয়ন দ্রুততর করা একান্ত প্রয়োজন।